এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দিনে দুইটি কাঁচা বা সেদ্ধ করা ডিম খাই, এবং একটি রান্না ডিমও। তবে আমি খুব বেশি খাই না, কারণ আমার দাঁত নেই।’

জীবনের প্রতি প্রায় সব মানুষেরই রয়েছে দুর্নিবার মোহ। সব মানুষই চায় চিরজীবী হতে। এই সুন্দর পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাতে চায় না কেউই। কিন্তু নিয়তির বাস্তবতা হলো, একদিন না একদিন মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। তাই তো কবি বলেছেন, 'জন্মিলে মরিতে হবে... অমর কে কোথা কবে... চিরস্থির কবে নীর, হায়রে, জীবন-নদে?' 

তবে চিরকাল পৃথিবীর বুকে টিকে থাকা না গেলেও, মানুষ কিন্তু চাইলে তার জীবনীকালকে দীর্ঘায়িত করতেই পারে। আর তা করার জন্য অনেক মানুষই বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েছে, সন্ধান করেছে 'এলিক্সির' বা আয়ু বাড়ানোর ঔষধের। কখনও কখনও মানুষ যেমন সফল হয়েছে, তেমনি এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার নজিরও চাইলেই পাওয়া যায়। যেমন প্রথম চৈনিক সম্রাট কিন শি হুয়াং বিশ্বব্যাপী এলিক্সিরের সন্ধান চালিয়েছিলেন অমরত্ব লাভের আশায়। কিন্তু তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয় মাত্র ৪৯ বছর বয়সে, খ্রিষ্টপূর্ব ২১০ সালে। অনেকেরই ধারণা, তিনি সম্ভবত বিষাক্ত সিনাবার গ্রহণ করেছিলেন, যার ফলে হীতে বিপরীত হয়েছিল। 

আবার কারও কারও জন্য দীর্ঘ জীবনী লাভের ফর্মুলা একদমই সহজসরল, সোজাসাপটা। যেমন ইটালিতে জন্ম নেয়া মার্টিনা লুইজিয়া মোরানো। ১৮৯৯ সালের ২৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি, আর মারা যান ২০১৭ সালের এপ্রিলে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে নিজের ১১৭ তম জন্মদিনে তিনি খোলাসা করেছিলেন তার এই দীর্ঘ জীবনের রহস্য। এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'আমি দিনে দুইটি কাঁচা বা সেদ্ধ করা ডিম খাই, এবং একটি রান্না ডিমও। তবে আমি খুব বেশি খাই না, কারণ আমার দাঁত নেই।' 

২০ বছর বয়সে অ্যানেমিয়া হয়েছিল মোরানোর। সেই থেকেই তিনি দৈনিক ডিম খাওয়ার প্রথা চালু করেন, এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তা মেনে চলেন। ওই সময়ে এক চিকিৎসক তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন দিনে তিনটি ডিম খাওয়ার। এবং একবার এই ডিম খাওয়া অভ্যাসে পরিণত হলে পরবর্তী সাড়ে নয় যুগ তিনি তা অব্যহত রাখেন। হিসেব করলে দেখা যায়, মোরানো যদি সত্যিই ২০ বছর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক এতগুলো ডিম খেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তিনি তার গোটা জীবনে এক লক্ষেরও অধিক ডিম খেয়েছেন, যার ফলে তিনি আরও একবার গিনেস বুক ওফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাবার দাবিদার।

প্রথমবার গিনেস বুকে তার নাম ওঠে ২০১৬ সালের মে মাসে, যখন তিনি ঘোষিত হন সেই সময়কার পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি হিসেবে। এবং তিনি ১৮ শতকে জন্ম নিয়ে সবার শেষে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিও বটে। 

নিজের ১১৭তম জন্মদিনে মার্টিনা মোরানো

মোরানোর বক্তব্য থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয় যে দীর্ঘকাল যাবত মানুষ লম্বা জীবন লাভের উপায় হিসেবে যে সকল পন্থা অবলম্বন করে এসেছে, সেগুলো আসলে সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যেমন মোরানো কখনোই খুব বেশি পরিমাণে শাক-সবজি বা ফলমূল খাননি। তিনি স্রেফ ডিমের যাদুতেই এতদিন বেঁচে ছিলেন। মি. বাভা একজন চিকিৎসক যিনি মোরানোকে তার জীবনের শেষ তিন দশকে দেখভাল করেছেন। তিনি জানান, মোরানো সকালের ব্রেকফাস্টে দুইটি কাঁচা ডিম খেতেন, এবং দুপুরের লাঞ্চে একটি ডিমের অমলেট খেতেন। একটা সময় পর্যন্ত তিনি প্রতি রাতের ডিনারে মুরগিও খেতেন। কিন্তু পরে তিনি মুরগি খাওয়া বন্ধ করে দেন। কারণ কেউ একজন তাকে বলেছিল, মাংস খেলে নাকি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তার আগ পর্যন্ত মুরগি তার অন্যতম পছন্দের খাবারই ছিল। মোরানো যখন মুরগি খাওয়া বন্ধ করে দেন, তখন তার বয়স ইতিমধ্যে একশোর কাছাকাছি। ওই বয়সে এসেও স্রেফ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তিনি পছন্দের একটি খাবার চিরদিনের জন্য খাওয়া ছেড়ে দেন।

মূলত এই ছোট্ট একটি তথ্যই প্রমাণ করে অনেক কিছু। ডিম বা অন্য কোন খাবারের চেয়েও মোরানোর দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার মূল রহস্য হলো তার প্রচন্ড রকমের ইচ্ছাশক্তি। প্রায় এক শতক বাঁচার পরও জীবনের প্রতি তার তৃষ্ণা মেটেনি, তিনি চেয়েছেন নীরোগ শরীরে আরও অনেকদিন বাঁচতে। তাহলে কম বয়সে জীবনের প্রতি তার টান আরও কত বেশি ছিল তা সহজেই অনুমেয়। এবং নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, জীবনের প্রতি এই ভালোবাসাই আসলে দীর্ঘায়িত করেছে তার জীবনকে। পাশাপাশি ডিমের যাদু তো ছিলই।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা