এমন চমৎকার উদ্যোগগুলোর কথা বেশি বেশি প্রচার হওয়া দরকার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
কুরিয়ারে যেখানে কেজিপ্রতি পনেরো-বিশ টাকা খরচ করেও ভোগান্তি পোহাতে হতো, সেখানে 'ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে' করে আম পরিবহন করা যাচ্ছে কেজিপ্রতি দেড় টাকা খরচায়! অথচ রেলওয়ের এই উদ্যোগের কথা খুব বেশি মানুষ জানেও না...
গরমের মৌসুমে শুধু আম পরিবহনের জন্য চালু করা হয়েছে আলাদা একটা ট্রেন! ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন নামের এই ট্রেনটি চালু হওয়ায় আমের স্বর্গ বলে পরিচিত চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম পরিবহনের খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি দেড় টাকারও কম, যেখানে কুরিয়ারে আম পাঠাতে বা নিতে কেজিপ্রতি দশ-পনেরো টাকা খরচ করতে হয় গ্রাহককে!
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন ফেসবুকে লিখেছেন- "রাজশাহী থেকে নিজের জন্য আম আনাচ্ছি ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে। রেলের ভাড়া, লেবার চার্জ রাজশাহী লোডিং এবং তেজগাঁও আনলোডিং সহ প্রতি কেজি খরছ পড়ছে দুই টাকার কিছু বেশি। ২০ কেজির একটি ক্রেটের সর্বোচ্চ খরচ পড়ছে মাত্র ৪৮ টাকা।
রাতে ট্রেনটি তেজগাঁও পৌঁছে এবং সকাল সাতটার পর ডেলিভারি শুরু হয়। সারাদিন ডেলিভারি না নিলে আপনার মোবাইলে জানানো হবে। কোন হ্যাসেল নেই। আম নষ্ট হবার কোন সম্ভাবনা নেই। নেই অতিরিক্ত কোন খরচ। যা আছে, তা শুধু ভুল ধারণা। আগের দিন আর নেই।
কাওরানবাজার মালিক সমিতির সভাপতির সাথে কথা বললাম, ট্রেনে আম আনার বিষয়ে। জানালাম খরচ অনেক কম পড়ে। তিনি আতংকিত হয়ে বললেন, ট্রেনে সমস্যা অনেক। কি সমস্যা? মাল বুকিং দিতে টাকা ঘুষ দিতে হয়। আম এনেছেন এর মধ্যে? না। তাহলে ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে পড়ে আছেন কেন!
অনেকেই অভিযোগ করেন, কুরিয়ারে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম আনতে কেজি প্রতি ১৫–২০ টাকা চার্জ দিতে হয়। অথচ রেল নিচ্ছে সর্বোচ্চ দুই টাকা সামান্য পয়সা। নিশ্চিন্তে ব্যবসায়িক বা ব্যাক্তিগতভাবে রেলে আম নিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি সবাইকে। আম তুলে দেবেন, নিশ্চিন্তে তেজগাঁও থেকে পরদিন আম ডেলিভারি নেবেন। মাঝের দায়িত্ব রেলের, মানে আমাদের।"
গত ৫ই জুন প্রথমবারের মতো বিশেষ এই ট্রেন চালু হয়। প্রথম দিন ট্রেনটি ঢাকায় আম নিয়ে যায় ১০ হাজার ২১৫ কেজি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকায় আম গেছে ১ লাখ ১ হাজার ৬০৫ কেজি। ট্রেনটিতে রাজশাহী স্টেশন থেকে এক কেজি আম ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও বা কমলাপুরে নিতে খরচ পড়ছে সর্বোচ্চ ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এক কেজি আমের ভাড়া লাগছে ১ টাকা ৩১ পয়সা। বিশেষ ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় যায় ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-২’ নামে আর ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফেরে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-১’ নামে।
রেলওয়ের এই চমৎকার উদ্যোগে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আমের মৌসুমে কুরিয়ার কোম্পানীগুলোর বাজে সার্ভিস এবং বিলম্বের কারণে অযথা হয়রানির শিকার হতেন ক্রেতারা। যারা একটু নিরাপদ এবং স্বাদের সঙ্গে আপোষ করবেন না ভেবে রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অর্ডার দিয়ে আম আনাতেন, তাদের ভোগান্তি উঠতো চরমে। অথচ এখন একদিনের মধ্যেই তারা আম হাতে পেয়ে যাচ্ছেন, পরিবহন খরচটাও নেমে এসেছে নুন্যতম একটা অঙ্কে! সমস্যা হচ্ছে, গ্রাহকেরা এখনও জানেন না এই উদ্যোগ সম্পর্কে, এটা কতখানি নিরাপদ ও সাশ্রয়ী, সেই সম্পর্কেও অনেকের ধারণা নেই। তাই এমন চমৎকার উদ্যোগগুলোর কথা প্রচার করাটা খুব জরুরী...