যে ঠোঁটে প্রিয় মানুষটির স্পর্শ পেতে ভীরু পায়ের অপেক্ষা ছিলো, সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলো বলে সেই ঠোঁটকে ব্যস্ত রাখি নোংরা কথায়...

একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা, এরপর হাজারটা ঝড়-ঝাপটা ডিঙিয়েও এক সাথে থাকা ভাগ্যবান মানুষ খুব কম হয়। স্কুল বেলা থেকে গল্প শুরু করলে দুই-একটা বিচ্ছেদের গল্প আছে আমাদের প্রায় সবার জীবনেই। চারপাশে চোখ মেলে তাকালেই খোঁজ মিলবে এমন বহু মানুষের, যারা এক সাথে থাকার স্বপ্ন দেখে শেষ পর্যন্ত বেছে নিতে হয়ছে দুটি পথ।

সত্য হচ্ছে- ভালো লাগা কিংবা ভালোবাসা আদান-প্রদান আর বোঝাপড়ার বিষয়, সে ফুরিয়ে যেতেই পারে। তবুও সম্পর্ক কিংবা প্রেম যে ভেতরকার বিষয় এবং এতে জোর খাটানো চলে না জেনেও আমরা অনেকেই তা অস্বীকার করি। অনিয়ন্ত্রিত আবেগে ভেসে গিয়ে উষ্ণতা ছড়ানো সম্পর্কটা ভেঙ্গে গেলেই আমরা যেন অন্য মানুষ হয়ে যাই। এক সাথে থাকা সময়ে আঁচল শুঁকতেই যে মানুষটার গন্ধ চিনে যেতাম, তাকে ভাসিয়ে দেই কটুকথার বানে। এক সাথে বাঁচতে চাওয়া মানুষটাকে করে তুলি সবচে অচেনা, যেন তার ছায়া মাড়ানোও মানা!

হ্যাঁ, সম্পর্কে আমরা অনেকেই প্রতারিত হই। কথা রাখা না রাখার বেড়াজালে প্রিয় মুখটাও হয়ে উঠে প্রতারক। বুকের বাঁ পাশে আঘাত লাগে, কিন্তু সে আঘাতের ঘা না সামলে আমরা ছুটে যাই প্রতিহিংসার দিকে। নিজেকে সামলানোর রণকৌশল হিসেবে বেছে নেই সবচেয়ে ঘৃণ্য পদ্ধতিটি। যে হাত দিয়ে প্রেমিক/প্রেমিকার প্রিয় নরম হাত কিংবা চিবুক ছুঁয়েছি, সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলো বলেই সে হাতে আমরা নোংরা কথা লিখি। যে ঠোঁটে প্রিয় মানুষটির স্পর্শ পেতে ভীরু পায়ের অপেক্ষা ছিলো, সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলো বলে সেই ঠোঁটকে ব্যস্ত রাখি নোংরা কথায়। ভালোবেসে খুব কাছাকাছি আসার কোন মূহুর্তের ছবিগুলোকে সম্পর্ক ভাঙ্গার অজুহাতে তুলে দেই অন্যের হাতে।

অথচ ভালোবাসা আমাদের সহিষ্ণু করে তোলার কথা, ভালোবেসে আমাদের হয়ে উঠার মানবিক। যে চলে গেছে তার জন্য ঘৃণা পুষে না রেখে এটাই কি ভালো না যে, সম্পর্কটা শেষ হয়ে গেলেও কোথায় যেন একটা সুতোর টান থাকা? নিজেদের কাটানো সুন্দর সময়গুলোকে শ্রদ্ধা করা। যেন হঠাৎ কোথাও দেখা হয় গেলে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বদলে আওড়ানোর যায় রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাখানি- আমাদের গেছে যা দিন, তার সবকিছুই কি গেছে? কিছুই কি নেই বাকী! 

ভালোবাসা দিবসে জয় হোক অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা বোধের, জয়জয়কার চলুক সঙ্গীর ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়ার৷ সবার ভালোবাসা ভালো থাকুক।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা