আপনি এই কবরস্থানে গিয়ে প্রথমবার নিশ্চিত বিভ্রান্ত হবেন এবং ভাববেন আসলেই কি এটি কবরস্থান কি না! কারণ, আপনার কানে হঠাৎ করেই ভেসে আসবে গানের আওয়াজ, গিটারের টুং টাং।

আলবেয়ার কামুর দ্য আউটসাইডার বইয়ের নায়কের কথা কারো মনে আছে কি? নিরাসক্ত নায়ক, যার মনে শোকের কোনো অনুভূতি জাগে না। মায়ের মৃত্যুতে তার নিরাসক্ত, নিরাবেগ মনোভাব দেখে সে নিজেই চমকে যায়। বাস্তবে এমন চরিত্র আছে কিনা জানি না, কিন্তু মৃত্যুতে কাঁদে না এমন অনেক মানুষই আছে। হ্যাঁ, একটা মৃত্যু শোকের বিষয়, তবে শোক মানেই কেঁদে, বিলাপ করে বুক ভাসানো কি? গতানুগতিক সমাজে আত্মীয়দের কেউ মারা গেছে এবং আপনি কাঁদছেন না এটাও যেন একটা অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়।

তবে, যদি আপনি কখনো পেরুতে যান, মৃত্যুর পরের শোক সম্পর্কে আপনার ধারণাই বদলে যাবে। সেখানে, মৃত্যুকে মানুষ এমনভাবে আমন্ত্রণ জানায়, মৃতদেহকে এমনভাবে বিদায় জানায় যে আপনি নতুন করে ভাবতে হয়ত বাধ্য হবেন যে, এমন বিদায়ও তো খারাপ না। নাস ডেইলি একটি ভিডিও করেন দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় কবরস্থানে গিয়ে।

এই কবরস্থানটি পেরুতে অবস্থিত। আপনি এই কবরস্থানে গিয়ে প্রথমবার নিশ্চিত বিভ্রান্ত হবেন এবং ভাববেন আসলেই কি এটি কবরস্থান কি না! কারণ, আপনার কানে হঠাৎ করেই ভেসে আসবে গানের আওয়াজ, গিটারের টুং টাং। কবরস্থানের মধ্যে মানুষের জটলা এবং কার্যক্রম দেখে মনে হবে এখানে পার্টি চলছে। বাস্তবিকই এটি একপ্রকারের পার্টিই। পেরুর এই কবরস্থানে মানুষ প্রিয়জনকে দুঃখভারাক্রান্ত মন দিয়ে বিদায় দেয় না। এখানে বিদায় হয় অনেকটা থ্যাংকসগিভিং একটা ভাইব ধরে রেখে।

উৎসবের মধ্য দিয়ে এখানে বিদায় দেওয়া হয় প্রিয়জনদের

ধরুন, আপনি মারা গেছেন। কী করতে পারি আপনার জন্য এখন? কাঁদব? সবাই হয়ত লোক দেখানো কাজটাই করবে। কিন্তু পেরুতে এমন হবে না। আপনি মারা গেলেন, আপনাকে স্মরণ করে, আপনার কন্ট্রিবিউশনকে স্মরণ করে, পৃথিবীতে আপনার এতদিনকার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে আপনাকে যেন অনেকটা ফেয়ারওয়েল দেয়া হবে এই গানবাজনা, পার্টির মধ্য দিয়ে। এরকমটাই ঘটে থাকে পেরুর এই কবরস্থানে। 

এখানে মৃতদেহকে বিদায় জানাতে বেশ অভিনব আয়োজনই করা হয়। ব্যান্ড পার্টি বাজনা বাজায়। চারদিকে সবাই বিভিন্ন স্মৃতি রোমন্থন করে হাসাহাসি করে। কেউ কেউ বিয়ার খায়। মনে হয় মারা যাওয়াটা যেন বড় আনন্দের ব্যাপার! 

পেরুতে মৃত্যুকে উদযাপন করার সংস্কৃতিটা বেশ মনে ধরেছে আমার। এই যেমন মৃত্যুর প্রথমদিনে এখানে বিশাল ফিস্ট হয়। ধুমধাম খাবার দাবারের আয়োজন। উল্লেখ করার মতো ব্যাপার কেন এটা? যে খাবারগুলো রান্না করা হয় সবগুলোই সদ্য মৃত মানুষটার প্রিয় খাবার। তার পছন্দকে ভালোবেসেই, তার মৃত্যুতে প্রিয় খাবারগুলো রান্না করা হয়! 

মৃত্যু একদিন সবারই হবে। তাই এটাকে সহজভাবে নেয়াই যেন পেরুর এই মরণ-উদযাপনের বার্তা। পেরুর এই সংস্কৃতিটা মনে বেশ দাগ কেটেছে। অযথা কান্নাকাটির চেয়ে এভাবে মৃত্যু পালন হলে খারাপ হয় না। আমার মৃত্যুও এরকমভাবে উদযাপিত যদি হয়, ভালই হবে। একটা দিন আমার পছন্দের খাবারগুলো সবাই মিলে খাবে, সবাই মিলে বিদায় মুহূর্তে গান গাইবে- পুরানো সেই দিনের কথা। কেউ কেউ মজার কোনো স্মৃতি ভেবে হাসাহাসি করবে এবং মনে মনে আমাকে বেঁচে থাকার জন্য ধন্যবাদ দেবে। আহ! সুন্দর না? সুন্দরই তো!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা