যে কারণে ‘প্যারাসাইট’ এর একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
প্রতিবছরেই কোনো না কোনো চলচ্চিত্র সেরা হয়। এতে যে গৌরব আছে তারচেয়েও বেশি গৌরবের কোনো তথাকথিত প্রথা ভেঙ্গে দিয়ে জয়লাভ করা।
অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার তো প্রতিবছরেই কেউ না কেউ পেয়েছে, পাচ্ছে, এবং পেতে থাকবে। তবে পুরস্কারটি যখন আমেরিকার মাটিতে একটি দক্ষিণ কোরিয়ান ফিল্ম জিতে নেয় তবে অবশ্যই সেটি বিশেষ ঘটনা। চলচ্চিত্রের মতো বিশ্বজনীন একটি প্রভাবশালী মাধ্যমে যখন কোনো সিনেমা ভিন্ন ভাষার দেয়াল ভেঙ্গে দেয় সেটি অবশ্যই উল্লেখ এবং উদযাপন করবার মতোই বিষয়।
প্যারাসাইট অকারণেই ২০১৯ সালের সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্র হয়নি। এর পেছনে ইতিহাস বদলে দেয়ার ধারণা রয়েছে। সেই কারণেই পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে মূল্যবান পুরস্কার পাম ডি’ওর জিতে নেওয়ার পর প্যারাসাইটের পরিচালক বং জুন-হো শেষ হাসিটা হাসলেন অস্কারের ৯২ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। ৯২তম অস্কারের আসরে প্যারাসাইটের ‘সেরা আন্তর্জাতিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র’ পুরস্কার জেতাটা প্রত্যাশিতই ছিলো। তবে ধনী-গরিবের সামাজিক বৈষম্য নিয়ে নির্মিত ডার্ক কমেডি ‘প্যারাসাইট’ সবাইকে চমকে দিয়ে জিতে নিলো একাধারে সেরা চলচ্চিত্র, পরিচালক, চিত্রনাট্য ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের ৪টি মহামূল্যবান পুরস্কার।
ব্যাপারটি কিন্তু এমন না যে এটিই এ বং জুন-হো এর নতুন কিংবা সেরা কাজ। এর আগেও তিনি ‘মেমোরিজ অফ মার্ডার’ এর মতো দুর্দান্ত সিনেমা নির্মাণ করেছেন। অথচ ঐ ভাষা কিংবা দেশগত ভিন্নতার কারণে হয়তো কেউ আগ্রহ পায়নি। সেই আগ্রহটাই তৈরি করে দিয়েছে ‘প্যারাসাইট’।
এবারের গোল্ডেন গ্লোব জিতে বং জুন-হো বলেছিলেন, ‘আমরা যখন সাবটাইটেলের দুই ইঞ্চি উপর থেকে সিনেমা দেখা শুরু করবো তখন থেকেই সেটা উপভোগ করা যাবে।’ ঠিক এখানেই প্যারাসাইটের সার্থকতা। এখানেই ইতিহাস তৈরি করেছে প্যারাসাইট। যে কাজটা আর দশটা ফিল্ম করে দেখাতে পারেনি, সেটাই বাস্তবরূপ দিয়েছে এই সিনেমাটি।
অস্কারের সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতে প্রায় শতবর্ষের অস্কার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বিদেশী চলচ্চিত্র এ সম্মান অর্জন করলো। শুধু অস্কারই নয়- এ ভূবনের সবচেয়ে সম্মানিত চলচ্চিত্রের আসর কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শুরু করে গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, স্ক্রিন এক্টর্স গিল্ড এওয়ার্ডসসহ উল্লেখযোগ্য প্রতিটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই ছিলো প্যারাসাইটের জয়জয়কার।
অস্কারের ইতিহাসে মোট দশবার আন্তর্জাতিক কোনো চলচ্চিত্র সেরা চলচ্চিত্রের নমিনেশন পেয়েছিলো, প্যারাসাইটের আগ পর্যন্ত অস্কারজয়ী আলফেন্সো ক্যুরোন পরিচালিত রোমা চলচ্চিত্রটি খুব কাছাকাছি গিয়েছিলো অস্কারের। তবে সেরা চলচ্চিত্র বাদে তিনটি অস্কার জিতেছিলো রোমা।
অবশেষে ফরেন ফিল্মের সেই সাবটাইটেলের ট্যাবু ভাঙলো প্যারাসাইট। এই কারণে পরিচালক বং জুন-হো একটি ধন্যবাদ পেতেই পারেন। মার্টিন স্করসেসি, কুয়েন্টিন টারান্টিনো, স্যাম মেন্ডেসের মতো লিজেন্ডারি পরিচালকদের পেছনে ফেলে জিতেছেন তিনি। এই জয় চাট্টিখানি কথা নয়। এ বছর ফরেন ফিল্মের নামে অস্কার ফাজলামোর একটা বিহিত করে দিয়েছে প্যারাসাইট।
আরো পড়ুনঃ ৯২তম অস্কারের সাতকাহন: প্যারাসাইটের জয়জয়কার!