নেদারল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী...
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
জেনে রাখুন, এটা বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ড নয়। পদত্যাগ শব্দটা বোকাদের অভিধানে থাকে, আমাদের দেশের মন্ত্রী-মিনিস্টারেরা তো বোকা নন। তারা কেন পদত্যাগ করবেন?
আপনাদেরকে একটা বোকা কিসিমের গাধা টাইপের লোকের গল্প শোনাই। তার নাম ব্রুনো ব্রুইনস। পেশায় তিনি রাজনীতিবিদ, এই গতকালও নেদারল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এখন নামের পাশে ‘সাবেক’ যুক্ত হয়ে গেছে। ইউরোপের আরও অনেক দেশের মতো নেদারল্যান্ডেও করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে, মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সরকার একটার পর একটা শহর লকডাউন করে দিয়েছে, রাস্তায় নেমেছে পুলিশ। মানুষজন দরকারী জিনিসপত্র কিনে হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছে দ্রুত। তবুও থামছে না করোনার আক্রমণ, প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে, মৃতের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন অনেকে। নেদারল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে জনগনের পাশে দাঁড়িয়ে সর্বশক্তি দিয়ে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার, কিন্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করে ফেলেছে তারা, সেসবের ভুক্তভোগী এখন হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
সংসদে এই নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রুনো ব্রুইসকে ধুয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা। তাঁকে অকর্মন্য, অযোগ্য এবং নিষ্কর্মা বলে গালিও দিয়েছেন কয়েকজন বিরোধী সাংসদ। নেদারল্যান্ডে করোনা আক্রমণের পর থেকে ব্রুনো নিজের বাসায় যাননি, মন্ত্রণালয়েই অফিস করেছেন, জরুরী অবস্থায় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের। কিন্ত দিনশেষে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন করোনা মোকাবেলায়। সংসদে এমন ব্যক্তি আক্রমণ সইতে পারেননি তিনি, তাই অধিবেশন চলাকালেই জ্ঞান হারিয়েছেন, পরে প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দিয়েছেন নিজের ইস্তফাপত্রও, স্বীকার করেছেন তার ব্যর্থতা।
এবার আরেকজন লোকের গল্প শোনাই। তিনিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক। তিনি এমনই একজন মানুষ, যিনি জানেনই না করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে কীভাবে তার দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। না জানতেই পারেন, মন্ত্রীর সব জানতে হবে এমন কোন কথা আছে নাকি? মন্ত্রী তো আঞ্জুমানে মফিদুলের কর্মী নন যে গিয়ে লাশ দাফন করবেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া প্রটোকল মেনেই লাশ দাফন করা হচ্ছে, তবে সেই প্রটোকলটা কি, সেটা তিনি জানাতে পারেননি। চমৎকার, তাই না?
করোনার মোকাবেলায় জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে সব জায়গায়, বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছেন একে অন্যের সঙ্গে, কর্মস্থলে না গিয়ে বাসা থেকেই কাজ করছেন লাখ লাখ মানুষ। অথচ আমাদের মন্ত্রী মশাই সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন সাঁইত্রিশজন সৈন্য-সামন্তকে সঙ্গে নিয়ে! এই না হলে সচেতনতার নমুনা! এমন মন্ত্রী যেদেশে আছেন, সেদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ-দশ লাখ মানুষ মারা গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের সরকারী ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইনে না রেখে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলে কেন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্ন এসেছিল তার কাছে। তিনি উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘প্রতিদিন বিমানবন্দর, স্থলবন্দরের মাধ্যমে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ দেশে ঢুকছে, আমরা এই হাজার হাজার মানুষকে কোথায় রাখবো?’ মন্ত্রীর এই প্রশ্ন শুনে মাননীয় স্পিকার হতে ইচ্ছে করলো।
চীন করোনার অফিসিয়াল ঘোষণা দিয়েছে গত ডিসেম্বরে। তিন মাস সময় পেয়েছে বাংলাদেশ, প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা দেখা যায়নি কারো মধ্যে। দেশে করোনা সনাক্তকারী কিট আছে মাত্র দেড় হাজারের মতো, কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা যথাযথ সার্ভিস দিতে পারছে না। হাসপাতালের ডাক্তার নার্স- যারা করোনার বিরুদ্ধে মূল যুদ্ধটা করবেন, তাদের জন্যে কোন সেফটি ইকুইপমেন্ট নেই, এমনকি সলিমুল্লাহ মেডিকেল তো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেই দিয়েছে, করোনা প্রতিরোধকারী মাস্কটাও যেন চিকিৎসকেরা নিজের খরচে কিনে নেন!
এরপরে যদি আপনি ভাবেন যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করবেন, তাহলে জেনে রাখুন, এটা বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ড নয়। পদত্যাগ শব্দটা বোকাদের অভিধানে থাকে, আমাদের দেশের মন্ত্রী-মিনিস্টারেরা তো বোকা নন। তারা কেন পদত্যাগ করবেন? মন্ত্রীত্ব ছাড়া কি মুখের কথা? ব্রুনো ব্রুইনসের নাহয় খানিকটা লজ্জা-শরম ছিল, সবার যে সেটা থাকতে হবে, এমন তো কোন কথা নেই!