নারায়ণগঞ্জের মসজিদে অনেক কিছুই পোড়েনি। কাঠের ফার্নিচার, ফ্যান, এবং বই অক্ষত আছে। সেগুলোর কথা উল্লেখ না করে শুধু ''অক্ষত রয়েছে কোরআন" টাইপের খবরগুলো ধর্মকে ব্যবহার করে অসত্য সংবাদ পরিবেশন ছাড়া আর কিছুই নয়...

আগুন জ্বলার জন্য ৪ টা উপাদান লাগে। উচ্চ তাপমাত্রা, দাহ্য কোনো পদার্থ, স্ফুলিংগ/স্পার্ক/ আগুনের সূচনা করে এমন কোনো কিছু এবং অক্সিজেন 

ফ্রিজের ভেতরে বা বরফের মধ্যে যদি আপনি কেরোসিন বা ম্যাচের কাঠি ফেলে রাখেন, সেগুলা দিয়ে আগুন জ্বলবে না। যারা কাঠের চুলায় রান্না করেন, তারা খুব ভাল বুঝবেন। জ্বালানি কাঠ একটু ভিজে গেলে আগুন জ্বলে না। উচ্চ তাপমাত্রায় আনা হলে আগুন জ্বলে।

দ্বিতীয় ধাপে আসে দাহ্য পদার্থ। আগুন ধরলে সেটা কাঠ, কাপড় চোপড়, তেল কয়লা, খ্যাতা বালিশ সবই পোড়াবে। কিন্তু এলুমিনিয়াম এর হাড়ি পাতিল পোড়াবে না। কারন এগুলা দাহ্য পদার্থ নয়। নারায়নগঞ্জের মসজিদেও  সিলিং ফ্যান গুলা দেখা গেছে অক্ষত। 

তৃতীয় ধাপে দরকার দিয়াশলাই কাঠির মত কোনো স্পার্ক। পেট্রোল বা কেরোসিনের ড্রাম ও বিপজ্জনক না, যদি না সেখানে কেউ দিয়াশলাই এর কাঠি ফেলে দেয়। রোড এক্সিডেন্ট বা প্লেন এক্সিডেন্ট এর পরেও অনেক সময় অয়েল ট্যাংক বিস্ফোরিত হয় না,কারন সেখানে কোনো স্পার্ক ছিলনা। ( কিছু কিছু ফুয়েলের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বেশি হলে নিজে নিজেই আগুন জ্বলে ওঠে। যেমন, ডিজেলের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রির বেশি হলে নিজেই আগুন জ্বলে) 

চতুর্থ ধাপ হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।  আগুন কন্টিনিউয়াসলি জ্বলার জন্য অক্সিজেন দরকার। আগুন কোনো একভাবে ধরে গেলেও সেটা সাসটেইন করবে না, যদি সে অক্সিজেন না পায়। ফায়ার ফাইটাররা বেসিকালি আগুনকে নিভিয়ে দেয় অক্সিজেনের অভাব ঘটিয়ে। ফায়ার এক্সটিংগুইশারে যে ABC powder নামে কেমিকাল থাকে, সেটা আগুনের উপরে এমুনিয়াম বাইকার্বনেট এর ফোম বিছিয়ে দেয়। ফলে আগুনের সংস্পর্শে অক্সিজেন আসতে পারেনা। ফলে আগুন নিভে যায়। 

একইভাবে, কারো শরীরে আগুন ধরে গেলে কম্বল চাপা দিলেই সেটা নিভে যায়। কারন, পুরু কম্বলের কারনে সেটা আর অক্সিজেন পায় না। ছোট কোনো জায়গার আগুন নেভাতে হলে কোনো হাড়ি/পাতিল দিয়ে সেটাকে চাপা দিলেও দেখবেন আগুন নিভে গেছে

নারায়নগঞ্জের মসজিদের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ফ্লোরের টাইলস, ইমামের বসার জন্য কাঠের মেহরাব,কাঠের তৈরি জুতা রাখার বাক্স, কাঠের বুল শেলফ, প্লাস্টিকের সাউন্ড সিস্টেম  এবং অনেক বই অক্ষত আছে। বুক শেলফে কোরান বাদেও অন্যান্য বই দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে, এই এলাকায় আগুন ধরেনি। বুক শেল্ফের পাল্লা আগুনের সময়ে খোলা ছিল নাকি আটকানো ছিল, সেটাও বোঝা যাচ্ছেনা। 

যুগান্তরে প্রকাশিত সংবাদ

পুরো মসজিদে শতাধিক  মুসল্লি নামাজ পড়ছিল, এর মধ্যে আহত হয়েছে মাত্র ৪০ জন। সম্ভবত, মসজিদের সব এলাকায়  আগুন ছড়িয়ে পড়েনি। মসজিদে আগুনের উৎস ছিল তিতাসের সরবরাহ করা পাইপলাইনের মিথেন (CH4) গ্যাস। এটা খুব ভাল দাহ্য পদার্থ। দ্বিতীয় ভাল দাহ্য পদার্থ হচ্ছে মানুষের কাপড়চোপড়।

কাঠ কিংবা বই হল তারপরের স্টেজের দাহ্য পদার্থ। মিথেন গ্যাস এর পরিমান আরো বেশি হলে বুকশেল্ফে কিংবা ইমামের চেয়ারেও আগুন ধরত। সেটা হয়নি, কারন তার আগেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছিল। আগুন না ধরার পেছনে অলৌকিক কোনো কারন নেই। 

কিছু পত্রিকা দাবি করছে, কোরআনে আগুন ধরেনি অলৌকিক কারনে। তবে অতীতে আমরা বিভিন্ন সময়ে বড় অগ্নিকান্ডে কোরআন পুড়তে দেখেছি। ২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে পল্টনের ফুটপাথে প্রচুর কোরআনের কপি এবং অন্যান্য ইসলামিক বই পুড়তে দেখেছি। অতি সম্প্রতি সুইডেনেও একদল খৃষ্টান জঙ্গী কোরআনেের কপি পুড়িয়েছে। 

নারায়নগঞ্জের মসজিদে অনেক কিছুই পোড়েনি। কাঠের ফার্নিচার, ফ্যান, এবং বই অক্ষত আছে। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটা বই অক্ষত নাই। "অক্ষত রয়েছে কোরান"- এই ধরনের নিউজকে এক ধরনের গুজব বলা যায়,যেখানে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা হয়নি।

তথ্যসূত্র-

* যুগান্তর এর মূল নিউজ লিংক

* মসজিদে শতাধিক লোক নামাজ পড়ছিল-- এটা বিবিসির রিপোর্টে পেয়েছি। 

ইউজুয়ালি একটা এক টনের এসি ১২০/১৪০ স্কয়ার ফুট জায়গা কভার করে। ওখানে যেহেতু ৬টা এসি ছিল,কমপক্ষে ৭২০ স্কয়ার ফুট জায়গা হওয়ার কথা। ৬টা এসি যদি দুই টন করে হয়, তাহলে সেটা ১৪৪০ বর্গফুট হবে। একাধিক কম্পার্টমেন্ট খুবই লজিকাল, তবে কোনো ছবিতে নিশ্চিত হতে পারিনি সেখানে একাধিক কম্পার্টমেন্ট ছিল কিনা। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা