মুহম্মদ নিজে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সরনাপন্ন হয়ে বুঝিয়ে গিয়েছিলো রোগ শোক হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান মানে না। রোগের চিকিৎসা ঝাড় ফুক দোয়া পানি পড়া না। এসব যারা বলে তারা সত্যকারের ধর্ম চর্চাকারী হতে পারে না, তারাই ধর্মের বড় শত্রু।
বাতেন মোহাম্মদ: আর একদিন পর রমজান।। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটা একটা পবিত্র মাস। তবে এইমাসের লৌকিক আচরন থেকেও সাম্যের যে অসাধারন শিক্ষা আছে সেটা দিন দিন আচারের আতিশায্যে হারিয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় আইনকে সাম্য,ন্যায়বিচারের টুল হিসাবে দেখতেই বেশি আগ্রহী। এইসব লৌকিকতা, অলৌকিকতা সম্বলিত ধর্মের আবেদন সাধারনের কাছে যেভাবেই গৃহীত হোক চূড়ান্ত বিচারে সমাজে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মীয় আইনকে সাংঘর্ষিক হিসাবেই উপস্থাপন করছে।
মুহাম্মদের (সাঃ) সমাজ সংষ্কারের ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার যে অংগীকার সেটা বর্তমান মুসলমানরা কতটুকু নিতে পেরেছে সেই প্রশ্ন তোলা যৌক্তিক। মুহাম্মদের প্রথম স্ত্রী খাদিজা একজন বিধবা এবং তার চেয়ে বেশি বয়স্ক ছিলো। এখনকার মুসলিম রা বহুবিবাহের প্রশ্ন আসলে মুহম্মদের উদাহরন নিয়ে আসে কিন্ত মুহম্মদের বিধবা বিবাহের যে যুগান্তকারী সমাজ সংষ্কারের শিক্ষা আছে, সেটা নেয় না। সতিচ্ছেদ খুজে। বিধবার কি সতিচ্ছেদ ছিলো?
মদীনা সনদের উপর নিজ হাতে বিসমিল্লাহ কেটে দিয়ে মুহম্মদ যে শিক্ষা দিলেন, তা হলো যে সংবিধানের ধর্ম নাই। সংবিধান রাষ্ট্রের সব নাগরিকের, সব ধর্মের মানুষের দুনিয়াবী কন্ট্রাক্ট। এটা কোরান না যে বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করতে হবে। আমরা রাজনৈতিক ইভিল মাইন্ডসেট থেকে সংবিধানে বিসমিল্লাহ লাগাইলাম, চেয়ার টেবিল কে ধার্মিক বানাইলাম, রাষ্ট্রের মত বায়বীয় জিনিসের ধর্ম দিলাম। রাষ্ট্রের নাকি ধর্ম ইসলাম? রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি? রাষ্ট্র ধর্ম দিয়ে সবাই বেহেশতে চলে যাবো, তাই মনে মনে ভেতরে ভেতরে স্বপ্ন দেখি দুনিয়াবী হুর ঐশ্বরিয়াকে।
আমি শুধু দুইটা খুব কমন উদাহরন বললাম। এমন হাজার হাজার উদাহরন আছে। মুহম্মদ অন্যতম একজন সমাজ সংষ্কারক ছিলেন। তার টিচিং না নিয়ে শুধু ইয়া নবী সালামুয়ালাইকা মিলাদ পড়লে দুনিয়াবী আর আখেরাতের কি লাভ হবে জানি না, তবে মিলাদ শেষে গৃহ কর্তা ১০০ টাকা সালামী দিবে এটা জানি।
অন্য ধর্ম প্রচারক থেকে মুহম্মদ ভিন্ন। কারন বাকীরা শুধু ডিভাইন এন্টিটি নিয়ে বলেছে। তারা শাসক হিসাবে আবিভূর্ত হয় নাই। এমনকি গৌতম রাজত্ব ছেড়ে পরে ধর্ম প্রচারক হইছে। সেই অর্থে মুহাম্মদ ভিন্ন কারন সে কঠিন একটা রিস্ক নিছে শাসনের নামে। শাসনতন্ত্র অত্যন্ত জটিল একটা কাজ। ডিভাইন ল দিয়ে ন্যায় বিচার সাম্যের কথা বলা সোজা কিন্ত রিয়েল লাইফ শাসনে এক্সিকিউট করা কত কঠিন সেটা একজন সোশ্যাল সায়েন্স ছাত্র হিসাবে একটু বুঝি। অনেক পক্ষ, প্রতিপক্ষ এবং অনুচর তৈরি হয়। সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেনী তৈরি হয়। এইসব সমস্যা অন্যান্য ধর্ম প্রবক্তা ফেস করে নাই কিংবা এটার জটিলতা বুঝতে পেরে এড়িয়ে গিয়েছিলো। মুহম্মদ এই কঠিন কাজটা করেছে, এবং বলা যায় সফলতার সাথে করেছে। এইটা নিয়ে আলোচনা নাই। আলোচনা হচ্ছে মিষ্টি খাইতো কিনা, বিয়ে কয়টা করছে, সহবাসের আগের গোসল করবে নাকি পরে গোসল করবে এইসব নিয়ে। যেটা পালন করা কঠিন সেইটাতে নাই যেটা করলে নিজের সুবিধা হয় সেটা জোর গলায় বলে নিজের ফায়দা নিতে গিয়ে ধর্মকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি?
মুহম্মদ নিজে যুদ্ধ করেছে। এ-ই যুদ্ধ মানে অন্য ধর্মাবলম্বীকে কতল করার টিচিং না। এ-ই যুদ্ধ মানে মানুষের নিজের আত্মরক্ষার অধিকার। মুহম্মদ ন্যায় নীতির কথা বলায় যখন তাকে আঘাত করতে আসে তখন তিনি আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছেন। এটার আরেকটা টিচিং হচ্ছে যুদ্ধ মানব ইতিহাসের এক অনিবার্য উপাদান, এ-ই সত্য মেনে নেয়া। অর্থাৎ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় বিপ্লব, যুদ্ধ এড়ানো যায় না। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান একি কথাই বলে, বিপ্লব ছাড়া রাষ্ট্রের গতি মন্থর হয়ে যায়। কিন্ত মুহম্মদ বলে নাই নিরপরাধদের কতল করতে, মুহম্মদ বলে নাই অন্য ধর্মাবলম্বীদের মারতে। বরং বিদায় হজ্বের ভাষনে সব ধর্মের সহবস্থানের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে গেছে, আর মদীনা সনদে সেটাতো সাংবিধানিকভাবেই আছে।
খুব মনযোগ সহকারে দেখলে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার গোড়াপত্তন মুহম্মদের দর্শনে আছে। সংবিধান (মদীনা সনদ), যাকাত ও জিজিয়া কর (রেভিনিউ সিস্টেম), গর্ভনেন্স শিফটিং (নির্দিষ্ট সময় পরপর শাসক পরিবর্তন হওয়া)। মুহম্মদ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে নাই। যারা বাপের পরে পোলা এমপি হয়ে ইসলাম বলে চিল্লায় সেখানে কোথায় ইসলামের টিচিং? পীরের পোলা পীর হয়। এর মত ভন্ডামী আর কি হতে পারে?
মুহম্মদের মেয়ে ছিলো, স্ত্রী ছিলো তাদের কাছে ক্ষমতা উইল করে দিয়ে যায় নাই। অনেকে বলবে আবু বকর তার শ্বশুর আর বাকী তিন খলিফা তার আত্মীয়, যদিও উমর তার খুব কাছের আত্মীয় না। তবে এ-ই ব্যবস্থা মুহম্মদ জীবিত থাকাকালীন বলে যায় নাই। মৃত্যুর আগে মুহম্মদ বলে যায় নাই আবুবকর তার রিপ্লেসমেন্টে রাজ্য চালাবে। বরং বয়োজেষ্ঠ্য হিসাবে তখন সর্বসম্মতিক্রমে তাকে খলিফা বানানো হয়েছিলো। যদিও খেলাফত নিয়ে ক্যু, পাল্টা ক্যু, শিয়া -সুন্নী বিভক্তি অনেক ইতিহাস আছে। মুহম্মদ থাকাকালীন এসব হয় নাই। তার অনুসারীরা তার টিচিং না নিতে পেরে এসব করছে।
এমনকি কথায় কথায় এখন যারা কোরানের ব্যাখা নিজের মত দেয়, বলে কোরানে এভাবে লেখা আছে মানে এভাবেই হবে,কিন্ত কোরান কয়েকবার সংষ্কার হয়েছে এ-ই ইতিহাস মাথায় নেয় না। কোরানে জের জবর পেশ এগুলো পরে যোগ হয়েছে মুহম্মদের মৃত্যুর পর। গ্রামাটিকালি কোরান কয়েকবার সংষ্কার হয়েছে। এসব জানতে হবে। পড়তে হবে। কোরান জীবন বিধান এটা মেনে নেয়া আর সেটাকে বৈজ্ঞানিক প্রমান করতে গিয়ে বিজ্ঞানের সত্য খোজার প্রক্রিয়ার সাথে সংঘর্ষ বাধানো একপ্রকার মূর্খতা। কোরান যদি অবশ্য পালনীয় আইন হয় তাহলে সেটার মধ্যে বিজ্ঞানের মত এক্সপেরিমেন্টাল ব্যাপার খোজা কতটুকু যৌক্তিক?
বাদশাহ ফয়সলের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য চিকিৎসক মরিস বুকাইলি কোরানকে বিজ্ঞান প্রমান করতে গিয়ে যে বই লিখেছিলো মাথামোটা মুসলমানরা বুঝে না বুঝে সেই গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে সেই কুপমুন্ডকতায় আটকে থাকে। একধরনের ফলস সুপরিয়রিটিতে ভোগে, আহা কোরান কত বিজ্ঞান ময়?? আরে ভাই সেটা মরিস বুকাইলিকে কেন বলা লাগছে? তুমি গবেষনা করে বের কর নাই কেন?? কারন তুমি অন্ধ।। তুমি ধর্মান্ধ। তাই অন্যরা কিছু আবিষ্কার করলে তারপর খুজতে বসে যাও কোন আয়াত দিয়ে ভুল ভাল ব্যাখা দিয়ে আরো অনেক মানুষকে বোকা বানিয়ে ফায়দা নিবা।। অন্যের কোন আবিষ্কারের সাথে তুলনা না করে নিজে গবেষনা করে আবিষ্কার করে তারপর ঘোষনা দাও কোরানের এ-ই আয়াত থেকে এইটা আবিষ্কার করছো। আইনকে আইনের জায়গায় রেখে বিজ্ঞান চর্চা কর মুক্তমনে। গভীরভাবে দেখলে কোরান আর বিজ্ঞান সাংঘর্ষিক না। দুটোই দুইভাবে চরম সত্যকে খোজার প্রক্রিয়া।।
ধর্মে দুইটা ব্যাপার থাকে, একটা ডিভাইন আরেকটা মানডেইন। ডিভাইন মানে স্পিরিচুয়ালিটি আর মানডেইন মানে দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে ন্যায় বিচার সাম্য, সহবস্থান, কর্ম এগুলো চালানো। মানে পার্থিব। এ-ই দুটার মধ্যে ট্রাঞ্জিশন টা খুব ইলুসিভ। আমরা মানডেইন আর ডিভাইনের মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেটা বুঝতে হলে গবেষনা দরকার, অধ্যয়ন দরকার। সেটা নাই। আছে গরু কিভাবে জবেহ করবে, মাইয়া কম বয়স থাকতে বিয়ে করতে হবে এইসব।
মুহম্মদ একজন অসাধারন সমাজ সংষ্কারক ও রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তার কাজ কে নিয়ে নির্মোহভাবে গবেষনা করতে হবে। এগিয়ে নিতে হবে। টিচিং টা নিতে হবে। আজান দিয়ে করোনার মত মহামারী কিভাবে দূর হবে আমি কোন হাদীসে খুজে পাই নাই। এমনকি আজানের ব্যাপারটা কোরানে ছিলো না। কোরানে নামাজের কথা ছিলো পরে মুহম্মদ ভেবেছে নামাজে ডাকার জন্য একটা আহবান থাকা উচিত। এমনকি মুহম্মদ নিজে আজানের লিরিক্স লিখে নাই। এটা একটা আহবান কিংবা এলানের মত। এটা ঐশ্বরিক কিছু না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়ার আহবান। এ-ই সহজ সত্যটাই বুঝার জন্য একটু মাথা খাটাতে পারছি না আমরা। শুধু ইয়া নবী সালামু আলাইকা আর তবারকের জিলাপী খেয়ে বেহেশতে যাওয়ার দৌড়ে কে আর আগে ফার্স্ট হবো সেটাতে মগ্ন।
পানি পড়া দিয়ে মুহম্মদ কোন রোগের চিকিৎসা করছিলো? কেউ কি জানেন? নবীজীর যখন একবার রোগাক্রান্ত হয়েছিলো তখন উনি চিকিৎসকের শরানপন্ন হয়েছিলো। উনি কোরানের আয়াত দিয়ে ঝাড় ফুক করে নিজের চিকিৎসা করে নাই। সেই রোগমুক্তির দিনকে আমরা আখেরী চাহার চোম্বা হিসাবে পালন করি। মুহম্মদ নিজে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সরনাপন্ন হয়ে বুঝিয়ে গিয়েছিলো রোগ শোক হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান মানে না। রোগের চিকিৎসা ঝাড় ফুক দোয়া পানি পড়া না। এসব যারা বলে তারা সত্যকারের ধর্ম চর্চাকারী হতে পারে না, তারাই ধর্মের বড় শত্রু। মুহম্মদ কে নিয়ে গবেষনা করতে হবে। তার দর্শন, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, সমাজে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার অবিচল সংগ্রামের শিক্ষা নিতে হবে।। শুধু ইয়া নবী সালামুয়ালাইকা দিয়ে বেহেশত যাওয়া গেলে এত কোরান হাদিস ইজমা কিয়াসের কি দরকার ছিলো?
আচ্ছা ওয়াজ কি পেশা? মুহম্মদ কি ওয়াজ করে অর্থ গ্রহন করতো? নাকি ইসলাম ধর্ম প্রচার করে অর্থ নিতো? রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে নিজে ব্যবসা করতো আর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সেটার পরিচালনা বাবদ উনার সামান্য ভাতা ছিলো। তারমানে ওয়াজ ইসলামের দৃষ্টিতে পেশা হতে পারে না। ধর্মের বানী প্রচার করে অর্থ গ্রহন কোন হাদিসে লেখা আছে? যারা এসব করে তারা কতটুকু ধর্মের সত্য প্রচারক আর কতটুকু জীবকার তাগিদে একপ্রকার ধান্দা সেটা যদি বিবেচনা করতে না পারেন তাহলে আপনি সাঈদীকে চাদে দেখবেন আর মিথ্যা গল্প ছড়াবেন নীল আর্মস্ট্রং চাদে নবীজীর পায়ের ছাপ দেখে ইসলাম গ্রহন করেছিলো। এ-র মত ডাহা মিথ্যা একটাও নাই। মিথ্যা আর গালবাজি দিয়ে ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব হয় না, বরং নিজের মূর্খতার কারনে এত সুন্দর ন্যায় ও সাম্যের একটা ধর্ম অপমানীত হয়। ধর্ম শ্রেষ্ঠত্বের রেইস না, ধর্ম নিজের আত্মার পরিশুদ্ধির রেইস। আপনার আচরনই আপনার ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব, আপনার গালবাজি আর মিথ্যা ওয়াজের নামে বাগাড়ম্বর না।। এইবার বলেন ঠিক কিনা?