অস্ত্রোপচারের বেডে শুয়ে থাকা অচেতন মায়ের পাশ থেকে কোনভাবেই সরানো যাচ্ছিলো না বাচ্চা কোয়ালাটিকে। কেউ সেটিকে সরিয়ে নিতে চাইলেই চিৎকার করে উঠছিল সেটি।
পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক নাকি মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটা। মানুষ বলুন কিংবা অন্য কোন প্রাণী- সম্পর্কের গভীরতার হাজার হাজার নিদর্শনের দেখা মেলে হররোজ। সেরকমই একটা ঘটনার দেখা এবার মিললো অস্ট্রেলিয়ায়। মা কোয়ালার প্রতি বাচ্চা কোয়ালার অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখে বাষ্পরুদ্ধ হয়েছে ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের চোখ, ঘটনাটা সাড়া ফেলেছে নেটিজেনদের মধ্যেও।
কোয়ালা প্রাণীটা আসলে কীরকম দেখতে, সেটা যারা জানেন না, তাদের জন্যে বলে রাখি, ক্যাঙ্গারুর মতো এক ধরণের স্তন্যপায়ী প্রাণী এটি। তবে আকারে ক্যাঙ্গারুর চেয়ে ছোট। কোয়ালা দেখতে ভাল্লুক বা পাণ্ডার মতো। এজন্যে অনেকে এটিকে কোয়ালা বিয়ার নামেও ডাকে। মূলত অস্ট্রেলিয়াতেই এদের দেখতে পাওয়া যায়।
মূল ঘটনায় আসা যাক। সপ্তাহ দুয়েক আগে অভয়ারণ্যের মাঝখানে এক জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। হুট করেই একজোড়া কোয়ালা চলে এলো গাড়ির সামনে, হার্ডব্রেক কষেও শেষরক্ষা হলো না, গাড়ি গিয়ে বেশ জোরেসোরেই ধাক্কা দিলো মা কোয়ালা এবং তার বাচ্চাকে। ভদ্রলোক দুটো প্রাণীকেই গাড়িতে তুলে নিয়ে গেলেন কাছের ভেটেরিনারি হাসপাতালে।
বাচ্চা কোয়ালাটার গায়ে তেমন আঘাত লাগেনি, তার মা নিজে গাড়ির সামনে চলে এসে বাচ্চাটাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছিল। আর সেকারনে গাড়ির ধাক্কার প্রায় পুরোটাই সইতে হয়েছিল তাকে। পশু চিকিৎসকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন মা কোয়ালাকে। দুই দফা ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে প্রাণীটার, প্রচুর রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই কমে গিয়েছিল সেটার।
অপারেশনের সময়ই অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটেছিল। অস্ত্রোপচারের বেডে শুয়ে থাকা অচেতন মায়ের পাশ থেকে কোনভাবেই সরানো যাচ্ছিলো না বাচ্চা কোয়ালাটিকে। কেউ সেটিকে সরিয়ে নিতে চাইলেই চিৎকার করে উঠছিল সেটি। মাকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল ছোট্ট এই প্রাণীটা, পৃথিবীতে তার সবচেয়ে আপনজনকে আগলে ধরে রাখার তীব্রতাটা ঝরে পড়ছিল তার মধ্যে।
সেটা নজর এরায়নি কোয়ালার অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসকদের, তারাও আপ্লুত হয়েছেন এই ঘটনায়। বাচ্চাটাকে মায়ের সঙ্গে রেখেই তারা অপারেশনটা শেষ করেছেন। তাদের তোলা ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে, বোধশক্তিহীন একটা বাচ্চা কোয়ালার মায়ের প্রতি ভালোবাসার নজির দেখে চোখে জল এসেছে অনেকেরই। অস্ট্রেলিয়ার মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও এই খবরটা প্রকাশিত হয়েছে গুরুত্ব সহকারেই।
দেশে এখন বৃদ্ধাশ্রমের ছড়াছড়ি, বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে চায় না অনেক সন্তান। যে বাবা-মায়েরা নিজেদের সুখ বিসরর্জন দিয়ে সন্তানকে বড় করেছে, বৃদ্ধ হলে তারাই সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে যায়। সেসব মনুষ্য সন্তানগুলোকে এই বাচ্চা কোয়ালাটার কাছে শেখার অনেক কিছুই আছে, যদি তারা শিখতে চায় আরকি!