নোকিয়া- দুরন্ত যাত্রা, অতঃপর ভরাডুবি ও প্রত্যাবর্তনের গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'নোকিয়া' নামটার সাথে আমাদের একটা আবেগের জায়গা জড়িয়ে আছে। এটা কেবলই একটা মোবাইল ব্র্যান্ডের নাম না, নস্টালজিয়ায় ভুগার একটা উপলক্ষ্যও। আমাদের অনেকের শৈশব কেটেছে নোকিয়া ১১০০ কিংবা ৩৩১০ এর মতো লিজেন্ডারি সেটে "Snakes" গেমটা খেলে। আজ আমরা এই নোকিয়া কোম্পানির বিস্ময়কর উত্থান ও শীর্ষে উঠার গল্প শুনবো।
'নোকিয়া' নামটার সাথে আমাদের একটা আবেগের জায়গা জড়িয়ে আছে। এটা কেবলই একটা মোবাইল ব্র্যান্ডের নাম না, নস্টালজিয়ায় ভুগার একটা উপলক্ষ্যও। কারণ আমাদের অনেকের প্রথম মোবাইল, কিংবা বিশ্বস্ততার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা মোবাইলটা নোকিয়া, যাদের জন্ম নব্বই এ, ক্যালকুলেটরের মতো স্ক্রিণ থেকে ৬ইঞ্চি ফুল এইচডি টাচ স্ক্রিন স্মার্টফোনে রূপান্তরটা যাদের চোখের সামনে, তাদের অনেকের শৈশব কেটেছে নোকিয়া ১১০০ কিংবা ৩৩১০ এর মতো লিজেন্ডারি সেটে "Snakes" গেমটা খেলে। আজ আমরা এই নোকিয়া কোম্পানির বিস্ময়কর উত্থান ও শীর্ষে উঠার গল্প শুনবো।
আমরা অনেকেই জানি- নোকিয়া ফিনল্যান্ডের কোম্পানি। ফিনিশদের কাছে নোকিয়া কিন্তু যাস্ট একটা মোবাইল কোম্পানি না, জাতীয় গর্বও! ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত এই ব্র্যান্ড ২০০০ সালের দিকে দেশের মোট জিডিপির ৪% একাই বহন করতো! মোট রপ্তানির ২১% ছিলো একার এই নোকিয়ার এবং হেলসিংকি স্টক এক্সচেঞ্জের ৭০% ক্যাপিটাল ছিল একা নোকিয়ারই! এই যে এত বিশাল নোকিয়া কোম্পানি, কেউ বিশ্বাস করবে এর যাত্রা শুরু হয় ১৮৬৫ সালে যখন "ফেড্রিক আই ডি-স্টেম" নামের একজন খনি প্রকৌশলী তার প্রথম কাঠ মন্ডের মিল প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ ফিনল্যান্ডে! কয়েক বছর পর এই প্রকৌশলী তার দ্বিতীয় কাঠ মন্ডের মিল স্থাপন করেন ফিনল্যান্ডের " নাকি ইনভর্টার " নদীর তীরে। পরবর্তীতে তিনি এই নদীর নামানুসারে তার কোম্পানির নাম রাখেন "নোকিয়া "। ঐসময় এই নোকিয়া নামটিই ভবিষ্যতে এত বেশি পরিচিত এবং সমাদৃত হবে এই বিষয়ে কোনো ধারণাই ছিল না ফেড্রিক আই ডে-স্টেম এর। যাই হোক, নোকিয়া কোম্পানি নতুন নতুন বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন: রাবার, টায়ার, টিভি ব্যবসায় বিস্তার করতে থাকে।
শুরুটা যেভাবে
১৯৬৫ সালে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে সোভিয়েত মহা শক্তি "ইউ এস এস আর" এর সাথে পাল্লা দিয়ে পুঁজিবাদ দেশ আমেরিকা তাদের পারমাণবিক শক্তির মহড়া দেয়। পৃথিবীর সকল দেশ পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ এর ভয়ে কম্পমান। নিরপেক্ষ দেশ ফিনল্যান্ড ভয়াবহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য মিলিটারি "রেডিও টেলিকমিউনিকেশন" উন্নয়নের উপর জোর দেয়। একটি ছোট্ট কোম্পানি " নোকিয়া " ফিনিশ সরকারের কাছ থেকে এই কাজ পায়। ১৯৭০ সালের দিকে নোকিয়া মিলিটারি রেডিও টেলিকমিউনিকেশন উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য "কার টেলিফোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম" চালু করে যা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। যদিও বর্তমান সময়ের মানদন্ডে নোকিয়ার আবিষ্কৃত সেই কার টেলিফোন পদ্ধতি বেশ সেকেলে। ১৯৮৫ সালে নোকিয়া তাদের কার টেলিফোন পদ্ধতিটি সারা বিশ্বে রপ্তানি শুরু করে এবং তখনই এই কোম্পানির সত্যিকার বিস্তার ঘটে। ১৯৮৭ সালে নোকিয়া তৈরী করে "মোবিরা সিটি ম্যান" মুঠোফোন, যা তৎকালীন সোভিয়েত লিডার "মিখায়েল হর্বাচেভ"কে এক প্রেস কনফারেন্স এ ব্যবহার করতে দেখা যায় এবং সারা পৃথিবীতে স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে এই মুঠোফোনটির জনপ্রিয়তা রাতারাতি বৃদ্ধি পায়।
নোকিয়ার সাফল্যে হঠাৎ করেই ধস নামে ১৯৯০-১৯৯১ সালের দিকে। আপনারা হয়তো জানেন ওই সময়ে মহান সোভিয়েত ইউনিয়ন এর পতন হয় এবং এর প্রভাব পড়ে সমগ্র ইউরোপে। মন্দার কারণে নোকিয়ার মুঠোফোন ব্যতীত অন্য সকল ব্যবসায় চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
স্বর্ণযুগের শুরু
নোকিয়াকে দেওলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯৯২ সালে কোম্পানিটির নতুন নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন " জর্মা অলিলা" । প্রাক্তন এই ব্যাংকারের একটি সিদ্ধান্তে নোকিয়ার ভাগ্যের চাকা নতুন দিকে মোড় নেয়। তিনি নোকিয়ার মুঠোফোন ছাড়া অন্য সকল ব্যবসায় বন্ধ করে দেন। শুরু হয়ে যায় নোকিয়ার ৯০ দশকের সোনালি দিনের যাত্রা। প্রতিযোগী সকল মুঠোফোন কোম্পানিকে পিছনে ফেলে নোকিয়া সারা বিশ্বে মুঠোফোন ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব শুরু করে। এরপর থেকে নোকিয়ার জয়যাত্রা মোটামুটি অপ্রতিরোধ্য থাকে দুই দশক ধরে!
১৯৯২ সালে নোকিয়া ১০১১ মডেলের পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম GSM প্রযুক্তির মোবাইল ফোন বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়ে এবং ১৯৯৮ সালে, ৬বছরের মধ্যে মটোরোলাকে টপকে পৃথিবীর এক নাম্বার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়! ঐ বছর ডিসেম্বরেই নোকিয়া তাদের ১০০ মিলিয়ন তম মোবাইল সেট বানিয়ে ফেলে! শুধু সেই বছরই ২০ বিলিয়ন ডলারের ফোন বিক্রি করে নোকিয়া এবং ২.৬ বিলিওন ডলার লাভ হয়। তখন ৫৫০০০ এর মত মানুষ নোকিয়ার হয়ে চাকরি করতো!
নোকিয়া ৩৩১০
নোকিয়া দ্রুত আফ্রিকা, এশিয়া, ওশেনিয়া ও ইউরোপে প্রচন্ড জনপ্রিয় হতে থাকে। ২০০০ সালের সেপ্টেমবর মাসে তারা নোকিয়া ৩৩১০ সেটটা লঞ্চ করে। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সর্বাধিক বিক্রিত মোবাইল সেট, প্রায় ১২ কোটি ৬০ লক্ষ পিস বিক্রি হয়ে ছিলো। এই জনপ্রিয়তার কারণ ছিলো দারুন ইউজার ফ্রেন্ডলি ফিচার, আর Snakes , Space impact এর মতো লিজেন্ডারি গেমগুলো। তবে এই সেটটি এখনো ইন্টারনেটে “অসম্ভব শক্ত, ভাঙ্গা যায়না” এমন কিছুর উদাহরণ হিসেবে ট্রল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বহু ভিডিও পাওয়া যায় ইন্টারনেটে এই ৩৩১০ মডেলকে নানা টেস্টের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাঙ্গে কিনা দেখার জন্য। ২০১৫ সালে এই সেটটিকে ফিনল্যান্ডের জাতীয় Emoji হিসেবে বেছে নেওয়া হয়! এই ইমোজি দিয়ে বুঝায়- The Unbreakable! ২০১৭ সালে The Sun পত্রিকায় যুক্তরাজ্যের ইয়র্কশায়ারের এক লোককে নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখেন, যিনি ১৭ বছর ধরে একটা ৩৩১০ সেট ব্যবহার করছেন!
নোকিয়া ১১০০
বাংলাদেশে এমন মানুষ পাওয়া কষ্টই হবে যে নোকিয়ার এই ফোনটা চিনেনা বা দেখেনি। ২০০৩ এর শেষের দিকে বাজারে আসার পর ২০০৯ এই ছয় বছরে ২৫ কোটি পিসের বেশি বিক্রি হয়েছে এই মডেলটি। এটি শুধু সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রিত মোবাইল ফোনই নয়, ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র হিসেবেও! এই ১১০০ টা সাদাকালো ডিসপ্লের, কথা বলা, ম্যাসেজ পাঠানো, গেমস আর চার্জার লাইট বাদে আহামরি কোনো সুযোগ সুবিধা ছিলো না অথচ সেটা এমন সময় বাজারে এসেছিলো যখন অলরেডি রঙ্গিন ও ক্যমেরা ওয়ালা ফোন চলে এসেছে। আসলে এই সেটটা ডিজাইন করাই হয়েছিলো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টার্গেট করে। খুবই টেকসই ডিজাইনের আর চালাতে সহজ ছিল বলেই এটা এত জনপ্রিয় হয়। ২০০৯ সালে একটা মজার ব্যাপার হয়- গুজব ছড়ায় জার্মানিতে তৈরী কিছু ১১০০ সেট নাকি অন্যের নাম্বারে পাঠানো ম্যাসেজ নিয়ে নিতে পারে! এরকম কিছু ১১০০ মডেলের সেট ৩২০০০ ডলারেও বিক্রি হয়েছিলো তখন!
ক্যামেরা ফোন, সিম্বিয়ান ও N-সিরিজ
১৯৯৮ সালে নোকিয়া সিম্বিয়ান লিমিটেড কোফাউন্ড করে যার প্রথম কাজ ছিলো PDA এর মতো যন্ত্রের জন্য অপারেটিং সিস্টেম চালু করা। ২০০১ সালে Symbian OS মোবাইল ওপারেটিং সিস্টেম তৈরী হয় যা নোকিয়া তাদের প্রথম ক্যামেরা ফোন Nokia 7650 তে ইউজ করে। এই সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেম তারপর থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন সিস্টেম হতে শুরু করে। ২০০৫ সালে নোকিয়া তাদের বিখ্যাত N সিরিজ বাজারে আনে এবং পরবর্তী ৬ বছর ধরে চলে তার জয় জয়কার! জার্মান ক্যামেরা লেন্স বানানোর কোম্পানি Carl Zeiss AG. এর সাথে যুক্ত হয়ে নোকিয়া একের পর এক N95, N82, N93 এর মতো ঐসময়ের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফোন আনতে থাকে। এত উন্নত ক্যামেরা তখন মোবাইল ফোনে দেখা যায় নি, সত্যি বলতে সিম্বিয়ান সেটের সেই স্বর্ণযুগে নোকিয়া যে কত বিচিত্র সব মোবাইল এনেছিলো তার ইয়ত্তা নেই। জেনন ফ্ল্যাশ এলো, ক্যামকর্ডারের মতো ঘুরানো যায় এরকম ক্যামেরা মোবাইল এলো। যদিও এসব সেট আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের সাধ্যের ভেতর ছিল না, তবে সারা বিশ্বে নোকিয়া সেই সময়টুকু শাসন করেছিলো সিম্বিয়ান চালিত N সিরিজ দিয়ে। ২০০৮ সালে তাদের আরেকটি বহুল জনপ্রিয় সেট Nokia 5800 XpressMusic বাজারে আসে। একই বছর নোকিয়া জাপানে তাদের বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
উইন্ডোজ, লুমিয়া এবং নোকিয়ার ভরাডুবি
২০১০ সালের পর এপলের iOS এবং এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উত্থানের কারণে সিম্বিয়ান পিছিয়ে পড়তে থাকে। সামসাং, সনি এরিকসন এন্ড্রয়েডে চলে যায়। সিম্বিয়ান প্লাটফর্মে নতুন ডেভেলপমেন্ট করা কঠিন হয়ে পড়ে। নোকিয়া তখন মাইক্রোসফটের সাথে যুক্ত হয়ে উইন্ডোজ প্লাটফর্মে স্মার্টফোন বাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১১ সালে বাজারে আসে Lumia800, নোকিয়ার প্রথম উইন্ডোজ ফোন। কিন্তু সিম্বিয়ানের ভরাডুবিতে নোকিয়ার যে পতন হচ্ছিলো তা লুমিয়া বাঁচাতে পারেনি। ২০১২ সালের মাঝামাঝি নোকিয়া প্রায় দেউলিয়া কোম্পানিতে পরিণত হয়!
২০১২ তারা Lumia 920 সেটের ঘোষণা দেয়। যেটা অনেক বেশি উন্নত হবে বলা হচ্ছিলো। এদিকে তাদের Asha সিরিজের সাশ্রয় দামের সেটগুলোও ভালই বিক্রি হচ্ছিলো। এত কিছুর পরও তাদের লস থামানো যাচ্ছিলো না। অবশেষে ২০১৩ সালে নোকিয়া ঘোষণা দেয় যে তারা তাদের মোবাইল ও ডিভাইস ডিভিশন মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি করে দিবে। বিক্রি শেষ হয় ২০১৪ এর এপ্রিলে। এদিকে নোকিয়া ২০১৩ সালেই সিমেন্স থেকে নোকিয়া-সিমেন্স নেটয়ার্কের সিমেন্সের অংশটুকু কিনে নিয়ে “নোকিয়া নেটওয়ার্ক” নাম দিয়ে মোবাইল বানানো বাদ দিয়ে মোটামুটি লাভ জনক নেটওয়ার্ক সার্ভিস ইকুইপমেন্ট বানানো শুরু করে।
অবশেষে প্রত্যাবর্তন
নোকিয়ার আসল কোম্পানি এখনো নেটওয়ার্কিং নিয়ে কাজ করলেও ২০১৬ সালে মাইক্রোসফট মোবাইলের জন্য “নোকিয়া” ব্র্যান্ড HMD Global নামের কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। তারা ২০১৭ সালে এন্ড্রয়েড ভিত্তিক Nokia 3, Nokia 5, Nokia 6 স্মার্ট ফোন এবং তাদের ক্লাসিক ৩৩১০ মডেলটা নতুন ফিচার সংযুক্ত কর বাজারে আনার ঘোষণা দেয়। আর এদিকে আসল নোকিয়া কোম্পানি ফিনল্যান্ডে দুনিয়ার প্রথম 5G নেটওয়ার্ক বসাচ্ছে। তারা অবশ্য এবছরই চায়নার মোবাইল কম্পানি Xiaomi এর সাথে চুক্তি করেছে, সামনে হয়তো বড় কোন চমক আসছে।
বানানোর ইতিহাস খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো- এর ফাঁকে যে এই অসাধারণ ইনোভেটিভ কম্পানিটি কত ডিভাইস তৈরী করেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। তার কিছু সফল হয়েছে, কিছু ব্যর্থ, কিন্তু তারা থামেনি। বর্তমানে যে সারা দুনিয়ায় মোবাইল নেটওয়ার্কিং এর চরম উন্নতি তার পিছনে রয়েছে এই কম্পানিটির উদ্ভাবনী গবেষণার বিশাল অবদান। নোকিয়ার ইতিহাস দেখলে দুটো জিনিস বুঝা যায়- সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে যত বড়ই হোক টিকে থাকা যায় না- যা তাদের লুমিয়া সিরিজ নিয়ে ভরাডুবি দেখে বুঝা যায়। আর এখনো নোকিয়া নামটা মানুষের ভেতর আস্থার প্রতীক হয়ে আছে কারণ নিজেদের পন্যের মানের কারণেই তারা মানুষের মনে একটা ভালবাসার জায়গা করে নিয়েছিলো।