কতোটা রাগ, ক্রোধ, ঘৃণা জমা হলে মানুষ এতোটা প্রতিবাদী হয়?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বেড়িবাঁধ ভেঙে সব তলিয়ে গেল। অথচ মন্ত্রী বললেন, কোনো ক্ষতি হয়নি। তখন বেড়িবাঁধ ঠিক করার দায়িত্ব নিলো স্থানীয় মানুষ। প্রতিবাদের এই অদ্ভুত ভাষা ব্যতিক্রম! এরপরও কি রাস্ট্রের লজ্জা হবে?
এই ছবিটা কয়রা উপজেলার! বেড়িবাঁধ মেরামতের এক ফাঁকে তারা জোয়ারের পানিতে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়ছে! যিনি ইমামতি করছেন, তাকে আমি চিনি না। শুনলাম, তিনি নাকি কয়রা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। তবে প্রথম সারিতে মাঝখানে হাফ শার্ট আর সবুজ টুপি পরা মানুষটাকে চিনি। উনি আগে কয়রার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন, এখন কয়রা উপজেলার চেয়ারম্যান। সাদাসিধে সজ্জন সৎ মানুষ। তার সাথে অনেকদিন ধরে কাজ করি।
এভাবে ঈদের নামাজ পড়া যায় কিনা, কিংবা নামাজ পরার জন্য একটুও শুকনো জায়গা ছিলো না? এরকম নানা কথা হয়তো বলা যায়! কিন্তু সাইক্লোন আমফানে যখন উপজেলার বহু জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পড়লো, উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশি এবং কয়রা সদর ইউনিয়নসহ তিনটা ইউনিয়ন যখন পানিতে ভেসে গেল, জোয়ারের পানির সাথে যখন ওই ইউনিয়নের মানুষের জীবন একাকার হয়ে গেল, ক্ষেত, চিংড়ি ঘের, সব্জি বাগান যখন পারমানেন্টলি পানির নিচে তলিয়ে গেল...
তখন আমাদের দুই জন মন্ত্রী হেলিকপ্টারে চেপে ওই এলাকা ঘুরে এসে বললেন, একটা বাড়িঘরও ভাঙ্গেনি। কোন ফসলের ক্ষতি হয়নি, তখন বেড়িবাঁধ ঠিক করার দায়িত্ব নিলো স্থানীয় মানুষ; যদিও ওটা তাদের দায়িত্ব না, এই দায়িত্ব রাস্ট্রের৷ তখন প্রতিবাদের এই ভাষা আমাকে অবাক করলো! এই মানুষগুলোর লড়াই এমনিতেই অনুকরণীয়; কিন্তু প্রতিবাদের এই অদ্ভুত ভাষা ব্যতিক্রম! কতোটা রাগ, ক্রোধ, ঘৃণা জমা হলে মানুষ এতোটা প্রতিবাদী হয়?
যারা এডভোকেসি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, যারা এসি রুমে বসে এডভোকেসির ডিজাইন বানাই কিংবা বড় বড় লেকচার দিই টিভির সামনে, এই ছবিটা তাদের জন্য চপেটাঘাত। এই সিরিজের কয়েকটা ছবি আজ টক অন দ্য নেশন! এই সাধারণ শিক্ষা-দীক্ষাহীন মানুষগুলো আমাদেরকে খুব লজ্জায় ফেলে দিল।
এরপরও কি রাস্ট্রের লজ্জা হবে? যারা তথাকথিত এডভোকেসি করে করে চিল্লাই, তাদের কি কিছু হলেও শিক্ষা হবে? তারা কি শিখবে যে, এডভোকেসি আসলে কাকে বলে?
লেখক: রাজু নজরুল, পরিচালক, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ (প্রোগ্রাম-পলিসি-এডভোকেসি)