সাকিবকে এভাবে রামদা উঁচিয়ে, গালাগালি করে হুমকি দেয়ার ইচ্ছে অনেকেরই ছিল, মহসিন সেটা করে দেখিয়েছে। যারা করতে পারেনি, তারা এখন মহসিনকে সাপোর্ট দিচ্ছে, তার মুক্তি চাইছে...

ফেসবুক লাইভে এসে রামদা উঁচিয়ে সাকিব আল হাসানকে হত্যার হুমকি দিয়ে মোটামুটি তোলপাড় ফেলে দিয়েছে সিলেটের মহসিন তালুকদার। র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে সে, মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে ক্ষতি যা হবার এর আগেই হয়ে গেছে। কোন দোষ না করেও ভিডিওবার্তায় ক্ষমা চেয়েছেন সাকিব, বলেছেন, কাউকে আঘাত দিয়ে থাকলে তিনি দুঃখিত। বিসিবির পক্ষ থেকে সাকিবের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, গতকাল তিনি অনুশীলনে গিয়েছেন গানম্যানকে সঙ্গে নিয়ে। মনে হচ্ছিল, সাকিব আসলে ঢাকায় নন, লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছেন, যেখানে প্রতি পদে পদে মৃত্যুর ভয়, প্রতি মুহূর্তে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক বিরাজ করে! 

এরচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের ইমেজের। সাকিবকে দেশের ক্রিকেটের একমাত্র ইন্টারন্যাশনাল সুপারস্টার বলা যায়। নিজের দেশেরই একজন মানুষ তাকে এভাবে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় সাকিব ভিডিওবার্তায় ক্ষমা চাইছেন- গোটা বিষয়টা আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে কাভারেজ পেয়েছে খুব ভালোভাবেই। বাংলাদেশের 'অসাম্প্রদায়িক' রূপটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তাই। দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারের সাথে বাংলাদেশীরা এমন নির্মম আচরণ কিভাবে করতে পারলো- উঠেছে সেই প্রশ্নও। 

এতকিছুর মূলে মহসিন তালুকদার নামের যে মস্তিষ্কবিকৃত লোকটা, তার পক্ষে কথা বলার মানুষেরও কিন্ত অভাব নেই। ফেসবুকে তার গ্রেপ্তারের সংবাদগুলোর কমেন্টবক্সে চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। দলে দলে লোকজন তার মুক্তি চাইছে, কারন সে নাকি ইসলামের পক্ষে কথা বলেছে, সাকিবকে এভাবে হুমকি দেয়াটাই নাকি ঠিক হয়েছে, হত্যার হুমকি না দিলে সাকিব 'অনুতপ্ত' হয়ে ক্ষমা চাইতো না। সাকিব ক্ষমা চাওয়ায় দেশবাসী যেমন তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে, সাকিবও যাতে সেভাবে মহসিন তালুকদারকে ক্ষমা করে দিয়ে তার মুক্তির ব্যবস্থা করেন- এই হচ্ছে তাদের আর্জি! কয়েকজন তো মহসিনের মুক্তির জন্য ফেসবুকে ইভেন্ট খোলার প্রস্তাবও দিয়েছে! 

প্রশ্ন হচ্ছে, সাকিবকে ক্ষমা করার 'গুরুদায়িত্ব' আপনাকে কে দিয়েছে? সাকিব কোন অপরাধ করেননি, তবুও বিতর্ক এড়াতে তিনি আগেভাগে ক্ষমা চেয়েছেন, বিষয়টা মিটমাট করে নিতে চেয়েছেন। আপনি ফেসবুকের ব্যাকটেরিয়া, গুজবে বিশ্বাস করে চিলে কান নেয়ার খবর শুনেই চিলের পেছমে দৌড় লাগিয়েছেন, কানে হাত দিয়ে দেখার সময় পাননি কানটা জায়গামতো আছে কিনা। মহসিন নামের লোকটা জঘন্য একটা অপরাধ করেছে, যে অপরাধের কারনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পর্যন্ত বাংলাদেশের দুর্নাম হয়েছে। সাকিব আর মহসিনকে এক পাল্লায় মাপার মতো ভণ্ডামি আপনি করতে পারছেন মানে আপনার মাথায় মগজের জায়গায় গোবর ঢুকিয়ে রাখা আছে, বিবেক বলে কোন বস্তু নেই আপনার মধ্যে, বিবেচনাবোধের প্রসঙ্গ নাহয় বাদই দিলাম। 

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মহসিন তালুকদার

মহসিনের মুক্তি দাবী করছে, এরকম কয়েকজনের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুঁ দিলাম। শিক্ষিত লোকজনও আছে এর মধ্যে, নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র‍্যাজুয়েশন করেছে, ভালো জায়গায় চাকরিও করছে কেউ কেউ। অনেকের প্রোফাইলে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছবি আছে, স্ত্রী-সন্তান বা বাবা-মা-ভাই-বোনের সঙ্গে ছবি ঝুলছে কভার পিকচারে। সেটা দেখে মনে প্রশ্ন।জাগলো, মহসিন তালুকদারের এই নিকৃষ্ট আচরণ দেখার পরেও এরা কি করে তার মুক্তি চায়? খুনের হুমকি একপাশে সরিয়ে রাখলাম, মহসিন যে ভাষায় সাকিবকে বাবা-মা তুলে গালাগালি করেছিলেন, সেটা কি মেনে নেয়ার মতো ছিল? যারা মহসিনের মুক্তি চাইছেন, তাদেরকে এভাবে কেউ গালাগালি দিলে তারা তাকে ক্ষমা করতে পারবেন? নাকি তাদেরই শুধু পরিবার আছে, পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা আছে, আর কারো সেটা থাকতে নেই? 

একদল দাবি করছে, মহসিন নাকি ইসলামের জন্য কাজ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে, তাই তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া উচিত! অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, মহসিনের মতো মানসিকতার কুলাঙ্গার লোকগুলোর জন্য ইসলামের বদনাম হয়, মুসলমানদের অন্য ধর্মাবলম্বীরা ভয়ের দৃষ্টিতে দেখে। ইসলাম কখনও চাকু-ছুরি-রামদা উঁচিয়ে ধর্ম কায়েম করতে বলেনি। সাকিবকে এভাবে রামদা উঁচিয়ে, গালাগালি করে হুমকি দেয়ার ইচ্ছে অনেকেরই ছিল, মহসিন সেটা করে দেখিয়েছে। যারা করতে পারেনি, তারা এখন মহসিনকে সাপোর্ট দিচ্ছে। ইসলামের জন্য মহসিন আর তার সমর্থক গোষ্ঠী- দুটোই ভয়ংকর। কারন এরা শান্তি বোঝে না, বোঝে ঘৃণা। 

কেউ কেউ বলছে, দেশে এত অপরাধ হয়, লুটপাট হয়, শেয়ার বাজারের টাকা গায়েব হয়ে যায়, ব্যাংকের ঋণখেলাপিরা মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ায়, আর গ্রেপ্তার হয় শুধু মহসিন। এরকম বাণী যারা দিচ্ছে, এই লোকগুলোকে চিনে রাখুন। এরাও মহসিনের মতোই ভয়ংকর। লজিক্যাল ফ্যালাসি দিয়ে এরা মহসিনের দুস্কর্মকে হালাল করে ফেলার চেষ্টা করছে। মহসিনের অপরাধ মোটেও লঘু কিছু নয়, এই লোকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার, যাতে এমন অপকর্ম ভবিষ্যতে কেউ করার আগে মনের মধ্যে মহসিনের পরিণতির কথা ভেবে আতঙ্ক জেগে ওঠে। আর সেখানে কিনা এরা এই অমানুষটার মুক্তি চাইছে? মহসিনের সমগোত্রীয়, সম-মানসিকতার লোক না হলে এমন কাজ কারো করার কথা নয়। 

আমাদের কথা পরিস্কার- ইসলাম কখনও কট্টরপন্থাকে স্থান দেয়নি, দেবেও না। আপনি রামদা উঁচিয়ে কাউকে ধর্ম পালনে বাধ্য করতে পারেন না, তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে পারেন না। যদি করেন, সেটা হবে জঙ্গিবাদী ইসলাম, মহানবীর প্রতিষ্ঠিত শান্তির ইসলাম নয়। মহসিনরা ইসলামের শত্রু, মুসলমানদের শত্রু, মানবতার শত্রু। মহসিনদের বিচার দাবী না করে যারা তার মুক্তি চায়, এরাও ইসলামের শত্রু, সুযোগ পেলে এরা মহসিনের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা