পিৎজ্জা শুনলে এখনকার যুগে বেশ একখানা অভিজাত অভিজাত ভাব আসলেও আদতে পিৎজ্জা কিন্তু অভিজাত কোনো খাবার ছিল না।

পিৎজ্জা! কি, শুনেই জ্বিভে জল চলে এলো তো! এই পিৎজ্জার গল্পই বলব এবার! পিৎজ্জা রাজ্যের এক রাণীও কিন্তু আছে, তা জানেন কি? সেটিও বলব, একটু অপেক্ষা করুন। পিৎজ্জা শুনলে এখনকার যুগে বেশ একখানা অভিজাত অভিজাত ভাব আসলেও আদতে পিৎজ্জা কিন্তু অভিজাত কোনো খাবার ছিল না। বরং পিৎজ্জার শুরুটা হয়েছিল ইতালীর নেপলস্-এর গরীব মানুষের খাবার হিসেবে। শুধু শুধু রুটি চিবিয়ে খাওয়াটা কষ্টকর বলে রুটির উপরে উচ্ছিষ্ট কিছু সব্জী-সস্ ইত্যাদি ছড়িয়ে স্বাদটাকে একটু বাড়িয়ে রুটি খাওয়ার চেষ্টা হিসেবেই পিৎজ্জা'র জন্ম। মজার ব্যাপার হচ্ছে রোমের লোকেরা কিন্তু মোটেও পিৎজ্জা পছন্দ করত না, বরং গরীবের খাবার হিসেবে তাচ্ছিল্যই করত! কারণ, অতীত ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে রোমানরা পুরো ইতালীর ভেতরেই বেশ খানিকটা অভিজাত কি না! পিৎজ্জা তাই ছিল মূলত রোম থেকে আড়াইশ কিলোমিটার দূরের নেপলস রাজ্যের খাবার, যে নেপলস্ এখন ইতালীর তৃতীয় বৃহত্তম নগর।

যা হোক, গরীবদের খাবার এই 'পিৎজ্জা' জাতে উঠল কীভাবে জানেন? সেই গল্পটাও বেশ মজার। আজ থেকে মাত্র সোয়াশ' বছর আগের কথা। ইতালীর রাজা তখন 'আমবার্তো দ্যা ওয়ান'। ১৮৮৯ সালে রাজা একবার গেলেন নেপলস্ ভ্রমনে, সাথে রাণী 'মার্গারিটা'। নেপলসে পৌঁছে রাণী বায়না করলেন পিৎজ্জা নামক নেপলসের নতুন খাবারখানা একটু চেখে দেখবেন। শোনা যায় একজন দাসীর কাছে থেকে রাণী মহাদয় এই খাবারটির স্বাদের ব্যপারে গল্প শুনেছিলেন। যা হোক রাজা প্রথমে গরীবদের এই খাবার রাজপ্রাসাদে ঢুকতে দিতে খুব বেশী আগ্রহী ছিলেন না, তারপরও রাণীর শখ বলে কথা। রাজা হোক কিংবা সাধারণ মানুষ- এ ধরার বুকে বউয়ের কথা কেই বা কবে না শুনে থাকতে পেরেছে বলুন! সুতরাং, আদেশ হলো রাণীর জন্য পিৎজ্জা বানাবার।

ডাক পরল নেপলসের বিখ্যাত রুটিওয়ালা 'রাফায়েল এস্পোসিতো'র। ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীসহ ঢুকলেন রাজকীয় রান্নাঘরে। পিৎজ্জা বানাবার জন্য তৈরী করা হলো বিশেষ ধরণের চুল্লী। সেই চুল্লীতে রাফায়েল তৈরী করলেন বিশেষ ধরণের এক পিৎজ্জা। ইতালীর পতাকার তিন রং- সবুজ, সাদা ও লাল- এর অনুকরণে পিৎজ্জায় তিনি দিলেন সবুজ বেসিল পাতা, সাদা রংয়ের মোজেরেলা চীজ ও লাল রংয়ের টমেটো সস! উনুন থেকে রাণীর সামনে পরিবেশন করা হলো গরম গরম পিৎজ্জা।

পিৎজ্জা মার্গারিটা

রাণী মার্গারিটা পিৎজ্জা খেয়ে যাকে বলে মুগ্ধ! মুগ্ধতার মাত্রা এতই চরম ছিল যে তিনি সেই পিৎজ্জাকে নিজের নামখানাই দান করে দিলেন! বিশেষ ধরণের এই পিৎজ্জার নাম হলো 'পিৎজ্জা মার্গারিটা'! তখনকার দিনে এটি ছিল রীতিমত সর্বোচ্চমানের এক বিরল সন্মান! ব্যস্! এই সংবাদ বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ল সারা ইতালীতে! আর সাথে সাথে পিৎজ্জার সম্মান গেল বেড়ে। গরীবের চুলা থেকে এক লাফে পিৎজ্জা উঠে গেল অভিজাতদের ডাইনিং টেবিলে! 'রাফায়েল এস্পোসিতো' ইতিহাসে ঢুকে গেলেন পিৎজ্জার জন্মদাতা হিসেবে! ইতালীর সীমানা ছাড়িয়ে শুরু হলো পিৎজ্জার বিশ্বজয় ! আর 'পিৎজ্জা মার্গারিটা' অভিষিক্ত হলো পিৎজ্জা রাজ্যের ‘রাণী’ হিসেবে- চিরকালের জন্য!

এই গল্প জানার পর নেপলসে গিয়ে কি আর পিৎজ্জা না খেয়ে থাকা যায় বলুন? তাই এবার ইতালী ট্রিপে নেপলসে পৌঁছে খুঁজে খুঁজে বের করলাম সেই পুরানো এক বিখ্যাত পিৎজ্জা রেস্টুরেন্ট, এখন যেটি চালাচ্ছে সেই রাফায়েলের নাতী-পুতি কেউ একজন! পাহাড়ের ঢালে এই রেস্টুরেন্টে গেল শত বছর ধরে পিৎজ্জা বানানো হচ্ছে রাফায়েলের করা সেই আদি পদ্ধতি অনুযায়ী- বিশেষ ধরণের চুল্লিতে চারকোল আর কাঠ কয়লা ব্যবহার করে! চুল্লির পাশেই বসার জায়গা। অর্ডার দিলাম পিৎজ্জার রাণী 'পিৎজ্জা মার্গারিটা'! কিছুক্ষণ পর বের হয়ে এলেন তিনি- গোলগাল, গরম গরম, ধোঁয়া ওঠা, উপরের ছবিতে যাঁকে দেখছেন আর কি! তারপর আবার কী! গলায় ন্যাপকিন বেঁধে ঝাপিয়ে পড়া। আহ্ কী তার ঘ্রাণ! কী তার স্বাদ! তা কি আর লিখে বুঝানো যায়! এই রে! লিখতে লিখতে আবারও জ্বিভে জল চলে এলো! ধ্যুর ছাই!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা