সৃজিত-তাহসানরা একে অন্যকে শ্রদ্ধা করতে জানেন, আমরা জানি না...
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ভালোবাসাটা সত্যিকারের হলে দূরে থেকেও যে শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা যায়, সেটা তাহসান-মিথিলা দেখিয়ে দিয়েছেন, সেটা থেকে আমরাই শুধু শিক্ষা নিতে পারি না কখনও...
প্রথম আলোতে সৃজিতের সাক্ষাৎকার পড়লাম। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে সৃজিতের কথা শুনলাম। দুই জায়গাতেই তাহসানকে নিয়ে তার কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে মুগ্ধতা, একনিষ্ঠ ভক্তের মতো তাহসানের তারিফ করে গেলেন তিনি। সৃজিতের এই দুটো ইন্টারভিউ সবার দেখা উচিত। অন্তত সৃজিত, মিথিলা এবং তাহসানকে নিয়ে যারা ক্রমাগত নোংরামি করে চলেছে, তাদের তো অবশ্যই দেখা উচিত, পড়া উচিত।
তাহসানকে নিয়ে সৃজিতের মধ্যে অপার মুগ্ধতা, তাহসান-মিথিলার মেয়ে আয়রাও সৃজিতকে ভীষণ পছন্দ করে। তাহসানকে নিয়ে সৃজিত বলছিলেন-
'তাহসান আমার থেকে অনেক গুণী মানুষ। এত সুন্দর গান, এত সুন্দর পিয়ানো বাজান, এত সুন্দর অভিনয় করেন। ডেফিনেটলি আমি খুবই লাকি যে এ রকম একটা কম্পারিজন উঠেছে, সেখানে তাহসান আবার রিপ্লাইও দিয়েছেন।'
‘আমাকে বলতেই হবে যে, তাহসান একজন নিপাট ভদ্রলোক। ওনার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। এই পরশু দিনই আমাদের দেখা হলো যখন তাহসান এসেছিলেন আইরাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে। তো খুব কথা হলো, আড্ডাও হলো। আমার এত ভালো লাগল। মিথিলা এবং তাহসানের ভালো মানুষ হওয়ার ফসলই বোধহয় আয়রা। আমি জানি না এই সম্পর্কটা বাংলাদেশের মানুষ বুঝবেন নাকি বুঝবেন না। তবে আমি সত্যিই তাহসানকে খুব পছন্দ করি।'
আমাদের চোখে তাহসান-মিথিলা ছিলেন ড্রিম কাপল, আদর্শ বললেও ভুল হবে না। কিন্ত দুজন মানুষ ভালো হলেই যে তারা সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে পারবেন, এমন কোন কথা নেই। মতের মিল না হতেই পারে, মিথিলা আর তাহসানেরও হয়নি। একটা পর্যায়ে তারা আলাদা হয়েছেন, সম্পর্কটা শেষ করেছেন, তবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে লিপ্ত হননি, অভিযোগের তীর ছুঁড়ে মারেননি একে অন্যের দিকে। পারস্পরিক সম্মানটা বজায় রেখেছেন তারা, নিজেদেরকে রেখেছেন শ্রদ্ধার আসনে।
তাহসান, মিথিলা দুজনেই উচ্চশিক্ষিত, মানসিকভাবেই ভীষণ পরিপক্ক। কিন্ত আমাদের দেশের নব্বই শতাংশ মানুষেরই সেই শিক্ষাটা নেই, নেই বিবেকবোধ। তাই তারা নোংরামিতে লিপ্ত হয়েছে এই দুজন মানুষকে নিয়ে। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই সমীকরণে যখন ভারতীয় পরিচালক সৃজিত মূখার্জির আবির্ভাব হলো, তখন তো এসব লোকজনের পোয়াবারো অবস্থা! মিথিলা কেন সৃজিতকে বিয়ে করবেন, সেটা নিয়ে তাদের কত আপত্তি!
লোকজন কল্পিত কত সমীকরণ তারা বসানোর চেষ্টা করেছে, অনলাইনে একের পর এক নোংরামির আসর বসেছে। শিল্পী অনুপম রায় সৃজিত-মিথিলার বিয়ের দিন একটা ছবি আপলোড দিয়েছিলেন, নোংরা কমেন্টের কারণে শেষমেশ তিনি কমেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন! মিথিলার ছবি নিয়ে নোংরামি হয়েছে, একটা পর্যায়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। নিজের কাজটা না করে মানুষজন অন্যের পেছনে লেগে যে জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে, এমন নমুনা শুধু এদেশেই দেখা যায়।
অথচ মিথিলার নতুন সম্পর্ক নিয়ে তাহসানের কোন আপত্তি নেই, সৃজিতের সঙ্গেও তার দারুণ সম্পর্ক, সেই সম্পর্কে সম্মান আছে, শ্রদ্ধা আছে। সেই শ্রদ্ধাবোধটা আমাদের মধ্যে নেই, হয়তো কখনও আসবেও না। আমরা তাহসানের পক্ষ নিয়ে মিথিলাকে গালিগালাজ করি, আমরা ভাবি তাতে বুঝি তাহসানকে ভালোবাসা হলো! এটা যে নিকৃষ্ট পর্যায়ের নোংরামি, সেটা আমাদের মাথায় ঢোকে না। ভালোবাসাটা সত্যিকারের হলে দূরে থেকেও যে শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা যায়, সেটা তাহসান-মিথিলা দেখিয়ে দিয়েছেন, সেটা থেকে আমরাই শুধু শিক্ষা নিতে পারি না কখনও...