নোয়াখালীর ওই নারীকে বিবস্ত্র করা হয়নি শুধু, বিবস্ত্র হয়েছে গোটা বাংলাদেশ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
অসহায় সেই নারী কখনও পিশাচগুলোকে ভাই ডাকছেন, কখনও বাবা ডাকছেন, কখনও আবার আল্লাহকে স্মরণ করছেন। কিন্ত পাষণ্ডদের অত্যাচার থামছে না, নিপীড়িত নারীর চিৎকার যেন আরও বন্য করে তুলছে তাদের...
ফেসবুকে একটা ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুজন মিলে এক নারীর শ্লীলতাহানি করছে, মোবাইলে তার ভিডিও ধারণ করছে আরেকজন। অসহায় সেই নারী কখনও নির্যাতনকারীদের ভাই ডাকছেন, কখনও বাবা ডাকছেন, কখনও আবার আল্লাহকে স্মরণ করছেন। কিন্ত পাষণ্ডদের অত্যাচার থামছে না, নিপীড়িত নারীর চিৎকার যেন আরও বন্য করে তুলছে নরপিশাচগুলোকে। সুস্থ মস্তিস্কের কোন মানুষের পক্ষে এই ভিডিও পুরোটা দেখা সম্ভব নয়, আমার পক্ষেও হয়নি।
সেই নারীর ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি অমানুষগুলো, নির্যাতনের ভিডিও ধারন করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, হয়তো নিজেদের পুরুষত্ব আর ক্ষমতার প্রমাণ দিতেই। ঘটনাস্থল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা, ঘটনাটা ঘটেছে ২০/২৫ দিন আগে। ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। তবে আজ ভিডিও প্রকাশের পরই বিষয়টা প্রকাশ্যে এসেছে।
নির্যাতিতা নারীটি একজন গৃহবধু। ২০-২৫ দিন আগে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও আবদুর রহিমসহ পাঁচজন মিলে ওই গৃহবধূকে শ্লীলতাহানি করে। এ ঘটনায় আবদুর রহিমকে ইতিমধ্যেই আটক করেছে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ। ঢাকা ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে তাকে মারধর করে অভিযুক্তরা। এসময় গৃহবধূ চিৎকার করলেও বন্ধ হয়নি নির্যাতন।
ওই গৃহবধূ নিজের সম্ভ্রম রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন, কিন্ত পেরে ওঠেননি হায়েনাদের সম্মিলিত আক্রমণের সাথে। হামলাকারী কিশোরদের তিনি ‘বাবা’ ডাকেন এবং তাদের পায়েও ধরেছেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং এক কিশোরকে একের পর এক তার মুখে লাথি মারতে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে। একজন তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করছিল। এসময় ঘটনটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চেঁচায় আরেক কিশোর।
এই ভিডিওটি জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নজরে এলে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তিনি নির্দেশ দেন তিনি। এসপি আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশ নির্যাতিতাকে তার বাবার বাড়ি থেকে আজ সন্ধ্যায় উদ্ধার করেছে। তিনি বলেছেন, ২০-২৫ দিন আগে ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের পাঁচটি ইউনিট অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। একজন গ্রেপ্তার হয়েছে ইতিমধ্যেই।
সিলেটের এমসি কলেজের ধর্ষণকান্ডে দেশ উত্তাল, এরইমধ্যে এমন পৈশাচিক নির্যাতনের আরও একটা ঘটনা সামনে এলো- অপরাধের মাত্রা দিনকে দিন ছাপিয়ে যাচ্ছে ধর্ষকেরা। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারনে পেয়ে বসেছে নিপীড়কের দল, ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করে দিয়েছে এরা। কোথায় গিয়ে থামবে এই অত্যাচার, কিভাবে থামানো যাবে এসব কাপুরুষের লিপ্সাকে- সেই প্রশ্নের জবাব কারো জানা নেই।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরাস জেলায় এক দলিত তরুণীর ওপর অকথ্য নির্যাতনের ঘটনায় গোটা ভারত ফুঁসে উঠেছে, সরকারের পা চাটা মিডিয়াও বিদ্রোহ করে বসেছে। এর আগেও দিল্লির রাস্তায় গণধর্ষণের শিকার নির্ভয়ার জন্যেও রাজপথে নেমেছিল ভারতের মানুষ। এই তেজ, দ্রোহের এই আগুন কি আমরা দেখাতে পারব? নাকি সেই নারীর পোশাকের দোষ ছিল কিনা সেই ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত থাকব?
অত্যাচারের ভিডিওটা আপনি দেখেছেন কি দেখেননি সেটা বড় কথা নয়, শুধু মাথায় ঢুকিয়ে নিন- গৃহবধুটি অত্যাচার থেকে বাঁচতে আল্লাহকে ডেকেছিলেন, তাতেও মন গলেনি পাষণ্ডদের। একটা জিনিস জেনে রাখুন, ভিডিওতে নোয়াখালীর ওই নারীকে নগ্ন করে নির্যাতন চালানো হয়েছে, আসলে তো নগ্ন করা হয়েছে গোটা বাংলাদেশকে এদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে। এবার আপনিই ঠিই করুন। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার প্রতিবাদ করবেন কি করবেন না।
তথ্যসূত্র কৃতজ্ঞতা- ঢাকা ট্রিবিউন
ছবি কৃতজ্ঞতা- দ্য ডেইলি স্টার
বিশেষ কৃতজ্ঞতা- আরিফ জেবতিক, ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন