নব্বইয়ের দশক থেকে হ্যাকিং এর সাথে যুক্ত পেইতার জাতকো। সেই হ্যাকারকেই টুইটার এনেছে সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে। অন্যদের হ্যাকিং এর হাত থেকে টুইটারকে বাঁচানোই হবে এই হ্যাকারের প্রধান কাজ, এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ফর্মুলা!

টম হ্যাংকস ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত বিখ্যাত সিনেমা 'ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান' আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন। যদি এখনো না দেখেন, দেখতে পারেন। আর যারা দেখেছেন, মেমোরি আবার একটু রিফ্রেশ করে দিই। এফবিআই এজেন্ট টম হ্যাঙ্কস আর জোচ্চোর ডিক্যাপ্রিও এর চোর-পুলিশ খেলার এই সিনেমার শেষের অংশটা খুব ইন্টারেস্টিং। সিনেমার শেষে এসে ডিক্যাপ্রিওকে পাকড়াও করার পরে এফবিআই এর সিকিউরিটির কাজেই বসিয়ে দেন হ্যাংকস। এই বিষয়টিকে বাংলাতে একটি বাগধারার সাহায্যে খুব সুন্দরভাবে বলা হয়- 'কইয়ের তেলে কই ভাজা।'

এ তো গেলো সিনেমার কথা। আসা যাক গুগলের 'সিকিউরিটি প্রিন্সেস' পারিসা তাব্রিজের কথায় এবার। তিনি যে গুগলের নিরাপত্তার জন্যেই একদল হ্যাকার পালেন, তা তো সবারই জানা। হোয়াইট কলার হ্যাকারদের টাকা দিয়ে গুগলের নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে, সেটা অনেক পুরোনো খবরও। যারাই গুগলের সিকিউরিটি সিস্টেমকে কখনো না কখনো হ্যাক করতে গিয়েছেন, পারিসা তাব্রিজ তাদের সরাসরি গুগলে চাকরী করার সুযোগ করে দিয়েছে। কথা একটাই, কইয়ের তেলে কই ভাজতে হবে। যাদের থেকে ভয়ের সম্ভাবনা আছে, তাদেরকেই রাখতে হবে হাতের নাগালে। সান জু'র 'দ্য আর্ট অব ওয়্যার' বইয়ের মতন- শত্রুকেই রাখতে হবে বুকের সবচেয়ে কাছে। 

এই ইন্টারেস্টিং কনসেপ্টটি সম্প্রতি আমরা আবার খেয়াল করি জায়ান্ট সোশ্যাল মিডিয়া সাইট টুইটারের ক্ষেত্রেও। ইদানীংকালের মধ্যে আমরা কয়েকজন বিখ্যাত মানুষের টুইটার একাউন্ট হ্যাক হবার ঘটনাও শুনেছি। যে তালিকায় আছেন বারাক ওবামা, জো বাইডেন, ইলন মাস্কের মতন হোমড়াচোমরা মানুষও। সাইটের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তার ভাঁজ যে ছিলো টুইটারের কর্তাব্যক্তিদের উপর, তা বোঝাই যাচ্ছিলো। সেই সমস্যা কাটাতেই তারা করলেন এক অদ্ভুত কাজ। বিশ্বের একজন সেরা হ্যাকারকে টুইটারের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়ে দিলেন। 

টুইটারের নিরাপত্তার দায়িত্ব পাওয়া হ্যাকার, পেইতার জাতকো হ্যাকিং জগতে পরিচিত 'মাজ' নামে। নব্বইয়ের দশকে হ্যাকিং এর জগতে আসা এই মানুষটি সময়ের ফেরে হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা হ্যাকার। তিনি সরকারের বিভিন্ন গোপন প্রকল্পে কাজ করেছেন। করেছেন নানারকম বিচিত্র কাজও। ইলেক্ট্রনিক লেনদেন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন অনেকদিন। গুগলের টপ প্রায়োরিটি কয়েকটি প্রজেক্টেও ছিলেন তিনি। নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। 

টুইটারের সিকিউরিটি বেশ কদিন ধরেই আছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে!  

টুইটার তাই তাদের নিরাপত্তার জন্যে এই মানুষটিকেই ভেবেছেন উপযুক্ত প্রার্থী। তিনি আপাতত দুই মাস সময় নিয়ে টুইটারের নিরাপত্তার খুঁটিনাটি সবকিছু পর্যালোচনা করবেন। দুই মাস পরে  তিনি যুক্ত হবেন টুইটারের মূল নিরাপত্তা-প্রক্রিয়ার সাথে। তবে জাতকো যেহেতু এসব কাজ নিয়েই ছিলেন জীবনের অনেকটা সময়, তাই আশা করাই যায়- তিনিই হয়তো টুইটারের অপহৃত সুনাম ফিরিয়ে আনবেন। 

জাতকো এখন কী করতে পারেন সামনে, সেটিই দেখার বিষয়। হ্যাকিং ইস্যু, টুইটার কর্মীদের নিয়ে নানাবিধ গুজব...এসব কারণে 'খুঁদে ব্লগিং সাইট' টুইটার বেশ অনেকদিন ধরেই ব্যাকফুটে। নতুন এই স্ট্রাটেজিকে সামনে রেখে তারা আবার আলোচনার মূলধারায় ফিরতে পারবে কী না, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এখন। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা