আন্তর্জাতিক মাসিক স্বাস্থ্য দিবস বলে যে একটা দিন আছে, এটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। ফলে এক প্যাকেট প্যাড কিংবা দুটো ফুল নিয়ে গিয়ে কেউ কাউকে বলি না- হ্যাপি ‘মিনস্ট্রুয়াল হাইজিন ডে’...
মাহফুজা আঞ্জুম মৌ: ভালোবাসা দিবস কত তারিখে আমরা সবাই জানি। বন্ধু দিবস, গোলাপ দিবস এসবেরও খবর রাখি। এই বিশেষ দিনগুলোতে আমরা একে অপরকে উইশ করি। ভালোবাসা জানাই। কিন্তু আন্তর্জাতিক মাসিক স্বাস্থ্য দিবস বলে যে একটা দিন আছে, এটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। ফলে এক প্যাকেট প্যাড কিংবা দুটো ফুল নিয়ে গিয়ে কেউ কাউকে বলিনা হ্যাপি ‘মিনস্ট্রুয়াল হাইজিন ডে’। কারো ইনবক্সে মেসেজ আসে না- মাসিকের দিনগুলো নিরাপদ হোক, পাশে আছি।
যাইহোক, যারা জানেন না, তাদের জন্য জানিয়ে রাখি- ২৮ মে বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস। মাসিক ও মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেই প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয়। বাংলাদেশেও জাতীয় পর্যায়ে দিনটির আয়োজন করা হয়। সাধারনত মেয়েদের মাসিকচক্র হয় ২৮ দিন পর পর এবং তার স্থায়ীত্ব গড়ে ৫ দিন; তাই মাসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয় মে মাসের ২৮ তারিখে।
আমার ঘুম পেয়েছে! আমার ক্ষুধা লেগেছে! আমি লম্বা হয়ে যাচ্ছি! আমার একটা নতুন জামা লাগবে! মাথা-ব্যথা করছে! একজন মেয়ে হিসেবে এই কথাগুলো যত সহজে বলতে পারেন, আমার মাসিক হয়েছে; মাসিকের জন্য প্যাড লাগবে- এই কথাগুলো কি অত সহজে বলতে পারেন? পারেন না জানি। একজন মেয়ে হিসেবে আমি নিজেও মাসিক নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারি না। অথচ দেখেন, বিষয়টা কিন্তু সহজ করেই বলতে পারবার কথা ছিল। কারণ ক্ষুধা, তৃষ্ণা কিংবা মানুষের শরীরবৃত্তীয় অন্যান্য যে কোনো কার্যক্রমের মতোই মাসিকও স্বাভাবিক ও ন্যাচারাল একটি প্রক্রিয়া। কিংবা বলা যায়- শরীরবৃত্তীয় অন্যান্য প্রক্রিয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো মাসিক। কারণ, মিনস্ট্রুয়েশন সাইকেল না থাকলে মানুষ জন্মই নিত না।
অথচ, সেই আদিকাল থেকে মাসিককে ঘিরে আছে ভুল ধারণার এক দীর্ঘ দেয়াল। সেই দেয়াল জুড়ে আবার ঝুলে আছে স্পাইর্যাল অব সাইলেন্স এর টেরাকোটা। ধরি, কোনো মেয়ের জীবনকাল ৬০ বছর। সাধারনত ৮ থেকে ১৩ বছর বয়সে মেনারকি বা মাসিক-চক্র শুরু হয়। ৪৫-৫৫বছর গিয়ে মেনাপোজ বা মাসিক চক্র শেষ হয়। তাহলে একটা মেয়েকে জীবিত অবস্থায় প্রায় ৪০ বছর, মানে পুরোটা জীবন ধরেই, মাসিককে ফেস করতে হয়। এই ৪০ বছর মানে, ৪৮০ মাস। তার মধ্যে প্রতিমাসে গড়ে ৫ দিন করে যদি মাসিক স্থায়ী হয়, তাহলে মোট ২,৪০০ দিন মেয়েদেরকে মাসিকের সাথে সময় কাটাতে হয়।
এখন আপনি যদি মাসিককে অসুখ, লজ্জা, গোপনীয় এবং ভয়ের বিষয় বলে ভাবেন, তাহলে মেয়েদের জীবন থেকে এই ২,৪০০টি দিন জাস্ট হারিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বৃহত্তর পারস্পেক্টিভে নারীদের জীবনমান উন্নয়নের কথা চিন্তা করা এবং ক্ষুদ্র দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবারের নারী সদস্যটিকে ভালোবাসা কিংবা তাঁর প্রতি যত্নশীল হবার বিষয়টি কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে পড়ে! তাই, আসুন বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনামূলক ভাবনায় যাই। আলোচনার অভাবে মাসিক কেবলই মেয়েদের ব্যক্তিগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবারের কোনো মেয়ের মাসিক হলে বাড়ির কোনো পুরুষ মনে করে না সেই বিষয়ে তার জানার কোনো প্রয়োজন আছে, বাড়ির মহিলাদের দায়িত্ব সেটা ডিল করা। একজন বাবা, একজন ভাই এমনকি একজন স্বামী হিসেবে অধিকাংশ পুরুষই তার পাশের নারীর মাসিকের বিষয়ে থাকেন উদাসীন। মহিলারাও অনেক সময় নিজের কিংবা অন্যের মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। এর ফলাফল কিন্তু ভয়াবহ; দীর্ঘকাল মাসিক বিষয়ক নীরবতা এবং মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অজ্ঞতা একজন উদাসীন মানুষ হিসেবে আপনাকে যেকোনো দিন হাসপাতাল আর ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে দাঁড় করাতে পারে। বাবা-মা হিসেবে যেদিন জানবেন, আপনার মেয়েটার ইউটেরাস কিংবা ওভারির সিস্টিক্যাল প্রব্লেম হয়েছে দরকার অপারেশন; সেদিন কিন্তু আর চাইলেও দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না। স্বামী হিসেবে যেদিন জানবেন আপনি আর কোনোদিন বাবা হতে পারবেন না সেদিন আপনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে। তাই মাসিক নিয়ে নীরবতা ভাঙ্গুন। মাসিক বিষয়ে জানুন।
খুব সাধারন কয়েকটা কথা। যা না বললেই নয়। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের যে রকম কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়, গলার স্বর ভেঙ্গে যায়, লম্বা হয়ে যায়, গোঁফ গজায়। সেরকমই মেয়েদের কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়, সেই পরিবর্তনেরই একটা অংশ মাসিক। নির্দিষ্ট বয়সের পর, প্রতিমাসে নারীদেহে একটি করে ডিম্বাণু তৈরি হয়। পাশাপাশি জরায়ুর ভেতরে ভ্রূণের পুষ্টি সাধনের জন্য নরম রক্তে পূর্ণ একটি স্তর তৈরি হয়। সেখান থেকে গর্ভাবস্থায় শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে। যখন ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় না, তখন জরায়ুর অভ্যন্তরের নরম রক্তপূর্ণ সেই দেয়ালের স্তর ভেঙে যায়। ডিম্বাণুটিও নষ্ট হয়। ভেঙ্গে যাওয়া স্তর এবং অনিষিক্ত ডিম্বাণু রক্ত আকারে যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এর ফলেই মাসিক হয়। তবে, মাসিক হলেই একটা মেয়ে সন্তান ধারণের জন্য প্রস্তুত হয় না। সন্তান জন্ম প্রক্রিয়ায় জরায়ু ও শারীরিক পরিপক্বতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। যা বয়সের সাথে সাথে পরিপক্ব হয়ে থাকে।
মাসিকচক্রের প্রক্রিয়াটি সেনসিটিভ। কারণ মেয়েদের জননাঙ্গের সাথে এটি সম্পর্কিত। অথচ এই সেনসিটিভ বিষয়টিকে আমরা এড়িয়ে যাই কিছু কুসংস্কার ও ভুল ধারণার জন্য। মাসিক শব্দটা উচ্চারণ করতে লজ্জা পাই, ভুল তথ্য নিয়ে বেড়ে উঠি। ঋতু প্রকল্পের বেসলাইন সার্ভে ২০১৭’র তথ্য মতে, ৭৬ শতাংশ মেয়ে মাসিকের সময় শারীরিক বিভিন্ন এক্সারসাইজ করা থেকে বিরত থাকে। কারণ তারা শুনেছে যে এক্সারসাইজ বা খেলাধুলা করলে পেট ব্যথা করে বা ব্লাড ফ্লো বেশি হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কারো যদি ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে এক্সারসাইজ বা খেলাধুলা করলে, অনেক সময় ব্যথা কমে যায়। তবে ব্যথা অনেক বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মাসিকের সময় অনেক মেয়েকেই পরিবার থেকে সাদা খাবার যেমন- দুধ, ডিম এবং টক খাবার খেতে দেয়া হয় না। অথচ মাসিকের সময় শরীর থেকে যে পরিমান রক্ত বের হয়ে যায়, তার ঘাটতি পূরনে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খেতে হয়। এদিকে, মাসিকের সময় বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না এই কুসংস্কারের ফলে, শতকরা ৪০ জন মেয়ে মাসিকের কারণে প্রতিমাসে গড়ে ৩দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। এই অনুপস্থিতিই স্কুল থেকে ছাত্রীদের ঝড়ে পড়ার অন্যতম কারণ।
দেশের ২০ শতাংশেরও কম মেয়ে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মেনে চলে। তাঁর মানে বাকি ৮০ শতাংশ মেয়ে কোনও না কোনোভাবে জেনিটাল, ইউরিন ইনফেকশন এবং জরায়ুর ক্যান্সারের মতো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থেকেই যাচ্ছে। এখন একটা মেয়ে এই মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি জানতে পারবে কী করে যদি পরিবার, আমি, আপনি চুপ করে থাকি?
আমাকে কেউ কখনো মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে শেখায়নি। শেখাবে কে! আমার মা, বড় বোন তারাই তো জানতেন না বিষয়টা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন মেয়েরা সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আপনি চান আপনার মেয়ে পাইলট হোক, অ্যাস্ট্রোনাট হোক, শিক্ষিত হোক, স্বাধীন মানুষ হোক। আপনার মেয়ে, স্ত্রী, বোন কিংবা বন্ধু মেয়েটি পরে গিয়ে ব্যথা পেলে আপনি উদ্বিগ্ন হন। তাঁর মাথা ব্যথা করলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। তার পছন্দের জিনিসটা কিনে দিতে না পারলে আপনার রাতে ঘুম আসে না। তাহলে তাঁর জীবন থেকে যদি সেই ২,৪০০টি দিন হারিয়ে যায় আপনার অসচেতনতায়, যদি সে পিছিয়ে পড়ে অন্যদের থেকে, মা-বাবা হিসেবে তায় দায়ভার কিন্তু আপনার উপরেই বর্তায়।
মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে আগে বাড়ির টয়লেটটি মাসিকবান্ধব করে গড়ে তুলুন। পর্যাপ্ত পানি, আলো, টিস্যু, হাত ধোয়ার সাবান, ময়লা ফেলার ঝুড়ি ইত্যাদি আছে কিনা দেখুন। খবর নিন বাড়ির মেয়ের স্কুল/অফিসের টয়লেটটিও মাসিকবান্ধব কি না। দিনের বেশি সময় মেয়েরা স্কুলে বা অফিসে থাকে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বেসলাইন সার্ভের তথ্য মতে, মাসিকবান্ধব টয়লেট না থাকায় অনেক মেয়ে স্কুলে থাকাকালীন দীর্ঘ সময় প্যাড/কাপড় পরিবর্তন করে না। যেখানে ৪-৫ ঘন্টা পরপর প্যাড/কাপড় বদলাতে হয়। যদি সামর্থ্য থাকে, মাসিকের সময় বাড়ির নারী সদস্যদেরকে প্যাড কিনে দিন। তা নাহলে পুরনো কাপড় ব্যবহার করলে সেটা ভালোভাবে ধুয়ে, রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করতে হয়। একটা কাপড় বেশিদিন ব্যবহার করা যায় না। এই তথ্যগুলো তাকে জানান। জানতে চান মাসিকের দিনগুলোতে তাদের কী প্রয়োজন। এ সময় পেটে ব্যথা, শারীরিক দূর্বলতা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এর বাইরে, হরমোন্যাল চেঞ্জের কারণে মেয়েদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অনেকে প্রচন্ড আবেগী হয়ে পড়ে। ভয় পেয়ে যায়।
তাই মাসিকের দিনগুলোতে, যদি কাছের মানুষ কেউ পাশে না থাকে তাহলে, কিশোরী বয়সেই অনেকে বিষণ্ণতায় ভুগতে শুরু করে। তাই মাসিক হলে মেয়েদেরকে একা বা এক ঘরে না করে, মাসিকচক্র মনে রাখার অ্যাপ আছে, সেটা ব্যবহার করে দিনটি মনে রাখুন স্পেশ্যাল কেয়ার ডে হিসেবে।
বাড়ির নারী সদস্যরা অনেক সময় মাসিকের ব্যাপারে একে অপরের খেয়াল রাখেন, কিন্তু তারা নিজেরাও অনেক কিছু জানেন না। এছাড়া অনেক পরিবারেই ডিসিশন মেকিং এর দায়িত্ব থাকে পুরুষদের উপরে। তাই, পরিবারের পুরুষ সদস্যকে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। কথা বলতে হবে মাসিক নিয়ে। একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক কিংবা পারিবারিক ভালোবাসার জায়গাটা থেকে হলেও এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। গার্মেন্টস সেক্টরের অধিকাংশ মেয়ে কারখানার মেঝেতে পড়ে থাকা ময়লা কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করে মাসিকের সময়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকেই আছে পুরনো কাপড়ে বালি ভরে সেটা ব্যবহার করে। অনেকেই অপরিস্কার তুলা ব্যবহার করে। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। ফলাফল- জরায়ু মুখ ফুলে যাওয়া, জরায়ুর টিউমার ও জরায়ু ক্যান্সারের মতো অসুস্থতা।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার পাশের মানুষটি- মেয়ে, বোন, স্ত্রী, মা, প্রেমিকা তাকে নিয়ে ভাবুন। মাসিকের দিনগুলোতে তাদের পাশে থাকুন। যত্ন নিন। নিজে যে তথ্য জানেন অন্যকেও তা জানান। চায়ের দোকানে রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে যেমন কথার ঝড় তোলেন, তেমনি মাসিক নিয়েও আলাপ করুন। আপনার তথ্য পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখার পাশাপাশি, হয়তো একদিন দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর কাছেও পৌঁছাবে। মাসিককে ঘিরে অবহেলা আর অস্বাস্থ্যকর সব চিত্র পালটে যাবে। প্রতিটি মেয়ের জীবনে মাসিক আসবে ভাবনাহীন স্বাচ্ছন্দ্য হিসেবে।
এবারের মাসিক স্বাস্থ্য দিবসে, এটাই হোক আমাদের প্রথম পদক্ষেপ- পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখা, মাসিক বিষয়ক কুসংস্কার দূর করে মেয়েদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সামিল হওয়া। আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করি, তাহলে একদিন মাসিক বিষয়ক কুসংস্কার দূর হবে, মাসিক বিষয়ক শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়বে, মেয়েদের জন্য নিরাপদ মাসিক পণ্যের ব্যবস্থা করতে পারবো। পরিবর্তনের শুরু হোক; আজ, এখন থেকেই। হ্যাপি মিন্সট্রুয়াল হাইজিন ডে।
ফিচার্ড ইমেজ কৃতজ্ঞতা- A Girl With Her Dark Circles ফেসবুক পেজ।