যখনই হাসপাতালে ভালো দেখতে কোনো মৃতদেহ আসতো, সেই মৃতদেহের উপর যৌনকামনা চরিতার্থ করতো মুন্না। এভাবেই চলছিলো সব। একদিন সিআইডি খবর পায় এই নেক্রোফিলিয়াকের। এরপর যেভাবে তাকে ধরা হলো কৌশলে, গল্পটা তা নিয়েই...

নেক্রোফিলিয়া কাকে বলে আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন। তবে যারা জানেন না, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই - নেক্রোফিলিয়া হচ্ছে একধরণের মানসিক বিকারগ্রস্ততা যার কারনে মৃতদেহের প্রতি যৌন উত্তেজনা জাগ্রত হয়। নেক্রোফিলিয়ায় আক্রান্ত মানুষেরা মৃতদেহের সাথে যৌনমিলন করতে অত্যন্ত আগ্রহী থাকেন এবং সুযোগ পেলেই তারা মৃতদেহের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। গ্রিক লেখক হেরেডোটাস এর বই 'হিস্টোরিস' এ আমরা সর্বপ্রথম এরকম নেক্রোফিলিয়ার নজির দেখতে পাই। এরপর ক্রমান্বয়ে নেক্রোফিলিয়ার আরো অজস্র উদাহরণ আসে, সময়ের ব্যবধানে। বিভিন্ন যুদ্ধে যেমন- পেরুর সংঘর্ষ, রুশ-টার্কিশ যুদ্ধ অথবা সর্বজনবিদিত রুয়ান্ডা গনহত্যার সময়েও মৃতদেহের সাথে সঙ্গমের ঘটনার কথা শোনা গিয়েছিলো। অর্থাৎ যুগে যুগে, কালে কালে নেক্রোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা কিন্তু ছিলেন। এখনো আছেন। আজকে জানবো এমনই একজনের গল্প। এবং তিনি এই বাংলাদেশেরই মানুষ। নড়েচড়ে বসছেন নিশ্চয়ই। তা বসুন।

সিআইডি'কে দিয়েই শুরু করি। না, এটা ভারতের সিরিয়ালের 'দায়া, পাতা লাগাও' সিআইডি না। বাংলাদেশের সিআইডি নিয়ে কথা বলছি এখানে। বাংলাদেশে ধর্ষণ, হত্যা বা অন্য কোনো রহস্যজনক কারণে যেসব মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়, সেসব মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরে প্রাপ্ত আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা এবং প্রোফাইল তৈরী করে থাকে সিআইডি। সম্প্রতি সেরকমই কিছু ডিএনএ পরীক্ষা করতে গিয়ে তারা দেখতে পায় এক অদ্ভুতুড়ে ঘটনা। তারা লক্ষ্য করে, একাধিক নারীর মরদেহে একই পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি। তারা চমকে যায়। চমকে যাওয়ার মতই বিষয়। নারীরা একই এলাকার না। একই বয়সের না। একই পেশারও না। অথচ প্রত্যেকেরই এইচভিএসে (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) একই ব্যক্তির শুক্রাণু উপস্থিত। 

সিআইডি এরপর অনুসন্ধানে নামে। তাদের প্রাথমিক ধারণা ছিলো, একই ব্যক্তি এই মহিলাদের ধর্ষণ করে এরপর খুন করেছে অথবা খুনের পরে ধর্ষণ করেছে৷ কিন্তু সেই ব্যক্তিটি কে? এটা খুঁজে বের করতে রীতিমতো চিরুনিতল্লাশি শুরু করে সিআইডি। প্রথমেই মরদেহ থেকে পাওয়া শুক্রানুর উপর ভিত্তি করে ঐ লোকের একটা ডিএনএ প্রোফাইল তৈরী করা হয়। পরে ঢাকার কয়েকটি স্থানের ডিএনএ প্রোফাইলের সাথে এই ডিএনএ প্রোফাইলকে মিলিয়ে দেখা হয় এবং ডিএনএ প্রোফাইলটি ম্যাচ করে যায়।

সিআইডি এরপর আরো অনুসন্ধানের পরে এ ধারণায় পৌঁছায়, সন্দেহভাজন যে ব্যক্তিটির ডিএনএ প্রোফাইল তৈরী করেছেন তারা, সে ব্যক্তিটি আসলে একজন নেক্রোফিলিয়াক। এবার শুরু হয় আসল অপরাধীকে জালে ফেলার প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়াকে আরেকটু সহজ করার জন্যেই পাওয়া যায় আরেকটি তথ্য। জানা যায়, যে কয়জন মহিলার মৃতদেহে পাওয়া গেছে সন্দেভাজন নেক্রোফিলিয়াকের শুক্রাণু, সেই কয়জন মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট হাসপাতালের মর্গে। সিআইডি বুঝতে পারে, নেক্রোফিলিয়াক আছে সেখানেই।

যে মর্গে এই লাশগুলোর ময়নাতদন্ত করা হতো, সেই মর্গের কার্যপদ্ধতি অনুসন্ধান করে জানা যায়, প্রত্যেকটি লাশ এখানে আনার পরে একরাত রাখা হয় মর্গে। পরেরদিন করা হয় ময়নাতদন্ত। আরেকটু গবেষণা করতেই জানা গেলো, যে কয়জন নারীর মৃতদেহে নেক্রোফিলিয়াকের শুক্রানুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তাদের লাশ পাহারা দেয়ার জন্যে প্রতিরাতে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিই নিয়োজিত ছিলো। ডোমের সহকারী সে। বিশ বছরের এক তরুণ। বুঝতে পারা যায়, সে-ই অপরাধী। তাও চূড়ান্ত প্রমাণের জন্যে ডোমের সেই সহকারীকে নিয়ে গিয়ে চা খাওয়ায় ছদ্মবেশে থাকা সিআইডির এক অফিসার। বন্ধুত্ব করে। সিগারেটও খাওয়ায়। সিগারেটের ফিল্টার থেকে এরপর  তার ডিএনএ জোগাড় করে আগের সেই ডিএনএ প্রোফাইলের সাথে মিলিয়ে পাওয়া যায় শতভাগ মিল। এভাবেই ধরা পড়ে সেই নেক্রোফিলিয়াক।

এই নেক্রোফিলিয়াকের নাম মুন্না ভগত। সিআইডির জেরার মুখে সে স্বীকার করেছে তার সমস্ত অভিযোগ। জানিয়েছে- গত এক বছরে সে ছয়জন মৃত নারীকে ধর্ষণ করেছে। মর্গে আসা লাশের মধ্যে ভালো দেখতে এবং বয়স ১২ থেকে ২০ এর মধ্যে নারী হলেই সে ধর্ষণ করতো। ডোমের সহকারী হিসেবে তার কর্মজীবন চার বছরের। লাশ পাহারা দেয়ার জন্যে সে প্রত্যেক রাতে মর্গেই থাকতো এবং ভালো নারীদেহ পেলেই ধর্ষণ করতো।

মুন্না ভগত; বাংলাদেশে চিহ্নিত হওয়া প্রথম নেক্রোফিলিয়াক! 

বাংলাদেশে এরকম নেক্রোফিলিয়াক ধরা পড়ার ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম। এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিকৃত যৌনাচারের ক্ষেত্রেও নবতম সংযোজন এ ঘটনাটি। মানুষের বিকৃত মানসিকতা যে আর কত নীচে যেতে পারে, সেটারও এক অন্যতম দৃষ্টান্ত এই মুন্না ভগত। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা