আজ আমি অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত একটা পাবলিক রিলেশন ও ব্র্যান্ড এওয়ারনেস ক্যাম্পেইনের গল্প বলবো। গল্পটি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বেশ অনুপ্রাণিত ও উত্তেজিত করে, কারণ এ থেকে পৃথিবীর প্রতিটা ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্সদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় শেখার আছে। এই কারণেই, এই কেইস স্টাডিটি এখন পৃথিবীর অনেক দেশের মার্কেটিং ইনসটিটিউটে রীতিমতো পাঠ্যসূচিতে অন্তভুক্ত।

আমি এই ঘটনার কথা প্রথম জানতে পারি ২০১৭ সালে, পেশাগত কারণে বিদেশের কিছু সফল ও জনপ্রিয় অ্যাড এজেন্সি নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে। এর পর থেকেই এটি নিয়ে বাংলাতে নিজের মতো করে লেখার পরিকল্পনা করছিলাম, কিন্ত বিভিন্ন কারণে আর লেখা হয়ে ওঠেনি। আজ সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি!

এই কেইসস্টাডিটা এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে, গল্পটি শুরু করার আগে আমাদেরকে কয়েকটি টার্মের সংজ্ঞা জানতে হবে, পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। তাই আমি লেখার শেষে না দিয়ে শুরুতেই ছোট্ট একটা এপেনডিক্স দিলাম। সংক্ষেপে গুছিয়ে লিখতে গিয়ে আমাকে অনেক তথ্যই কাটঁছাটঁ করতে হয়েছে। যদি কখনো মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং নিয়ে আমার সবগুলো লেখা একত্র করে ভবিৎষতে বই আকারে পাবলিশ করি, তবে সেখানে এই কেসস্টাডিটা আরো বিস্তারিতভাবে লেখার ইচ্ছে রয়েছে।

এপেনডিক্স

১) বিশ্ব শান্তি দিবস: জাতিসংঘ প্রস্তাবিত একটা বিশেষ ছুটির দিন, যে দিনে সমস্ত প্রকার যুদ্ধ ও হানাহানি-প্রতিদ্বন্ধিতা এসবের উর্ধে উঠে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সাম্যের গান গাওয়া হয়। প্রতি বছর ২১ শে সেপ্টেম্বর এটি জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সব কয়টি দেশ সরকারীভাবে পালন করে থাকে।

২) Young & Rubicam (Y&R): একটি স্বনামধ্য মাল্টিন্যাশনাল এড এজেন্সি। এটি একটি বৃটিশ কোম্পানি। বেশ কয়েকটা বড় প্রোফাইলের Integrated Marketing Communications Campaign এর জন্য এর বেশ সুনাম আছে বাজারে। উন্নত বিশ্বের প্রায় সব কয়টি রাষ্ট্রেই এর শাখা আছে, অনেকটা অগিলভির মতই। আজ আমরা যে কেইস স্টাডিটা নিয়ে পড়বো, সেটার প্ল্যানিং থেকে শুরু করে ক্রিয়েটিভ, এক্সিকিউশন – সব করেছে Y&R এর নিউ জিল্যান্ড শাখা। ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য ছিলোঃ To raise awareness for world peace day and increase brand affinity for Burger King.

৩) গেরিলা মার্কেটিং: এটি হলো মূলত এডভারটাইজমেন্টের একটা ব্যতিক্রম পদ্ধতি, যেটার মূল উদ্দেশ্য থাকে গ্রাহকদের চমক দেয়া। নাম দেখেই বুঝতে পারছেন যে, এটা কী ধরনের হতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে গেরিলা মানে আচমকা পেছন থেকে আক্রমন করে শক্রুসেনা-আস্তানা সব ছারখার করে দেয়া। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা মূলতঃ যে ধরনের যুদ্ধনীতি ব্যবহার করে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় লাভ করতেন, সেটা ছিল গেরিলা যুদ্ধ।

সুতরাং, গেরিলা মার্কেটিং হচ্ছে বাজারে থাকা কোন প্রতিদ্বন্দীকে এমনভাবে আক্রমন করা, সে মোটামুটি আর পালাবার পথ পায় না, সে ক্ষতিগ্রস্থ ও বিপর্যস্ত হতে বাধ্য হয়। এটি মূলত ইনবাউন্ড মার্কেটিংয়েরই একটি শাখা, যা অত্যন্ত অপ্রচলিত এবং ব্যতিক্রম ধারনার উপর ভিত্তি করে ক্যাম্পেইন ডিজাইন করে। গুগলে সার্চ করলে এর তুমুল আগ্রহদ্দীপক কিছু নমুনা দেখতে পাবেন, তাহলে এর সংজ্ঞা বুঝতে সহজ হবে।

এই ধরনের মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের কিছু বৈশিষ্ট হলো, এটি হাইলি ডিসরাপটিভ- মানে একেবারে পুরো ইনডাসট্রিকে ধরে নাড়া দেয়, বিশাল এক অডিয়েন্সের সাড়া পায়, রীতিমত চারিদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে যায়। তাই এটি করা অত্যধিক কষ্টসাধ্য, সময় ও অর্থসাপেক্ষ। প্রমাণ দিচ্ছি- আমরা আজ যে ক্যাম্পেইনটির গল্প জানবো, সেটি প্ল্যানিং থেকে এক্সিকিউশনে লেগেছিলো প্রায় ৪ বছর সময়। যে বছর এক্সিকিউট করা হয়, সে বছর বার্গার কিং শুধু অ্যাড বাজেটেই খরচ করে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার

প্রতি বছর ২১ শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব শান্তি দিবস পালিত হয়

৪) Earned Media: কোন রকম টাকা পয়সা খরচ করা ছাড়া, আপনা-আপনি, বিভিন্ন মিডিয়াতে ন্যাচারালি বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে পাবলিসিটি তৈরী হয়, তাকে বলে আর্নড মিডিয়া। এর ভেতর আছেঃ word-of-mouth, buzz, reviews, news coverage, comments, feedback, likes, mentions, shares, and various free promotional efforts.

৫) Beef: আমরা জানি, এর মানে গরুর মাংস। কিন্তু জেনে রাখুন, এর সমার্থক শব্দে আছে, অভিমান করা, অভিযোগ করা, ক্ষোভ পুষে রাখা- ইত্যাদি।

৬) ম্যাক ডোনাল্ডস বনাম বার্গার কিং: এই দুইটা ফাস্ট ফুড জায়ান্টের মধ্যে যে আজীবন ধরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে, সেটা তো সবাই জানে, তাই সে সব নিয়ে কথা বাড়ালাম না। উল্লেখ্য, ম্যাকডোনাল্ডস বার্গার কিংয়ের চাইতেও অনেক বড় হওয়া সত্বেও, বার্গার কিং ৮ বার তাদেরকে মার্কেটিং, ব্রান্ডিং, প্রমোশন ও পাবলিক রিলেশনে ”এক হাত দেখিয়ে” দিয়েছে। এর অন্যতম হলো The Not Big Macs – Burger King” ক্যাম্পেইন, গত বছরের এই ক্যাম্পেইনটি করে অগিলভি।

৭)  Peace One Day: একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা কিনা বিশ্ব শান্তি দিবস নিয়ে গনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজ করে থাকে।

ম্যাক হুপারের গল্প: দুর্দান্তরকমের সফল এক ক্যাম্পেইন!

শুরুটা হয়েছিলো ২০১৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস আর দ্য শিকাগো ট্রিবিউন পত্রিকার পুরো পাতাজুড়ে ছাপা হওয়া একটা চিঠির মাধ্যমে। চিঠিতে বার্গার কিং একটা প্রস্তাব দিয়েছে ম্যাকডোনাল্ডসকে। বার্গার নিয়ে তাদের মধ্যকার যে চলমান যুদ্ধ, আসন্ন শান্তি দিবসে তার একটা অবসান চাওয়া হয়েছে, স্রেফ একদিনের জন্য, বিশ্ব শান্তি দিবসে। এই যুদ্ধাবসানের প্রতীক হিসাবে তারা ’ম্যাক হুপার’ (ম্যাকডোনাল্ডস এর ম্যাক+বার্গার কিংয়ের হুপার) নামে একটা বিশেষ বার্গার চালু করতে চায়, যেটা তাদের উভয় ব্রান্ডেরই বিখ্যাত ও মজাদার সব উপকরণ দিয়ে বানানো হবে।

’ম্যাক হুপার’ বার্গার (ম্যাকডোনাল্ডস এর ম্যাক+বার্গার কিংয়ের হুপার)

বার্গার কিং তাদের এই প্রস্তাবে এতটাই সিরিয়াস ছিলো যে, তারা যতটা সম্ভব বিস্তারিত পরিকল্পনা করলো কীভাবে তাদের এই যৌথ উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করা যায়। তারা mcwhopper.com নামে আলাদা একটা ওয়েব সাইট খুললো, ম্যাকহুপার বার্গারের রেসিপি নির্ধারণ করলো, সেটা বিক্রি করার জন্য আটলান্টায় একটা পপ-আপ শপ খোলা হবে, সেটার ডিজাইন, প্যাকেট বক্সের ডিজাইন, এমনকি সেখানে থাকা স্টাফদের ইউনিফর্ম কেমন হবে- সমস্ত কিছু ওয়েব সাইটে বলা হলো।

এখানে আসলে বার্গার কিংয়ের হারাবার কিছু ছিলো না। কারণ, ম্যাকডোনাল্ডস তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিক বা না দিক, উভয় ক্ষেত্রেই তারা লাভবান হতো। ম্যাকডোনাল্ডস ইয়েস বল্লেও বার্গার কিংয়েরই ব্র্যান্ড এওয়ারনেস তৈরী হতো বেশী এই পিস প্রজেক্টের মূল উদ্যোক্তা হিসেবে, আর নো বল্লেও বার্গার কিং ম্যাকডোনাল্ডস এর চাইতে বেশী লাভবান হতো, তবে মাঝখান দিয়ে ক্ষতি হতো ম্যাকডোনাল্ডস এর, এবং বাস্তবে সেটাই হয়েছে।

ম্যাকডোনাল্ডস বার্গার কিংয়ের চেয়ে বড় হলেও তাঁদের কাছে বেশ ক'বার ধরাশায়ী হয়

বার্গার কিং সাংবাদিকদের বললো – “Let’s end the beef, with beef. If [McDonald’s] chooses not to participate, no harm done – after all, peace isn’t always easy to achieve. Should they say yes, burger fans will get to experience the culinary mash-up of a lifetime and walk away inspired by the mouth-watering taste of peace.” 

সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলো তার এই কথায়। ম্যাকডোনাল্ডসকে মোটামোটি ফাঁদে ফেলা হলো এভাবে, কারণ পত্রিকার মাধ্যমে সবাই জেনে গেছে ঘটনা, এখন সবাই উন্মুখ হয়ে আছে ম্যাকডোনাল্ডস কী জবাব দেয় এই প্রস্তাবের, তা জানার জন্য। ম্যাকডোনাল্ডস করলো কী, তারা একদম সপাট “না” বলে দিলো। ম্যাকডোনাল্ডস এর সিইও তাদের ফেসবুক পেইজে এর জবাব দিলো, সংক্ষেপে ও ঠান্ডাস্বরে। 

"আমি মনে করি, আমাদের দুইজনের আরো ভালো কিছু একসাথে করার আছে। আর পরের বার পত্রিকায় না ছেপে একটা ফোন করে প্রস্তাব দিলেই চলবে।”

এমনকি, পরবর্তীতে ম্যাকডোনাল্ডস কোন সাংবাদিককেও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য দেয়নি, সাংবাদিকরা অসংখ্যবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও। ঐ সময়ে তাদের পাবলিশ রিলেশন স্ট্রাটেজি যে বেশ নড়বড়ে ছিল, এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে দিলো। যদিও পরে ম্যাক বিশ্ব খাদ্য প্রোগ্রামের জন্য একটি ৩০ সেকেন্ডের সচেতনতামূলক এড বানিয়ে দেয় বিনামূল্যে, কিন্তু সেখানে তারা নিজেদের কোন ব্র্যান্ডিং করেনি। বার্গার কিংয়ের শান্তিচুক্তির প্রস্তাব যে তারা নাকচ করে দিয়েছিলো, অনেকেই মনে করে সেটাকে পুষিয়ে দিতেই তারা এ কাজটা করেছিলো।

তবে অনেকে বলে, বার্গার কিং তাদের প্রস্তাবিত রেসিপিতে Heinz এর টমেটো কেচাপ ব্যবহার করেছে,  আর এই কেচাপটা ম্যাকডোনাল্ডস তখনি ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে, যখন 3G Capital নামের একটা প্রাইভেট ইকুইটি কোম্পানি Heinz কে কিনে নেয়। কারণ, 3G Capital হচ্ছে আবার কানাডিয়ান কোম্পানি Restaurant Brands International এর মালিক, যেটার আবার একটা অংশ হচ্ছে বার্গার কিং! ম্যাকডোনাল্ডস তাই কোন রিস্ক নিতে চায়নি।

ম্যাকডোনাল্ড, ওয়েলকাম টু আওয়ার ম্যাকহুপার প্রোপোজাল!

তো ম্যাকডোনাল্ডস এর এই জবাব শুনে সোশ্যাল মিডিয়া তো বটেই, পুরো আমেরিকাজুড়ে তাদের বিরুদ্ধে নিন্দের ঝড় বয়ে গেলো, তীব্র সমালোচনা চললো দিনের পর দিন। পত্রপত্রিকায়, টিভিতে, ফেসবুকে- সব জায়গায়। কেউ কেউ এমনকি ম্যাকডোনাল্ডস বয়কট করাও শুরু করলো। শুধু তাই না, ম্যাক হুপারের আইডিয়াটা জনগনের কাছে এতটাই ভালো লেগেছিলো যে, তারা স্বউদ্যোগে ম্যাক হুপার বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোষ্ট করা শুরু করলো, আর সেগুলো ভাইরাল হতে লাগলো। এর নাম দেয়া হলো DIY McWhopper. এটা লিখে গুগলে বা ইউটিউবে সার্চ দিলে দেখতে পাবেন শত শত ভিডিও! আমার ধারণা- বার্গার কিং বা Y&R নিজেরাও জানতো না যে, তাদের আইডিয়াটা আসলে এত বেশী সাড়া জাগাবে।

ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট এর কথা আমরা তো সবাই শুনেছি, তাই না? এর মানে সাধারনত ডিজিটাল কনটেন্টকেই বুঝায়, যেগুলো অনলাইনে পাওয়া যায়। কিন্তু খুব সম্ভবত এটিই এখন পর্যন্ত পৃথিবীর একমাত্র ক্যাম্পেইন, যা একদম রিয়েল লাইফ সত্যিকার অর্থের ”ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট” বানাতে মানুষজনকে উদ্ভদ্ধ করেছিলো। আর সেটি ছিলো, এই DIY McWhopper বার্গার!

এর ভেতর আবার চারটা রেস্তোঁরা ব্র্যান্ড বার্গার কিংয়ের প্রস্তাবে সাড়া দিলো, বার্গার কিং বললো- ”ম্যাকডোনাল্ডস সাড়া দেয় নাই তো কী হয়েছে? আসুন, আমরা আমাদের যার যার বেষ্ট উপকরণ আছে, সেগুলো নিয়েই একটা ম্যাশ-আপ বার্গার নামিয়ে ফেলি।” তাদেরকেও এই প্রস্তাব করা হয়েছিলো পত্রিকার পাতাজুড়ে এড ছাপিয়ে (সেখানেও ম্যাকডোনাল্ডস এর নাম ছিলো, মানে বার্গার কিং তাদেরকে ২য় বার সুযোগ দিলো প্রস্তাবটি ভেবে দেখার, যদিও ইতিমধ্যেই ম্যাকডোনাল্ডস “না” বলে দিয়েছে।) এবং বার্গার কিং এর প্রস্তাব সেই চারটি ব্র্যান্ড মেনে নিলো। এর নাম দেয়া হলো – দ্য পিস বার্গার

চারটি ব্র্যান্ডকে প্রস্তাব দিয়ে বার্গার কিং পত্রিকায় একটি খোলা চিঠি দেয়
সে প্রস্তাবে রাজি হয় ব্র্যান্ডগুলো
পিস বার্গার

তবে বার্গার কিং শর্ত জুড়ে দেয়, পিস বার্গার বানিয়ে বিক্রি করতে চাইলে আগে Peace One Day এ মোটা অংকের অনুদান করতে হবে। বাকীরা সেটাও মেনে নেয়। বিশ্ব শান্তি দিবসে এটি বিক্রি করার জন্য সারা আমেরিকাতে মোট ১০টা আউটলেট খোলা হল। মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়লো দ্য পিস বারগার খাওয়ার জন্য। বিক্রি হলো লাখ লাখ ইউনিট।

এই ক্যাম্পেইন-আইডিয়া যখন প্রিচ করা হয়, তখন বার্গার কিংয়ের তৎকালীন হেড অব ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বর্তমানে বার্গার কিংয়ের Global CMO) চোখ বুঝে এপ্রুভাল দিয়ে দেয়। এবং বার্গার কিংকে এপ্রোচ করারও আগে তারা আরোও ব্র্যান্ড নিয়ে ভাবে, যেমন এমএমসিজির ভেতর “কপসি” (Coke + Pepsi = Copsi) আর টেক জায়ান্টের ভেতর ’ইয়াহুগল’ (Yahoo + Google = Yahoogle). কিন্তু এনালাইজ করে দেখা যায়, ম্যাক হুপার-ই সবচাইতে বেশী উপযুক্ত এই ক্যাম্পেইনের জন্য।

ভীষণ সাড়া জাগিয়েছিল ক্যাম্পেইনটি

যা হোক, এই ক্যাম্পেইন কতটা সফল হয়েছিলো এবার সেটা বলি।

বিশ্বের ৩৭ টি দেশে এই ক্যাম্পেইনটি একযোগে রান করা হয়। এডভারটাইজিং দুনিয়ার অন্যতম সেরা পাবলিশিং AdWeek এই ক্যাম্পেইনকে “মাস্টারফুল” হিসেবে আখ্যায়িত করে।

  • Forbes বললো- Works on so many levels that I can hardly stand it.
  • Bloomberg বললো- Perfect Guerrilla Marketing.
  • CBS News বললো- Everyone is talking about this.

পুরো ক্যাম্পেইন ও এর ইমপ্যাক্ট নিয়ে আড়াই মিনিটের এই ভিডিও টিজারটি বানিয়েছে Y&R. এটা দেখলে আরো পরিষ্কার ধারণা পাবেন। মানে, বড় বড় মিডিয়া ব্র্যান্ডের প্রকাশিত টেস্টমোনিয়ালের কোন অভাব ছিলো না এই ক্যাম্পেইনের। এবার কিছু ফিগার দেখা যাক।

  • মিডিয়া ইমপ্রেশন- প্রায় ৯ বিলিয়ন।
  • আর্নড মিডিয়া- প্রায় ১৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
  • নতুন গ্রাহক পায়- ২৫%
  • বিশ্ব শান্তি দিবসের গনসচেতনতা বাড়ে- ৪০%
পুরো ক্যাম্পেইনের ইমপ্যাক্ট চমৎকারভাবে পড়ে বার্গার কিংয়ের উপর

এর ফলশ্রুতিতে, 2016 Cannes Lions International Festival of Creativity তে এই ক্যাম্পেইন ১৭টা লায়ন পায়, যার ভেতর থাকে ২টা Grand Prix, আর ২০১৭ সালে বার্গার কিং ”মার্কেটার অব দ্য ইয়ার” খেতাবে ভূষিত হয়। পুরো কেস স্টাডিটি সংক্ষেপে এবং ছোট ভিডিওসহ এই অ্যাড এজেন্সির অফিসিয়াল সাইটের এই পাতায় পাওয়া যাবে।

বার্গার কিংয়ের বিলবোর্ড 

বিলবোর্ডটা কোথায় বসানো হয়েছে খেয়াল করেন, একদম ম্যাকের সামনে! মানে ম্যাকের এড়িয়ে যাবার কোন রাস্তাই খোলা রাখেনি বার্গার কিং!

সূত্রঃ

প্রিয় পাঠক, আপনি এই গল্প থেকে কী কী শিখলেন তা কমেন্টের ঘরে জানাতে পারেন। তাতে করে আমাদের চোখে কিছু এড়িয়ে গেলেও সেটা হয়তো আপনার চোখে ধরা পড়বে, কমেন্টের মাধ্যমে সেটা আমরা এবং অন্য পাঠকরাও জানতে পারবেন।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন

আরও পড়ুন-


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা