যে করোনাভাইরাস মানবজাতির জন্য মহামারি নিয়ে এসেছে। দীর্ঘ কয়েক মাসের প্রচেষ্টায়, অবেশেষে খোঁজ পাওয়া গেলো সেই ভাইরাস ছড়ানো প্রথম রোগীর। যার মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ৮ লাখের বেশি মানুষ, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৯ হাজার। ভাবা যায়?

সন্ধান মিলেছে বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর। গবেষকদের ভাষায় যাকে বলা হয় পেশেন্ট জিরো। এই রোগী থেকেই ছড়িয়েছে করোনা, যা শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত করেছে ৮ লাখের বেশি মানুষকে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৯ হাজার। চীনের উহানের বাসিন্দা ঐ নারীর নাম প্রকাশ করেনি দেশটির গণমাধ্যম। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল দাবী করেছে, চীনা সেই মহিলা পেশায় চিংড়ি মাছ বিক্রেতা। নাম ওয়েই গুইশিয়ান। বয়স ৫৭ বছর। আক্রান্ত হবার পর স্বাভাবিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। অথচ অসুস্থ হয়ে গেছে বিশ্ববাসী।   

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছিলো আক্রান্ত হওয়া প্রথম মানুষটিকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা চাচ্ছিলেন এই ভাইরাস প্রথমে যার মাধ্যমে ছড়িয়েছে তাকে নিয়ে গবেষণা করতে। কারণ, তাকে নিয়ে গবেষণা করলেই জানা যাবে কেন, কীভাবে এবং কোথায় এই সংক্রমণের শুরু। জানা যাবে প্রতিরোধের উপায়। সহজ হবে এর ভ্যাক্সিনের আবিস্কার।

দীর্ঘ কয়েক মাসের প্রচেষ্টায়, অবেশেষে খোঁজ পাওয়া গেলো আক্রান্ত হওয়া সেই প্রথম রোগীর। এই সেই পেশেন্ট জিরো, যার মাধ্যমে প্রথম ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। চীনা গণমাধ্যমে সবকিছু খোলাসা না করে বললেও, মার্কিন গণমাধ্যম কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে এই পেশেন্ট জিরোর ব্যাপারে। উহান শহরের সামুদ্রিক মাছের যে পাইকারি বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলা হয়েছে, সেখানেই কাজ করেন পেশেন্ট জিরো ওয়েই গুইশিয়ান। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকার সংস্থা স্বীকার করেছিলো যে ঐ বাজার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিলো।

নাম প্রকাশ না করলেও চীনা গণমাধ্যম দ্য পেপার বলেছে, গত ১০ই ডিসেম্বর জ্বর নিয়ে সামান্য ফ্লু হয়েছে ভেবে স্থানীয় একটি হাসপাতালে যান ঐ নারী। ইঞ্জেকশন দেবার পর আরও দুর্বল অনুভব করেন। একদিন পর উহানের ইলেভেন্থ হাসপাতালে যান তিনি। অবস্থার উন্নতি না হলে, ১৬ই ডিসেম্বর ভর্তি হন উহানের ইউনিয়ন হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার মতো উপসর্গ নিয়ে সেখানে এসেছেন আরো অনেকেই, সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকেই।

৩১শে ডিসেম্বর উহান পৌর স্বাস্থ্য কমিশন নিশ্চিত করে, করোনা আক্রান্ত ২৭ জনের মধ্যে একজন হলেন ঐ নারী। বাকীদের মধ্যে ২৪জনই সরাসরি ঐ মাছ বাজারের সাথে সম্পৃক্ত। ঐ সময়ে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে চীনের করোনাভাইরাসের এই পেশেন্ট জিরো নিয়ে এখনও অনেক রহস্য রয়েছে। ওয়েই গুইশিয়ান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম মানুষ হলেও, প্রথম শনাক্ত হওয়া রোগী ছিলেন না। সত্তর বছর বয়স্ক আরেক ব্যক্তি ছিলেন করোনাভাইরাসে শনাক্ত হওয়া প্রথম রোগী। 

এই করোনাভাইরাস মানবজাতির জন্য পঞ্চম মহামারি নিয়ে এসেছে। করোনাভাইরাসের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা আছে। তারা নতুন নতুন প্রজাতির শরীরে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। ফলে করোনাভাইরাস সরাসরি সংক্রমিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। একাধিক বৈশিষ্টের করোনাভাইরাসের মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টির ক্ষমতা রয়েছে মানুষকে আক্রান্ত করার। নোভেল কোভিড-১৯ হচ্ছে করোনাভাইরাসের সপ্তম প্রাণঘাতী সংক্রামক স্ট্রেইন, যা মানবদেহে এর আগে কখনো সংক্রামিত হয়নি। তাই এই রকম ভাইরাসের বিস্তারের বিরুদ্ধে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি গ্রহণের জন্য মানবজাতির আরো গবেষণা প্রয়োজন।

ওদিকে উনানে সামুদ্রিক মাছের ঐ মার্কেট থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর যতক্ষণে স্বীকারোক্তি এসেছে, ততক্ষণে এক মাস কেটে গিয়েছিলো। জানুয়ারির দিকে সুস্থ হতে শুরু করেন প্রথম আক্রান্ত সেই নারী ওয়েই গুইশিয়ান। বলা হচ্ছে, তিনি ঐ মার্কেটে মাংস বিক্রি হয় এমন একটি অংশের টয়লেট ব্যবহার করেছিলেন। সেখান থেকেই তার শরীরে সংক্রমণ হয়েছে। তিনি বলেছেন, তার সঙ্গে আরো যারা এ ব্যবসা করতেন তাদেরও একই রোগ হয়েছে। সরকার যদি আরো আগে ব্যবস্থা নিতো তাহলে এই ভাইরাসে মৃত্যু আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারতো। 

কী সহজ একটা গল্প, তাই না? একটা বার শুধু ভেবে দেখুন, চীন যদি সময় মতো না লুকিয়ে সঠিক পদক্ষেপটা নিতো তাহলে কতোগুলো প্রাণ বেঁচে যেতো এই জগতের। অথচ এই ঘটনাগুলো থেকেও আমরা শিক্ষা নেবো না। অন্ধ বিশ্বাসে বালিতে মাথা গুঁজে জীবনটা পার করে দেবো।   


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা