নুয়ের সমাজে রয়েছে বিচিত্র সব প্রথা। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, দেবর বিবাহ, শালিকা বিবাহ, ভুত বিবাহ, নারী নারী বিবাহ...

গত বছরের শুরুর দিকে কথা, তখন কেবল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়েছে। আমি বাসা থেকে বেড়িয়ে হলে উঠলাম। প্রথম স্বাধীন জীবন, বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলাম খুব। তাই সারাদিন আড্ডা চলতো। 'বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে পড়াশোনা করা চলে না', এরকম একটা ধারণার ঘেরাটোপে আটকা পড়েছিলাম। আর তাছাড়া বন্ধুমহলে 'আতেল' নামে পরিচিত হবার ইচ্ছাও ছিল না। আবার সবাই ভাল রেজাল্ট করলে পা চাটার সুযোগটাও ছাড়তো না। ভাবখানা এমন,'পড়াশোনা করা যাবে না, কিন্তু ভাল রেজাল্ট করতে হবে'। এখানে বলা বাহুল্য, এতোটা ব্রাইট আমি কোনোকালেই ছিলাম না। সারাদিন অর্থহীন দৌড়াদৌড়ি করে বিছানায় শুতেই গাছের মতোন ঘুমাতাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করে ক্লাসে দৌড়। 

আমি নৃ বিজ্ঞান মেজর হিসেবে নিয়েছিলাম খুব আগ্রহ করে। প্রথম বর্ষে আমার বিভাগে 'কিনশিপ স্টাডিজ' নামে একটা কোর্স চলে। গত বছর কোর্সটা নেন প্রফেসর মির্জা তাসলিমা সুলতানা। প্রফেসর দারুণ স্মার্ট, চটপটে ও পটু। অধ্যাপক হিসেবে তার জুড়ি নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গিয়ে কোর্সটাতে। পরপর কয়েকটা ক্লাস করে আমি খেয়াল করলাম কোর্সের কিছুই বুঝতে পারছি না। তার মাঝে ম্যাডাম প্রথম টিউটোরিয়ালটা নিয়ে ফেললেন। সেখানে পুরো ক্লাসের ফলাফল এতো বাজে ছিল যে ফলই প্রকাশ করা হয়নি। এই অবোধ্য কোর্সে একটা ব্যাপার সেই প্রথম থেকেই আমার নজর কাড়ছিল। 'নুয়ের' সমাজের উপর করা কেইস স্টাডি। নুয়ের সমাজে নারী-নারী বিবাহ প্রথা চালু আছে এবং সেটা মোটেও সমকামী সম্পর্ক না! আবার মৃত ব্যক্তির আত্মার সাথেও বিয়ে দেয়ার প্রচলন তাদের মাঝে আছে। কিন্তু যেহেতু আমি অত বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করিনি, তাই এই অল্প বিদ্যাতেই সন্তুষ্ট থেকেছিলাম। 

গত বছর বিভিন্ন কারণে আমার পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয়নি, তাই এ বছর পুনরায় আমি প্রথম বর্ষে ভর্তি হই। এবার লক্ষ্য ছিল গত বছরের বেহুদা সময় নষ্ট না করে সিরিয়াস পড়াশোনার মাঝে নিজেকে আবিষ্ট করা। কিন্তু করোনার প্রকোপে সব ক্লাসই শেষমেশ বন্ধ হয়ে গেল। বাসায় একটা নিরিবিলি সময় পেয়ে আমি বই পড়া শুরু করলাম। 

অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমি কোর্সের পড়াগুলো বুঝতে পারছি। তখন আমি নুয়ের সমাজ নিয়ে বিস্তারিত পড়া শুরু করলাম। এই সমাজের বিচিত্রতা আমাকে অবাক করল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কল্পনাতীত ব্যাপারও সামনে এলো। তখনই ঠিক করলাম নুয়ের সমাজ নিয়ে আমি লিখব। ভূমিকার পর্ব তাহলে এখানেই শেষ করি। এবার তাহলে নুয়ের সমাজ নিয়ে কথা শুরু করি। 

নুয়েদের বাস সুদানের জলা ও উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চল ঘিরে। কয়েকটা গ্রাম ভাগ হয়ে প্রায় দু লাখ নুয়ের সেখানে বাস করত। সেই সব উনিশশো ত্রিশ সালের কথা। এরমাঝে সুদানের গৃহযুদ্ধের স্বীকার হয়ে তাদের অনেকে বহুদূরে মিরাসেতায় রিফিউজি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। উনিশশো ত্রিশ সালে বৃটিশ নৃবিজ্ঞানী স্যার ইভালস স্পিচার্ড সুদানে যান নুয়েদের উপড় মাঠকর্ম করতে। নৃবিজ্ঞানে মাঠকর্মের ব্যাপকতা ব্যাপুল। মাঠকর্মে একজন নৃবিজ্ঞানীকে একটা অঞ্চলে থাকতে হয়। আদিবাসীদের একজন হয়ে একটা লম্বা সময় সেখানে জীবনযাপন করতে হয়। এমন অনেক হয়েছে যে মাঠকর্ম করতে গিয়ে নৃবিজ্ঞানীরা ওই আদিবাসী সমাজেই রয়ে গেছেন সারাজীবন। এরকম মাঠকর্মের নাম 'এথনোগ্রাফি'। স্যার ইভাল নুয়েদের জীবনগাঁথা তার এথনোগ্রাফিতে জীবিত করে তুলে ধরেছিলেন। আর নুয়ের সমাজের আশ্চর্য প্রথাগুলো অবাক করেছিল পাঠকদের।

শুরু করা যাক নুয়েরদের গৃহস্থালি দিয়ে। নুয়ের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক এবং প্যাক্টোরাল অর্থাৎ তাদের অর্থনৈতিক জীবন গবাদি পশুর উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতার কারণেই বোধহয় গবাদি পশু তাদের জীবনে বেশ গুরুত্ব বহন করে। নুয়েরদের বাসস্থান গড়ে উঠে একটা গোয়ালঘরকে কেন্দ্র করে। সেই গোয়ালঘরে পশু থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি মানুষের থাকার ব্যবস্থাও করা হয়। পিতৃতান্ত্রিক হওয়ায় পুরুষ সেখানে সর্বেসর্বা। আর তাই গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালঘরে থাকে পরিবারের পুরুষরাই। তাছাড়া ঘরের মন্দিরটিও প্রতিষ্ঠিত হয় সেই গোয়াল ঘরে। আমার মামা বাড়িতে ছোটোখাটো একটা গোয়ালঘর ছিল। গোয়ালঘরের দিকটায় যে খাটটা ছিল, আমরা কেও সেখানে ঘুমোতে চাইতাম না। তার কারণ ছিল, প্রথমত গোবরের গন্ধ আর দ্বিতীয়ত মাছির উপদ্রব। এরকম অভিজ্ঞতার পর আমি আসলে কল্পনায় আনতে পারিনি গোয়াল ঘরে কি করে পরিবারের সবচেয়ে সম্মানিত সদস্যদের বাসস্থান হতে পারে। কিন্তু একজন নৃবিজ্ঞানী হিসেবে আমার কাজ এখানে নিবৃত থাকা এবং কোনোরকম পক্ষপাতী না হয়ে নুয়েরদের জীবনযাপন প্রত্যক্ষ করা এবং আমি তাই করার চেষ্টা করেছি। 

পিতৃতান্ত্রিক হওয়ায় পুত্র সন্তানের জন্ম নুয়েরদের কাছে খুব জরুরী একটা ব্যাপার। তাই বলে কণ্যা সন্তান তাদের কাছে মোটেও ফেলনা না। কেননা নুয়ের নারীদের দুটি ক্ষমতা তাদের কর্তৃত্ব বহাল রাখে। প্রথমত গবাদিপশুর মালিকানা কেবল পুরুষদের হাতে থাকলেও তার দুধ দোয়ানোর কাজ কেবল নারীরা করতে পারে এবং ঘরের মেয়েদের বিয়ে দেবার সময় কনেপন হিসেবে মেয়ের পরিবার গবাদিপশু লাভ করেন। এরমানে কন্যা থেকে সম্পদ প্রাপ্ত হয়। এই কয়েকদিন আগপর্যন্তও বাংলাদেশে যৌতুক না দিলে বিয়ে ভাঙ্গার ঘটনা পর্যন্ত ঘটতো। তাছাড়া শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন তো লেগেই আছে। এখনো হয়তো কোথাও কোথাও চলে এসব।

এবার এই একই ব্যাপারটায় কেবল নারী-পুরুষের জায়গাটা বদলে দিলে অদ্ভুত লাগতে পারে অনেকের কাছে। তবে উল্লেখ্য এই যে কনেপনের প্রথা নুয়ের বাদেও আরও অনেক আদিবাসি সমাজের মাঝে এখনো দেখা যায়। নুয়ের কন্যাদের জীবনের প্রথম উৎসব বিয়ে হলেও ছেলেদের জন্য প্রথম উৎসব হল গাড়প্রাপ্ত হওয়ার উৎসব। চৌদ্দ থেকে ষোল বছরের মাঝে নুয়ের ছেলেরা প্রাপ্ত বয়স্ক বলে গণ্য হয়। একটা বিশেষ দিনে গায়ের ষোল বছরের সব ছেলেদের একত্রে করে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া উৎযাপন করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কতার প্রমাণ হিসেবে নুয়েররা ছেলেদের কপাল চিড়ে ছয়টা দাগটানে, যা আজীবন ক্ষত হিসেবে রয়ে যায়। এই ক্ষত চিহ্নের নামই হল গাড়। গাড় প্রাপ্ত হওয়ার মানে সেই ছেলে এখন বিয়ে করতে প্রস্তুত। গাড় প্রাপ্ত হলে ছেলেরা তার বাবার কাছ থেকে দুটো জিনিস পায়। প্রথমত একটা বল্লম আর দ্বিতীয়ত একটা সবল ষাড়। আর সমাজ তাদের দেয় যোদ্ধার খেতাব।

নুয়ের সমাজ
নুয়ের সমাজের বাসিন্দারা

এখানে আমাদের অনেকের কাছে এই প্রথাটি বর্বর বলে মনে হতেই পারে। যাদের মনে হচ্ছে তাদের আমি দোষ দিচ্ছি না। তবে নুয়ের সমাজের বাসিন্দারা এটিকে আমাদের সমাজের খতনা করার মতোন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবেই মেনে নিয়েছে। 

ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর প্রথম কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় বিয়ে করা। এক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে স্বাধীনতা পায় নিজের সঙ্গী নির্বাচন করার। রাতের বেলায় নুয়েররা নাচের আয়োজন করে এবং সেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েরা একে অপরের সাথে মেলামেশা করার সুযোগ পায় এবং এভাবেই তারা পছন্দ করে নেয় তাদের ভবিষ্যত সঙ্গিনীকে।

নুয়ের সমাজে বিয়ে বেশ লম্বা সময় ধরে চলে। তিন ধাপে মূলত বিয়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপ হল লানসিয়েং। এই ধাপে ছেলে ও মেয়ের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন বিয়ের ব্যাপারে সম্মত হয়। দ্বিতীয় ধাপ হল গাট। এই ধাপে বর কনের বাড়িতে যায় ও দুই পরিবারের উপস্থিতিতে বর কণ্যাকে স্বীকার করে। তার  পরের ধাপকে বলা হয় মাত। এপর্যায়ে বর কনেকে নিজের ঘরে নিয়ে আসে এবং থাকার জন্য একটি কুঁড়ে তুলে দেয়। পুরুষদের থাকার জায়গা গোয়ালঘর হলেও রাত্রে তারা স্ত্রীর কুড়েতে মিলিত হয় এবং এরপরেই বিয়ে পাকাপোক্ত হয়। মিলিত হবার পরে স্ত্রীর মাথার সব চুল ফেলে দিয়ে মুণ্ডন করে দেয়া হয়, যা নুয়েরদের মাঝে নববিবাহিতার প্রতীক এবং মাতের পরে নারীরা আর রাতের নাচে অংশগ্রহণ করতে পারে না। যদিও পুরুষরা পারে,কেননা নুয়ের সমাজ পুরুষদের বহুবিবাহের বৈধতা দেয়।  

আগেই বলেছিলাম নুয়ের সমাজে কনে পণের প্রথা চালু আছে। এক্ষেত্রে বর কনের পরিবারকে গবাদিপশু দেয়। এই গবাদিপশু ধাপে ধাপে পাঠানো হয় এবং বিয়ে পাকাপোক্ত হবার আগ পর্যন্ত বর যেকোনো সময় তার গবাদিপশু ফেরত আনতে পারে। প্রথম সন্তান জন্ম নেবার পরেই মূলত বিয়ে সম্পূর্ন ভাবে পাকা হয় এবং এরপর আর কোনোভাবেই গবাদিপশু ফেরত আনা যায় না। নুয়ের পুরুষরা একাধিক বিয়ে করতে পারে। যদিও পলিগেমি তাদের কাছে বিয়ের আদর্শ রূপ, তারপরও বেশিরভাগ পরিবারই মনোগেমাস। কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম স্ত্রীর সম্মতি মেলে না। নুয়ের সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ই অবাধ যৌন স্বাধীনতা পায়। যেমন ধরা যাক কোনো নারী বিবাহ বহির্ভূত কোনো সম্পর্কে জড়াল, এবং তার ফলে যদি তার কোনো সন্তান জন্ম নেয় তবে সমাজ তা বিনাবাক্যে মেনে নেবে। তখন সেই সন্তান পরিচিত পাবে ওই নারীর বৈধ স্বামীর সন্তান হিসেবে। নুয়েররা পুত্র সন্তানকে সবার উপরে প্রাধান্য দেয় এবং বিশ্বাস করে অন্য কারও সাথে মিলিত হলেও তাদের স্ত্রীরা যে বাচ্চা সন্তান প্রসব করে তা তাদেরই সন্তান। এখানে যার বীর্জ নেয়া হচ্ছে সে হল জেনিটর এবং যার কাছে পালিত হচ্ছে তিনি হলেন প্যাটার। এবং নুয়ের সমাজে প্যাটারকেই সর্বসাকুল্যে প্রাধান্য দেয়া হয়। কেননা তাদের জন্যে বংশে পুত্র সন্তান প্রাপ্ত হওয়াই বড় কথা। তা কার ফলশ্রুতিতে প্রাপ্ত হল সেটা বড় কথা না।

কোনো নুয়ের পুরুষ যদি নপুংসক হয় তবে তারা এ উপায়েই সন্তান লাভ করে। বাংলার প্রাচীন পুরাণ মহাভারতে পান্যু ও ধৃতরাষ্ট্রের জন্মও এই প্রথায় হয়েছিল বলে বর্ণনা করা হয়। এবং আমার বিশ্বাস অন্যান্য পুরাণ ঘাটলেও এরকম আরও ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে। 

এবার আসা যাক ভুত বিবাহে। নুয়েরা বিশ্বাস করে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ যদি বিয়ে করার আগেই মারা যান তবে তার আত্মা অতৃপ্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এই ভুত তার ভাইদের ও ভাইদের সন্তানদের উপর আক্রমণ চালায়। সেই ভুতের উপদ্রব থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় যেটি সেটি হল এই ভুতের বিয়ে দেয়া। তখনই অতৃপ্ত আত্মার সাথে কোনো নারীর বিয়ে দেওয়া হয় এবং এই নারীর সাথে মৃত ব্যাক্তির ভাই মিলিত হয়। এভাবে যেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তা মৃত ব্যাক্তির সন্তান হিসেবে বংশে পরিচিতি পায়। 

আবার নুয়ের নারীরা বিধবা হলে মৃত ব্যক্তির ভাই তার অধিকার প্রাপ্ত হয় ও চাইলেই মিলিত হতে পারে। এবং এক্ষেত্রেও তাদের সন্তান আসলে মৃত ব্যক্তির সন্তান হিসেবে পরিচিতি পায়। এবং একইভাবে নিঃসন্তান স্ত্রী মারা গেলে নুয়ের পুরুষরা তাদের স্ত্রীর বোনকে বিয়ে করতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তার মৃত স্ত্রীকে নিঃসন্তান হতে হয়। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি নুয়ের সমাজে দেবর বিবাহ ও শালিকা বিবাহও বৈধ। 

বিধবা ও বন্ধ্যা নারীরা আরও এক ধরণের বিবাহের সুযোগ পায়। তা হল নারী-নারী বিয়ে। নিঃসন্তান বিধবা অথবা বন্ধ্যা নারীরা চাইলেই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপেরবাড়ি চলে যেতে পারে এবং বন্ধ্যা হবার কারণে তারা সমাজে 'পুরুষ' হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আর এই পরিচয়ে সে অন্য এক নারীকে বিয়ে করতে পারে। কিন্তু তাদের মাঝে কোনো ধরনের সমকামী সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। এক্ষেত্রে সেই দ্বিতীয় নারী অন্যকোনো পুরুষের সাথে সঙ্গম করে সন্তানের জন্ম দেয় এবং সেই সন্তান সেই বন্ধ্যা নারীর বংশ পরিচয়ে পরিচিতি পায়।

এই যে নুয়ের সমাজের অদ্ভুত বিয়ের প্রথা, যেখানে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, দেবর বিবাহ, শালিকা বিবাহ, ভুত বিবাহ,নারী নারী বিবাহ সমাজ সম্মত, সেখানে আশ্চর্য হওয়াটা মোটেও দোষের কিছু না। এই অবাধ যৌনাচার আমাদের চোখে অসম্ভব মনে হলেও ওই সমাজে তা খুব স্বাভাবিক বলেই গণ্য হয়। কেননা বছরের পর বছর ধরে এভাবেই নুয়েররা তাদের বংশধারা রক্ষা করে চলেছে। 

শেষে আমি বলতে চাই, নুয়ের সমাজের এই সব রীতি বর্তমানে আগের মতো থাকাটা অস্বাভাবিক। কিছু কিছু রীতি পরিবর্তিত হওয়ারই কথা। কেননা এরই মাঝে তারা দুটো বিরাট ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। প্রথমত বৃটিশ ঔপনিবেশিকতা ও দ্বিতীয়ত সুদানের গৃহযুদ্ধ। গৃহযুদ্ধের ফলে অনেক নুয়ের তাদের গ্রাম ছেড়ে মিনাসেতায় রিফিউজি হিসেবে আছেন। আরেকদিন কথা হবে সেসব নিয়ে। হয়তো সবারই জানতে হয় কেমন থাকেন রিফিউজিরা!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা