মেয়ের বাবা যেন অনেকটা বাংলা ছবির চৌধুরী সাহেব, গরিব পাত্রের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। কিন্তু ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রেমিক-প্রেমিকা তখন নিজেদের চেষ্টায়ই হয়ে উঠল কোটি টাকার মালিক।
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে নানান নেতিবাচক তত্ত্ব রয়েছে আমাদের সমাজে। প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ বোকা হয়ে যায়। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। খেই হারিয়ে ফেলে। ভালোবাসা নাকি জীবনে উন্নতির পথে প্রধান অন্তরায়। কারও কারও ক্ষেত্রে হয়ত এসব কথা শতভাগ সত্য। কিন্তু কখনও কখনও আবার এই ভালোবাসাই হয়ে উঠতে পারে জীবনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার, সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
মানব আর নীতির গল্পে আমরা তারই প্রমাণ পাই। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা তাদের। একদমই অল্প বয়সে একে অন্যের সাথে পরিচয়। মানব তখন সবে ক্লাস নাইনে পড়ে। আর নীতি ক্লাস সেভেনে। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব থেকে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে তাদের। সেখান থেকে প্রণয়। একসময় তারা বুঝতে পারে, তাদের মধ্যে যে ভালোবাসা, তা সাময়িক বা ক্ষণিকের নয়। তারা আজীবন একে অপরের সাথে থাকতে চায়।
তবে তাই বলে তারা কিন্তু তাদের নিজ নিজ ক্যারিয়ার নিয়েও ছিল খুবই সচেতন। নিজ নিজ লক্ষ্যে তারা ছিল অবিচল। মানব বি.কম পাস করে, আর নীতি ফ্যাশন ডিজাইনিং-এ কোর্স সম্পন্ন করে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তারা চাকরি নেয়। পাশাপাশি অবসর সময়েও তারা বিভিন্ন কাজ করত। যেমন মানব একটা নাইট ক্লাবে ডিজে হিসেবে কাজ করত। আর নীতি তার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় পরিজনদের জন্য পোশাক ডিজাইন করে দিত। এভাবে তারা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে তাদের দেখাসাক্ষাৎও খুবই কম হতো। সময় করে মাঝেমধ্যে তারা রাতের বেলা সিনেমা দেখতে যাওয়ার সুযোগ পেত কেবল।
তারা ভেবেছিল, একদিন তাদের এই সংগ্রামের জীবন শেষ হবে। একটা নিশ্চিত ভবিষ্যতের সন্ধান পেলে তারা চিরদিনের জন্য গাঁটছড়া বাঁধতে পারবে। কিন্তু বাধা যে অন্য দিক থেকে আসবে তা তারা ভাবতেও পারেনি।
নীতির বাবা তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে রেগে আগুন হয়ে যান। মেয়ের পছন্দকে একদমই মেনে নিতে পারেননি তিনি। যেই ছেলের নিজের একটা বাড়ি পর্যন্ত নেই, ভাড়া বাসায় থাকে, তার সাথে তিনি কিছুতেই মেয়ের বিয়ে দেবেন না। কিন্তু এতদিনের সম্পর্কের পর হঠাৎ করে তো মানব আর নীতির মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা অনেক চেষ্টা করেও নীতির পরিবারকে যখন বোঝাতে পারল না, তখনও হাল ছেড়ে না দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল। চিন্তা করল নতুন কিছু করার।
দুজনের চাকরির বেতন থেকে বাঁচিয়ে যে টাকা সঞ্চয় হয়েছিল, তাও খুব বেশি না। মাত্র ২৫,০০০। ওই টাকা দিয়েই তারা মুম্বাইয়ে তাদের এক বন্ধুর বাড়ির গ্যারেজকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে কুরিয়ার হিসেবে চালু করে। এছাড়াও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে তারা একটা দোকান ভাড়া নেয়, ও তারপর সেটা সাবলেট দেয়। এছাড়াও তারা এখানে ওখানে ছোট ছোট বিনিয়োগ করতে শুরু করে।
যেমন তখন মাত্র কয়েক লাখের মধ্যেই রিয়েল স্টেটের ছোট ছোট প্রোপার্টি পাওয়া যেত। সেগুলো কিনে নিয়ে কিছুদিন পর বেশি দামে বিক্রি করতে থাকে তারা। এভাবেই অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয় তাদের। তখন তারা মালাদে নিজেরাই সাড়ে নয় লাখ টাকা দিয়ে একটা দোকান কিনে নেয়। এছাড়াও তাদের কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা তো চলছিলই। পাশাপাশি তারা একটা সাইবার ক্যাফেও খুলে ফেলে। বাড়তি আয়ের জন্য রাতের বেলা মানব বিভিন্ন কর্পোরেট ইভেন্টে ডিজে হিসেবেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। বছরখানেক পর চার লাখ টাকা মূলধন নিয়ে তারা ছোটখাট একটা জুস বারও খুলে ফেলে।
এভাবে কয়েক বছর পর তাদের সব খরচাপাতি বাদ দিয়ে আয়ের পরিমাণ কত দাঁড়ায় তা জানলে হয়ত অনেকেরই চোখ কপালে উঠতে পারে। পুরো আড়াই কোটি! কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানসিকতার দরুণ খুব ছোট ছোট ব্যবসার মাধ্যমেও তারা বিশাল অংকের টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হয়। এবং রাতারাতি তাদের অবস্থার এই আমূল পরিবর্তন দেখে শেষ পর্যন্ত নীতির বাবাও মানবের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হন।
এভাবেই ভালোবাসার শক্তি দিয়েই জয় হয় মানব ও নীতির ভালোবাসার। তাদের ভালোবাসা একদম নিখাদ ছিল বলেই, সেই ভালোবাসাকে জয় করতে কয়েকটা বছর তারা হাড়ভাঙা খাটুনিতেও পিছপা হয়নি। আর দিন শেষে তার ফলও পেয়েছে। তাদের এই গল্প শুধু যে প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্যই অনুপ্রেরণাদায়ক হবে তা নয়। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন তরুণ উদ্যোক্তারাও।
তথ্যসূত্র- www.kenfolios.com
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন