এই দেশ, এই পৃথিবী, এই মানুষদের জন্য করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আমাদের জনসংখ্যায় এতো বিস্তৃত একটা দেশ, তার এতো বিস্তৃত একটা সমাজ মরে গেছে সীমাহীন কুসংস্কার আর মাটিতে মুখ গুঁজে থাকার স্বভাব নিয়ে। কী সহজ মৃত্যু, কী নিদারুণ!
মেহেদী হাসান মুন: এই দেশ, এই পৃথিবী, এই মানুষদের জন্য করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে। বিগত এক সপ্তাহে ৩টা ঘটনা মনে ক্ষত তৈরি করেছে। প্রতিদিন পত্রিকা পড়ি, এড়িয়ে যাই, সেরকম হয় নি এসব ক্ষেত্রে।
১) দিলু রোডে এক পরিবারের ৩ জন আগুনে পুড়ে মারা গেলেন। প্রথম দিন খবর এলো বাচ্চাটা মারা গেছে। ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকের পরিচিত আপু বলে চোখের সামনে প্রোফাইলটা এলো। ক্লিক করে ঢুকলাম, হাস্যোজ্জ্বল পরিবারের ছবি। আপু স্ট্যাটাস দিয়ে ঘুমোতে গেলেন কবে শুক্রবার আসবে অথচ ওনার বাঁচাই হল না। শরীরের ৯৫% অংশ পুড়ে লাইফ সাপোর্টে ছিল কাল পর্যন্ত।
বাচ্চাটা দুর্ঘটনার দিনই মারা গেছে। আপুও চলে গেলেন কাল। আজ সকালে পত্রিকাতে এই খবর পড়ছি, শুনলাম ভাইয়াও মৃত্যুবরণ করেছেন। অফিসের এক বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন, ওই ভাই আজ জানাজা পড়ে এসে বললেন- ছেলের বাবা দুঃখ করে বলছিলেন পুরো বংশই ওনার শেষ হয়ে গেল। একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ, একমাত্র নাতি সবাইকে হারালেন। কী সহজ মৃত্যু, কী নিদারুণ!
২) সিলেট থেকে ঢাকা ঘুরতে এসেছিল একটি পরিবার। আমি যে এলাকায় থাকি সেখানেই আত্মীয়ের বাসায় উঠেছিল। ঘোরা শেষে সিলেট যাবেন ফিরে, ভোরের ট্রেন ধরার জন্য রওয়ানা দিয়েছিলেন। এক রিকশায় স্ত্রী, সন্তান আর অন্যটিতে আরেক সন্তান ও স্বামী। মুগদা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল রিকশা দুটি। পাশ থেকে এক প্রাইভেট কারে করে ছিনতাইকারী চক্র মহিলাটির হাতের ব্যাগ ধরে টান দেয়, আর মহিলা সেখানেই রাস্তায় পড়ে গিয়ে স্পট ডেড। খবরের শেষ লাইনদুটো খুব বেদনার। লাশের কাছে থাকা ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নগদ দু হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন। কী সহজ মৃত্যু, কী নিদারুণ!
৩) একটি দশ বছরের মেয়ে। শেরপুরে দাদির সাথে থাকে। বাবা আর মায়ের বিচ্ছেধ হয়ে গেছে, দুই পরিবারের কেউই মেয়েটিকে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছিল না। দাদির সাথে থাকতো বাচ্চা মেয়েটা, অভিমান করে আত্মহত্যা করে ফেলেছে। লিখে গিয়েছে যে- ভালোবাসাহীনতাই ছিল তার মৃত্যুর কারণ। এটুকু পড়েই যদি আপনার মুখ ফুটে চলে আসে- কী সহজ মৃত্যু, কী নিদারুণ। তাহলে বলার আগে শুনে নিন আরও একটু।
পরের দিন অবাক বিস্ময়ে পত্রিকায় পড়লাম ওই মেয়েটিকে পারিবারিক কবরস্থানে এমনকি এলাকার কবরস্থানেও কবর দিতে দেয় নি প্রতিবেশীরা। বাচ্চা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে পাড়ার মাঝে কবর দিলে নাকি খারাপ প্রভাব পড়বে, মানুষ ভয় পাবে। বুড়ো দাদির হেঁটে যেতে কষ্ট হয় তার নাতনীর কবরের কাছে। এতোটুকুন একটা মেয়ে, যার এতোটুকুন একটা হৃদয় সে পাহাড়সমান অভিমান নিয়ে মরে গেছে।
আর আমাদের জনসংখ্যায় এতো বিস্তৃত একটা দেশ, তার এতো বিস্তৃত একটা সমাজ মরে গেছে সীমাহীন কুসংস্কার আর মাটিতে মুখ গুঁজে থাকার স্বভাব নিয়ে। কী সহজ মৃত্যু, কী নিদারুণ!