বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই কফির দাম ৩৫ ডলার থেকে ১০০ ডলার! এর উৎপাদন প্রক্রিয়া এত অদ্ভুত যে সেটা জানার পর আর অনেকেরই এটা খাওয়ার সাধ হবে না!

কফি খেতে আমরা অনেকেই ভালবাসি। শরীরের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে চায়ের সাথে সাথে কফির জনপ্রিয়তাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণে দামও বাড়ছে। তবে দাম যতই বাড়ুক না কেন, সাধারণ কোন মানুষের পক্ষে এটা হজম করা কঠিন যে এক কাপ কফির দাম ৩৫ ডলার থেকে ১০০ ডলার! কি, বিশ্বাস হচ্ছে না?

হ্যাঁ, আমি সত্যিই বলছি। বলছি, বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফির কথা। বিশ্বের সবচেয়ে দামী কফির নাম 'কপি লুয়াক' যেটা খেতে হলে প্রতি কাপের জন্য আপনাকে গুনতে হবে কমপক্ষে ৩৫ ডলার। তবে কেবল শখ থাকলেই কেউ এ কফি খেতে পারবে না। কেননা এর দামই কেবল আকাশচুম্বী না, এটি খুব দুষ্প্রাপ্যও।

অবশ্য, যাদের এ কফি খাওয়ার শখ আছে কিন্তু সাধ্য নেই, তাদের অনেকেরই মন ভালো হয়ে যাবে এর উৎপাদন প্রক্রিয়ার কথা শুনলে। কেননা, এর উৎপাদন প্রক্রিয়া এত অদ্ভুত যে সেটা জানার পর আর অনেকেরই এটা খাওয়ার সাধ হবে না। বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি ‘কপি লুয়াক’ তৈরি হয় গন্ধগোকুল নামক বিড়াল-জাতীয় একপ্রকার প্রাণীর বিষ্ঠা থেকে। বিষয়টা অদ্ভুত হলেও সত্যি। 

বানরের মত লম্বা লেজের গন্ধগোকুল প্রাণীটি দেখা যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকাতে। ইন্দোনেশিয়ার অনেক খামারেও এখন এ প্রাণীটি পালন করা হয় কফি উৎপাদনের জন্য। এরা সাধারণত পোকামাকড় ও ছোট প্রাণী খেতে পছন্দ করে। তবে এরা মজাদার কফি বীজ, আম বা এ জাতীয় ফলমূলও খেয়ে থাকে। 

গন্ধগোকুল নামক বিড়াল-জাতীয় একপ্রকার প্রাণীর বিষ্ঠা থেকে তৈরী হয় 'কপি লুয়াক'

গন্ধগোকুলকে কফির বীজগুলো খেতে দেওয়া হয়। এ প্রাণীগুলো ভাল কফির বীজগুলো চিনতে পারে এবং বেছে বেছে সবচেয়ে ভালো বীজগুলো খায়। তবে তাদের পেটে কফির বীজগুলো সম্পূর্ণ হজম হয় না। কিছুটা হজম হয় এবং কিছুটা আস্তই রয়ে যায়। এরপর যখন বীজগুলো বিষ্ঠা আকারে বের হয়ে আসে, তখন সেগুলো সংগ্রহ করে নেন খামারিরা। সেগুলো পরিষ্কার করে বীজগুলো থেকে তৈরি করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি! 

কফির বীজগুলো গন্ধগোকুলের পেটে গিয়ে তাদের এনজাইমের (প্রাণীর দেহকোষে উৎপন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ) সঙ্গে মিশে যায়। এতে কফির বীজে যোগ হয় ক্যারামেলের ফ্লেভার বা এক প্রকারের সুগন্ধ। আর সেটাই কপি লুয়াকের সুগন্ধ ও দাম বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ।

কপি লুয়াক সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে। সুমাত্রা ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার আরো কিছু অঞ্চলে এবং ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে অল্প পরিমাণ উৎপাদিত হয় এ কফি। কপি লুয়াক সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

উৎপাদকদের মতে, সাধারণত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কিছু অভিজাত হোটেলের পক্ষ থেকে চড়া দাম দিয়ে কিনে নেয়া হয় কপি লুয়াক। এসব হোটেলে বিলাসী অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য পরিবেশন করা হয় এই অতি মূল্যবান, অতি উপাদেয় ও সুঘ্রাণযুক্ত কফি। 

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অবলম্বনে

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা