'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' যে শুক্রবার রিলিজ হবে, সেদিন অন্য আরেকটি মুভিও রিলিজ পাওয়ার কথা ছিল। মুভিটি হলো- বড়ে মিয়া ছোটে মিয়া।

সিনেমা রিলিজের আগে মুভির প্রিমিয়ার নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত তখন আমার মা আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকে একটি ফোনকল পেয়েছিলেন। কলটি ছিল আবু সালেমের। সে মাকে বলেছিল, 'তোমার ছেলে এখন লাল রঙের টি-শার্ট পড়ে আছে। যদি ও এই সপ্তাহে 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' মুভিটি রিলিজ করে, তাহলে আমি ওকে গুলি করে মেরে ফেলবো'!

আমার মা স্বভাবতই প্রচন্ড রকম ভয় পেয়ে গেলেন। আমাকে দেখামাত্রই বললেন, এক্ষুণি পুলিশকে ফোন করো। তাকে শান্ত করে পুরো পরিস্থিতি বুঝতে সময় লাগলো। সেদিন রাতে আমার বাড়িতে শাহরুখ খান, আদিত্য চোপড়া, যশ চোপড়া ও মুম্বাই পুলিশ মিলে আলোচনায় বসল। পুলিশ জানালো, এই হুমকিতে আপনার ভয় পেলে চলবে না। আমরা আপনাকে যথাযথ নিরাপত্তা দেব। তবে ফিল্ম আপনার যথাসময়ে রিলিজ করতে হবে। 

জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি   

এর কিছুদিন পর কুছ কুছ হোতা হ্যায় মুভির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হলো। আমার বাবার অনুরোধে পুরো ইন্ড্রাস্ট্রি সেখানে হাজির হয়েছিল। তবে আমার ইচ্ছে ছিল অন্য। আমি চাচ্ছিলাম, যখন শাম্মী কাপুর তার মার্সিডিজ গাড়ি থেকে নেমে আমার মুভির প্রিমিয়ারে ঢুকবে, সেই দৃশ্যটা নিজ চোখে দেখব। 

তখন অবশ্য সেই ইচ্ছা পূরণ করা অসম্ভবই বলা যায়। কারণ, আমি তখন ছোট্ট একটি রুমে বন্দি। রুমের বাইরে দুইজন গার্ড কড়া প্রহরায় আছে। তবে শাহরুখ যখন এই ব্যাপারে জানতে পারলো তখন আমাকে এসে বলল, কী সব ফালতু কথা বলছো। তুমি আমার সাথে আসো। দেখি কে তোমাকে গুলি করে! 

'তুমি আমার সাথে এসো, দেখি কে তোমাকে গুলি করে'

আমার মা-বাবা ও গার্ডদের নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করে শাহরুখ আমাকে প্রিমিয়ার বিল্ডিংয়ে নিয়ে এলো। শাহরুখ ছিল আমার সামনে, আমি তার পেছনে। সে বলেছিল, 'আমি হলাম পাঠান। তোমাকে গুলি করার আগে আমাকে গুলি করতে হবে। ভয় পেওনা।'

শাহরুখ অসম্ভবকে সম্ভব করলো। আমার আশা পূরণ হলো। যেভাবে আমি কল্পনা করেছিলাম, ঠিক সেভাবেই শাম্মী কাপুর তাঁর মার্সিডিজ গাড়ি থেকে নামলেন। দৃশ্যটি দেখে আমার চোখে পানি এসে গেলো। আমি আবার ফিরে গেলাম সেই ছোট্ট রুমে। পুরো ইন্ড্রাস্ট্রি যখন প্রিমিয়ার শোতে আমার প্রথম সিনেমা দেখছিলো, আমি তখন ছোট্ট একটি রুমে বন্দি। প্রিমিয়ার শেষে একজন এসে আমাকে বলল, 'আপনার সিনেমা দেখে পুরো ইন্ড্রাস্ট্রি স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়েছে।' অথচ এমন সুন্দর মুহূর্ত দেখার জন্য আমি ছিলাম না। 

এতসব হুমকি সত্ত্বেও সিনেমাটি নির্ধারিত দিনেই মুক্তি পেল। পুলিশের নির্দেশে আমি ও আমার বাবা-মা তখন দেশের বাইরে চলে এসেছি। লন্ডনের একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে তিনজন থাকছি। ভারতে সিনেমাটি কেমন চলছে, দর্শক আদৌ সিনেমাটি গ্রহন করছে কিনা সে সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। 

সোমবার আদিত্য চোপড়া আমাকে ফোন করল। কল রিসিভ করতেই সে বলল, 'এই পৃথিবীতে কোন জিনিসটা তুমি চাও?' আমি প্রশ্নের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, 'সিনেমাটি বক্স অফিসে কেমন চলছে?' আদিত্য বলল, :সিনেমাটি হিট হয়নি, সুপারহিটও হয়নি। আমি অবাক হয়ে বললাম, তাহলে কী হলো? সে হেসে বলল, তোমার সিনেমা ব্লকবাস্টার।' 

ফোন রেখে দিয়ে আমি বাবা-মাকে খবরটি জানালাম। বাবা ভারতে ডিস্ট্রিবিউটরদের ফোন করে জানতে পারলো, আদিত্যের দেয়া খবরটি সত্য। আমার বাবা যশ জোহার, যার পুরো ২০ বছরের ক্যারিয়ারে প্রোডিউস করা মুভির মধ্যে 'দোস্তানা' ছাড়া আর কোন মুভিই হিট হয়নি, তার ছেলের ১ম সিনেমা ব্লকবাস্টার হওয়ার খবর জানতে পেরে কেমন বোধ করেছিল কে জানে! 

এর কয়েক সপ্তাহ পর যখন দেশে ফিরলাম, তখন কুছ কুছ হোতা হ্যায় এর আসল প্রতিক্রিয়া টের পেলাম। মেয়েরা কাজলের মতো চুলের স্টাইল করছে, ছেলেরা শাহরুখের সেই পোলো টি-শার্ট কিনছে। সাউথ বম্বের যে শহরে আমার বসবাস, সেই শহরটি যেন ছেয়ে গেল কুছ কুছ হোতা হ্যায় এর প্রভাবে। 

[করণ জোহরের আত্মজীবনী 'অ্যান আনসুইটেবল বয়' থেকে অনুবাদিত]


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা