ফরেস্ট গাম্প ও লাল সিং চাড্ডা: কিছু আশা, কিছু আশঙ্কা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ফরেস্ট গাম্প থেকে হিন্দি সিনেমা বানাচ্ছেন আমির- এই খবরটা শোনার পরে আমিও ভীষণ বিরক্ত হয়েছিলাম। সবকিছুর রিমেক কেন করতে হবে, এই প্রশ্নটা জেগেছিল মনের ভেতরে। তবে স্টিল পিকচারগুলো দেখার পর মনে হচ্ছে, সিনেমাটা আবর্জনা না-ও হতে পারে।
আমির খান যখন হলিউডি কাল্ট ক্লাসিক ফরেস্ট গাম্পের হিন্দি রিমেক বানানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন সিনেমাপ্রেমীরা একরকম আঁতকেই উঠেছিলেন। সিনেমার পোকা যারা, তাদের মনে ফরেস্ট গাম্প একটা স্পেশাল জায়গা জুড়ে আছে, সর্বকালের সেরা সিনেমার তালিকা করা হলে ফরেস্ট গাম্পের জায়গা একদম ওপরের দিকেই হবে। আমির খান যতোই পারফেকশনিস্ট হোন না কেন, এরকম সিনেমার রিমেক করতে যাওয়া মানেই নস্টালজিয়ার বুকে আঘাত করা। তার ওপর সিনেমার নাম যখন 'লাল সিং চাড্ডা' ঠিক করা হলো, তখন হাসির হুল্লোড় উঠেছে আরও একবার।
তবে আমির খানও হাল ছাড়ার মানুষ নন, তিনি নিজের সেরাটাই ঢেলে দেয়ার চেষ্টা করেন প্রতিটা জায়গায়। থাগস অফ হিন্দোস্তানের কারণে বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছেন, সেখান থেকে ফিরে আসার জন্যে ফরেস্ট গাম্পকে বেছে নেয়ার যে ঝুঁকিটা তিনি নিয়েছেন, সেখানে মানের সঙ্গে বিন্দুমাত্র আপোষ করতে চাননি তিনি।
নিজেই সিনেমার প্রযোজক হওয়াতে কাজটা আরও সহজ হয়েছে আমিরের জন্যে। সিনেমার মেকিং, অভিনয় বা গল্প কতটা ভালো হবে সেটা পরের বিষয়, কিন্ত লাল সিং চাড্ডার ফাঁস হওয়া কয়েকটা স্টিল ইমেজ দেখে এটা অন্তত বোঝা যাচ্ছে যে, সিনেমাটাকে ফরেস্ট গাম্পের কাছাকাছি নিয়ে চেষ্টার ত্রুটি করছেন না কলাকুশলীরা।
ফরেস্ট গাম্পে যেমন মূল চরিত্রের জীবনের অনেকগুলো ধাপ দেখানো হয়েছিল, অনেকগুলো বয়সকে পর্দায় তুলে ধরা হয়েছিল, একই ব্যাপারটা দেখা যাবে লাল সিং চাড্ডাতেও। এখানেও আমির খানের তরুণ বয়স থেকে প্রৌঢ়ত্বকে পোট্রেট করা হয়েছে, আর সেই লুকগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপনের সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন সবাই। ক্যারিয়ারে এই প্রথম পাঞ্জাবী শিখের চরিত্রে অভিনয় করছেন আমির। বয়স্ক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তো নিজের ওজন বিশ কেজি বাড়িয়েছেনও! যদিও বডি ট্রান্সফর্মেশনটা আমিরের কাছে নতুন কিছু নয়, একই কাজ তিনি দাঙ্গালেও করেছিলেন।
লোকেশনের ব্যাপারেও কোন ছাড় দেননি আমির। ঘটনাবহুল অনেকগুলো প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরার জন্যে বাস্তব লোকেশনেই শুটিং হয়েছে 'লাল সিং চাড্ডা' সিনেমার, সেট বানিয়ে সেখানে শুটিং করতে চাননি আমির। এজন্যেই সিনেমার টিম নিয়ে তিনি ছুটে গেছেন ব্যাঙ্গালোর, মাইশোর। জায়গায় জায়গায় স্কাউট পাঠিয়ে ভারতেই কমপক্ষে একশোটা লোকেশন খুঁজে বের করেছেন আমির, শুটিং হয়েছে সেসব জায়গায়। কলকাতা কিংবা পাঞ্জাব থেকে মুম্বাই। তাতে সিন্রমার বাজেট বেড়েছে, খরচের অং ক আকাশ ছুঁয়েছে- কিন্ত আপোষ করেননি আমির।
আমিরের বিপরীতে সিনেমায় অভিনয় করেছেন কারিনা কাপুর। থ্রি ইডিয়টসের পর আরও একবার পর্দায় জুটি বাঁধবেন তারা। থ্রি ইডিয়টসের আরও একজন আছেন এই সিনেমার একটা বিশেষ চরিত্রে, তার নাম মোনা সিং। থ্রি ইডিয়টসে কারিনার বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মোনা। আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত অভিনেতা বিজয় সেথুপতি।
তবে লাল সিং চাড্ডার সবচেয়ে বড় দুই চমকের নাম শাহরুখ খান এবং সালমান খান। সবকিছু ঠিক থাকলে এই প্রথম একই সিনেমায় দেখা যাবে তিন খানকে, এই খবরটা বলিউডপ্রেমীদের ঘুম হারাম করার জন্যে যথেষ্ট! শাহরুখ ইতিধ্যেই এক্সটেন্ডেড ক্যামিও ক্যারেক্টারে অভিনয় করতে রাজী হয়েছেন, সালমান পাকা কথা দেননি- তিনি রাজী হলেই অন্যরকম এক নজির দেখা যাবে বলিউডে!
তবে শাহরুখ-সালমান এই সিনেমায় অভিনয় করলেও, একজন কিন্ত লাল সিং চাড্ডার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। 'হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা' খ্যাত পশ্চিমবঙ্গের নায়ক অঙ্কুশ হাজরা দাবী করেছিলেন, তাকে নাকি লাল সিং চাড্ডা সিনেমায় একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অফার করা হয়েছিল। কিন্ত রিমেক ফিল্ম হওয়ায় সেটা তিনি 'না' করে দিয়েছেন! এক সাক্ষাৎকারে এই কথাটা বলে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছিলেন অঙ্কুশ।
ফরেস্ট গাম্প থেকে হিন্দি সিনেমা বানাচ্ছেন আমির- এই খবরটা শোনার পরে আমিও ভীষণ বিরক্ত হয়েছিলাম। সবকিছুর রিমেক কেন করতে হবে, এই প্রশ্নটা জেগেছিল মনের ভেতরে। তবে স্টিল পিকচারগুলো দেখার পর মনে হচ্ছে, সিনেমাটা আবর্জনা না-ও হতে পারে। এ বছরের বড়দিনে মুক্তি পাবে লাল সিং চাড্ডা, ভালো কিছুর চেষ্টাটা সিনেমার টিমের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সেই চেষ্টাটা পর্দায় কতটুকু অনূদীত হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে...