টাকা দিয়েও যে জাদুঘর বানানো যেতে পারে, ভেবেছেন কখনও? ঢাকার মিরপুরেই কিন্ত এমন একটি জাদুঘর আছে, যেখানে ঢুকলেই আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য একটি জগতে! বলে রাখা ভালো, এন্ট্রি ফি কিন্ত সবার জন্যেই ফ্রি...

এটি দেশের প্রথম ডিজিটাল জাদুঘর। নেই কোনো প্রবেশ মূল্য। এখানে এক অদ্ভুত মজার ব্যাপার আছে। আচ্ছা, কেমন হয় যদি টাকার মধ্যে আপনার নিজের বা প্রিয় মানুষের ছবি থাকে? তাও আবার এক লক্ষ টাকার স্মারক নোটে! এমনটা সম্ভব কেবল যদি আপনি টাকার জাদুঘরে যান। মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে আপনি ১ লক্ষ টাকার স্মারক নোটে আপনার কিংবা আপনার প্রিয় কারো ছবি বসিয়ে নিতে পারবেন। ইন্টারেস্টিং না ব্যাপারটা? 

হ্যাঁ, টাকা ব্যাপারটাই আসলে ইন্টারেস্টিং। টাকা এমন এক জিনিস যার কোনো ধর্ম নাই, যে সবাইকে খুশি করতে পারে। টাকার আছে মন ভালো করে দেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা। পকেটে টাকা থাকলে মনের জোরটাও বেশি থাকে। নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মনে হয়। এই টাকা মানুষকে হাসায়, কাউকে কাঁদায়, কাউকে খুব টেনশনে রাখে, কাউকে হতাশও করে। টাকা এক বিচিত্র আবিষ্কার। 

আমাদের বাংলাদেশের টাকা সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? আজকের দিনে সবচেয়ে বড় ১ হাজার টাকার নোট দেখা মানুষ আপনি, কিন্তু এই এক হাজার টাকা পর্যন্ত টাকার বিবর্তন কি করে হলো, একদম শুরুতে আমাদের দেশে কেমন ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিল- তা নিশ্চয়ই আপনার খুব ভাল জানা নেই। আমারও নেই। সমস্যা নেই, টাকার জাদুঘর তো আছে। এখানে গেলেই জানা যাবে ও দেখা যাবে হরেক রকম মুদ্রা।

টাকার জাদুঘর, ঢাকা

আপনি যদি টাকার জাদুঘরে যেতে চান, আপনাকে যেতে হবে মিরপুর - ২ এ। বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেইনিং একাডেমির ভবনের দ্বিতীয় তলাজুড়ে টাকার জাদুঘরের অবস্থান। ২০১৩ সালে ৫ অক্টোবর এই জাদুঘরটির যাত্রা শুরু। এখানে বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টাকার জাদুঘর খোলা পাবেন। তবে শুক্রবার দিন খোলা থাকে বিকেলের দিকে। বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা। কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। একদম ফ্রিতেই আপনি টাকার জাদুঘরে পা ফেলতে পারবেন।

ভেতরে ঢুকেই আপনি অবাক হয়ে খেয়াল করবেন, আপনি এক অন্য জগতে এসে গেছেন। এ জগত টাকার জগত। দেয়ালে থরে থরে সাজানো টাকা। আছে ধাতব মুদ্রাও। এদের এখন চল নেই বলে মূল্য নেই। আবার এদের মূল্য অনির্ণেয়। কারণ, এই মুদ্রাগুলো এখন এন্টিক ভ্যালুর দিক থেকে অনেক দামী। তারচেয়ে বড় কথা, দেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে এই এন্টিক মুদ্রাগুলো। এদের দেখে বিবর্তনটা কিছুটা বোঝা যায়- কোথায় ছিলাম আমরা, কোথায় এসেছি। 

এই জাদুঘরটি মূলত দুইটি গ্যালারিতে সাজানো হয়েছে। প্রথম গ্যালারিতে সাজানো আছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো ছাপা মুদ্রা। এ মুদ্রার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, কতগুলো প্রতীকের ছাপ। সাধারণ রুপা দিয়ে তৈরি এ মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। বাংলাদেশের মহাস্থানগড় ও নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বরে পাওয়া গেছে এ ধরনের অনেক মুদ্রা। ভাবুন একবার, কত প্রাচীন মুদ্রাও এখানে সংরক্ষিত আছে!

টাকার জাদুঘর

শুধু তা-ই নয়, এখানে আছে গুপ্তযুগের মুদ্রা, গুপ্তযুগ-পরবর্তী বাংলার মুদা, খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে নবম শতক পর্যন্ত হরিকেল রাজ্যে প্রচলিত রৌপ্য মুদ্রা এবং প্রাচীনকাল থেকে উনিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাংলায় ধাতব মুদ্রার পরিবর্তে ব্যবহৃত কড়িসহ বিভিন্ন যুগের মুদ্রা। আর বর্তমানে প্রচলিত দেশি মুদ্রা তো পাবেনই। বিভিন্ন উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দিনে প্রকাশিত স্মারক মুদ্রাগুলোও এখানে সংরক্ষিত আছে। দ্বিতীয় গ্যালারিতে ফটো কিয়স্ক ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দেখা মিলবে। 

এখানে ১২০টির অধিক দেশের মুদ্রা কেমন দেখতে - তা আপনি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবেন। যেহেতু জাদুঘরটি ডিজিটাল, এখানে আপনি টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে মুদ্রা ও নোট সম্পর্কিত বিভিন্ন ইতিহাস জানতে পারবেন অনায়াসে। এই জাদুঘরের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুদ্রা কিংবা নোট মূলত উপহার হিসেবে এসেছে সংগ্রাহকদের কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এখানে মুদ্রা উপহার দিয়েছেন। মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী নামে একজন আছেন, যিনি একাই জাদুঘরকে উপহার দিয়েছেন ১ হাজার ১৮০টি মুদ্রা। তার উপহারের মধ্যে আছে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাও!

ইন্টারেস্টিং একটি দৃশ্য আপনার চোখে পড়বে, জাদুঘরের মূল ফটকে প্রবেশ করার পথে। আপনি এখানে দেখতে পাবেন, টাকার গাছ! ভবনের গায়ে গাছের রুপে স্টিলের কাঠামোতে এখানে একটি শিল্পকর্ম স্থাপিত হয়েছে। এই কাঠামোতে সাজানো আছে বিভিন্ন সময়ের মুদ্রার কপি। টাকার গাছ যে 'অবাস্তব' কিছু নয়, অন্তত সেটা নিজের চোখে দেখে আসতেও একবার হাজিরা দিতেই পারেন, এই ঢাকার টাকার জাদুঘরে!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা