বঙ্গবন্ধু কোন ফাজলামির বিষয়বস্তু নন। বঙ্গবন্ধু নামটা নিয়ে যেভাবে খুশি সেভাবে মজা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুকে তামাশার পাত্র বানানো মানে পুরো দেশটাকেই অপমান করা।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে তেঁজগাওয়ের পুরাতন বিমান বন্দরে লেজার লাইট শো আয়োজন করা হয়েছিল। সেই লেজার শো-এর ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে। ভিডিওটা দেখে লজ্জা হলো ভীষণ, মেজাজটা চড়লো সপ্তমে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মতো একটা দিনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারী আয়োজনে ফাজলামি করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানানোর নাম করে মানুষটাকে হাসির উপলক্ষ্যে পরিণত করার দরকারটাই বা কেন পড়লো, সেটাও মাথায় ঢুকছে না।

প্লেনের মতো একটা বস্তুর দরজায় বঙ্গবন্ধুর গ্র‍্যাফিকাল প্রতিমূর্তির দেখা মিললো। কয়েক সেকেন্ড পরেই সেটা গায়েব হয়ে গিয়ে পরিণত হলো সবুজ এক টুকরো আলোর খন্ডে। লেজার থেকে বেরিয়ে আসা গোলাকার সেই আলোকপিণ্ডটা এগিয়ে আসতে শুরু করলো মাটিতে বিছিয়ে রাখা গালিচা ধরে। ফুলের পাপড়ি উড়ে আসতে লাগলো সেই আলোর ওপরে। দেখতে দেখতে শুধু মনে হচ্ছিলো- মানে কী এসবের? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই অহেতুক ফাজলামীটার কি খুব দরকার ছিল?

প্রতীকিভাবে হয়তো আলোটাকে বঙ্গবন্ধু হিসেবে উপস্থাপন করার একটা চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্ত সেই চেষ্টা আর তার ফলাফল- দুটো এত বেশি জঘন্য ছিলো, তাতে বঙ্গবন্ধুকে মনে পড়া তো দূরের কথা, বরং মনে হলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বুঝি লাইভ কমেডি কোন শো আয়োজিত হয়েছে! স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আটচল্লিশ বছর পূর্তিতে এত বিচ্ছিরভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ না করলেও বোধহয় হতো! 

লেজার শোয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনটাকে ফুটিয়ে তোলার আইডিয়াটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে আমার জানা নেই। তবে যারা এটার বাস্তবায়ন করেছেন, তারা যে চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, সেটা নিয়েও কোন সন্দেহ নেই। বঙ্গবন্ধু নামের ওজনটা যারা বোঝে না, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বালত্বের মর্ম যাদের জানা নেই, তাদের যদি দায়িত্ব দেয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে জাতির সামনে উপস্থাপন করার- তাহলে এমনটাই তো হবার কথা। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে মন্ত্রীসভায় এদের কাউকে দেখা যাবে। 

লেজার শো

সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, এই বিচ্ছিরি প্রদর্শনীটা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার চোখের সামনে, তাদের একজন আবার দেশের প্রধানমন্ত্রীও। এই আয়োজনে কারা ছিলেন? এমন গুরুত্বপূর্ণ  একটা আয়োজনে কীভাবে এত জঘন্য একটা লেজার শো জায়গা করে নিলো? গতকালের আগেও নিশ্চয়ই টেস্ট পারফরম্যান্স করা হয়েছে এই শো'টার, সেখানে কি কারো মনে হয়নি যে, পুরো ব্যাপারটা জগাখিচুড়ির মতো পাকিয়ে যাচ্ছে? আয়োজনের সঙ্গে জড়িতদের রুচিবোধের প্রশংসা করতে হয় বৈকি!

ফেসবুকে ভিডিও দেখে মেজাজ খারাপ নিয়েই জনকণ্ঠে এই লেজার শো নিয়ে বিস্তারিত একটা লেখা পড়লাম। লেখকের মুগ্ধতার ছড়াছড়ি দেখে আবেগে দ্রবীভূত হয়ে গেলাম। কেউ কেউ তো আবর্জনার মাঝখানেও অনেকে নিজের প্রয়োজনীয় খোরাকটা খুঁজে পায়, সেটা যার যার রুচির ব্যাপার। কিন্ত এই জঘন্য লেজার শো-য়ের প্রশংসা করার মতো মানুষও যে ধরণীর বুকে আছে, সেটা এসব লেখা না পড়লে জানা হতো না। কেউ কেউ লিখেছে, প্রধানমন্ত্রীর চোখ নাকি অশ্রুসিক্ত হয়েছে এই লেজার শো দেখে! তেলের ড্রাম উপুড় করে দেয়া এমন অপসাংবাদিকতা করার রুচি একজন মানুষের কী করে হয়, সেটা মাথায় ঢুকলো না।

বঙ্গবন্ধু কোন ফাজলামির বিষয়বস্তু নন। বঙ্গবন্ধু নামটা নিয়ে যেভাবে খুশি সেভাবে মজা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুকে তামাশার পাত্র বানানো মানে পুরো দেশটাকেই অপমান করা। কুরুচিপূর্ণ এই আয়োজনের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো সেটা জানে না, কারণ বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করার কোন ব্যাপার তাদের মধ্যে নেই। বঙ্গবন্ধুর নামটা তাদের কাছে টাকা কামানোর মেশিন, ব্যবসার হাতিয়ার। সেখানে শ্রদ্ধা বা সম্মানের ব্যাপারগুলো বাস্পীভূত হয়ে হারিয়ে গেছে অনেক আগে... 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা