মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাহবুব কবির মিলনের অপরাধটা কী একটু খোঁজ নেবেন?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন মাহবুব কবির মিলনের অপরাধটা কী? কেন তাকে ওএসডি করা হলো? দুর্নীতি আর ব্যর্থতার দায়ে যার বিচার হওয়ার কথা সে হয় সিনিয়র সচিব আর যিনি সততার সঙ্গে লড়াই করেন তিনি হন ওএসডি- এটা কেমন নিয়ম?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। না, নিজের জন্য কোনদিন আপনার কাছে চাইনি। আজও আমার জন্য নয়, লিখতে বসেছি আরেকজনের জন্য। কারণ, মাহবুব কবির মিলন স্যারকে ওএসডি করার কথা শুনে ভীষণ মর্মাহত হয়েছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাহবুব কবির মিলন স্যার সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব বা শুধু একটা নাম নয়। আমার কাছে তিনি একজন যোদ্ধা, একটা লড়াই, একটা স্বপ্ন। তাহলে কেন তাকে ওএসডি করা হবে? এই বুঝি ভালো কাজের পুরুষ্কার? দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাওয়ার স্বপ্নের পরিনতি কী এমনই?
দায়িত্ব নিয়ে বলছি, সাংবাদিকতার সুবাদে অনেক বছর ধরে তাকে দেখছি। সরকারি চাকুরি করে নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একটা মানুষ সারাক্ষণ দেশের কথা ভাবছেন, নানা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে যোগ দিয়ে তিনি তো রীতিমত বিপ্লব করলেন। এতো কিছু করার ফলাফল নিরাপদ খাদ্য থেকে তাকে সরিয়ে রেলে দেওযা হলো।
মাত্র কয়েকমাস আগে রেলে যোগ দিয়েও থেমে থাকলেন না মাহবুব স্যার। রেলের সম্পদ উদ্ধারের পাশাপাশি টিকিট কালোবাজারি বন্ধে দারুণ সব উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। রেলের টিকেট চোরাকারবারীদের ভাত মেরে তিনি নাম, ভোটার আইডি নাম্বার সম্বলিত অনলাইন টিকেটের প্রচলন করেছেন! এই তো, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে বেশ কয়েকদিন আগে তিনি একটা স্বপ্নের কথা বললেন। ১০ জন অফিসার নিয়ে তিন মাসে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমতি চাইলেন। এই চাওয়াই কী তবে কাল হলো!
আমি ভীষণ মর্মাহত। এদেশে যখন কোন সরকারি কর্মকর্তা সততার সাথে লড়াই করেন, দেশ ঠিক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, আমি তাদের ভক্ত হয়ে যাই। নিজে থেকে যোগাযোগ করি, তাদের লড়াইয়ে পাশে থাকি। আমি দেখেছি সরকারি চাকুরির মধ্যে থেকেও অনেক কর্মকর্তা এই দেশটাকে ভালোবেসে নানা উদ্যোগ নেন। কিন্তু সবসময় দেখেছি সাধারণ মানুষ তাদের ভালোবাসলেও তাদের পেশার অন্যরা সবসময় বসে থাকে কীভাবে তাদের ঘায়েল করা যায়।
হ্যাঁ, এই দেশে নানা সময় নানা বিষয় নিয়ে আমি সবসময় প্রতিবাদ করি। লিখি। উদ্দেশ্য একটাই এই দেশ আর দেশের মানুষেরা ভালো থাকুক। মাহবুব কবির মিলন স্যারকেও আমার তেমনি একজন লড়াকু মনে হতো। আমি মনে করি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের গর্ব মাহবুব কবির স্যার। তিনি গণমানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা বয়ে নিয়ে চলা একজন অতিরিক্ত সচিব। আমি দেখেছি দেশের মানুষের জন্য তিনি দপ্তর থেকে দপ্তরে, প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছেন।
আমি দেখেছি, তিনি কাজ করেন এক দপ্তরে, কিন্তু ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়ে যান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর! এগুলো কোনটাই উনার কাজ নয়, কিন্তু তিনি করে যাচ্ছেন! এমনও হয়েছে, অন্য দপ্তরের মন্ত্রীর মিটিংয়ে যাওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্টদের রিকুয়েস্ট করেছেন। একজন ক্যাডার কর্মকর্তা হয়েও কনফারেন্স রুমে চেয়ার পাননি, দাঁড়িয়ে থেকেছেন! তবুও গিয়েছেন শুধুমাত্র অনিয়মের চিত্র মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরার জন্যে! বহুবার অপমানিত হয়েছেন, বহুবার! চাকরি চলে যাওয়ার হুমকিও এসেছে! তবু তিনি অবিচল ছিলেন।
নানা বিষয়ে আমি মাহবুব স্যারের কাজ দেখেছি আর সরকারি কর্মকতাদের ওপর আস্থা বেড়েছে। বলতে দ্বিধা নেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার যে লড়াই, মাহবুব কবির স্যারের যে বক্তব্য তাতে আমার রক্তে শিহরন জাগতো। ভীষণ আশাবাদী হতাম। সত্যি বলছি, আমলাতন্ত্রে আমার বিশ্বাস না থাকলেও ভালো ও সৎ আমলাদের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস ছিল। সে কারণেই মুনীর চৌধুরী, মাহবুব কবির মিলন বা ইউসুফ ভাইদের আমি ভীষণ ভালোবাসি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! একমাত্র আপনই পারেন এই দেশটাকে বাঁচাতে। প্লিজ, মাহবুব কবির মিলন স্যারের মতো মানুষকে কাজে লাগান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ দরকার এই দেশে। সেই যুদ্ধে মাহবুব কবির স্যারদের মতো লোক দরকার। দিয়ে দেখেন না তাকে দায়িত্ব। অতীতে যেহেতু কোনদিন ফেল করেননি আমার বিশ্বাস তিনি একটা বিপ্লব করতে পারবেন।
আচ্ছা এই দেশের আমলাতন্ত্র কী চায়? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কেরানি যে শুধু চেয়ারে তোয়ালে দিয়ে বসে থাকবে, বিশাল হাবভাব নেবে, ঘুষ খাবে, নয়তো সারাজীবন নির্বিবাদে কোন স্বপ্ন ছাড়া একটা চাকুরি করে অবসরে যাবে? এমন কেরানিতে তো আমলাতন্ত্র ভরা। আর কত লাগবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন মাহবুব কবির মিলনের অপরাধটা কী? কেন তাকে ওএসডি করা হলো? সারাজীবন সৎ থেকে মানুষের পাশে থাকাটা অপরাধ? দুর্নীতিমুক্ত দেশের কথা বলা অপরাধ? দুর্নীতি আর ব্যর্থতার দায়ে যার বিচার হওয়ার কথা সে হয় সিনিয়র সচিব আর যিনি সততার সঙ্গে লড়াই করেন তিনি হন ওএসডি। এটা কেমন নিয়ম? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাহবুব কবির মিলনরা যদি হেরে যায় তাহলে এই দেশের জনপ্রশাসনে থাকা বহু সৎ সরকারি কর্মকর্তা লড়াই করার সাহস পাবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই দেশে বঙ্গবন্ধু এক চুল পরিমান দুর্নীতে করেন নাই। আমি বিশ্বাস করি আপনিও চান দুর্নীতিমুক্ত একটা বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে মাহবুব কবির মিলনদের ভীষণ দরকার। ভীষণ। আপনিসহ নীতি নির্ধারকদের কাছে অনুরোধ, মাহবুব স্যার যে লড়াইটা শুরু করেছেন সেটা করতে দিন। আশা করছি সাধারণ মানুষের এই চাওয়া আপনার কাছে পৌঁছাবে। তাকে ওএসডি থেকে এমন কোন দায়িত্বে দিন যেটা দেশের জন্য জরুরী। তাতে দেশ আর দেশের মানুষই নিরাপদে থাকবে। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন