যারা প্লেনে চড়েছেন, তাদের কথা আলাদা। আমরা যারা প্লেনে উঠিনি, জীবনে কোনো না কোনো দিন প্লেনে উঠবো নিশ্চয়ই! আশা করতে তো দোষ নেই। তার আগে জেনে নেই কিছু বেসিক তথ্য।
ছোটবেলায় বাংলাদেশের বাইরে বাকি সব কিছুকে বিদেশ বলেই জানতাম। বিদেশফেরত কাউকে দেখলেই কত কিছু জানতে ইচ্ছে হতো! আচ্ছা ওই বিদেশে কি টাকা চলে, নাকি অন্য কিছু? আচ্ছা আপনারা কি খাবার খান? পোকামাকড়? আপনাদের ওখানে কি কি পাওয়া যায়? কত প্রশ্ন ! প্রশ্নের শেষ নেই। ছোটবেলায় কেউ বিদেশ থেকে আসবে শুনলে খুব অপেক্ষা করতাম। নিশ্চয়ই আসার সময় কত চকলেট, বিস্কুট, খেলনা নিয়ে আসবে সে। আকাশের ওপর উড়োজাহাজ দেখলেই মনে হতো এটাতেই করেই আসছে বুঝি! ভিনদেশ থেকে কেউ আসলে অন্যান্য হাজার রকম প্রশ্নের সাথে যোগ হতো, বিমানে চড়তে ভয় লাগে না? খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিমানের ভেতরের কি হয় সব কিছু সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম। কত কিছুই তারা বলেছেন। কিন্তু বিমানে কি করা উচিৎ নয়, সেসব বলেননি। তাই জানার চেষ্টা করলাম, সঙ্গে জানানোরও।
বিমান ওঠানামার সময় ঘুমালে বিপদ
যখন রানওয়ে থেকে বিমান ওড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে এবং যখন বিমান গন্তব্যে পৌঁছে রানওয়েতে নামতে থাকে, ওই মুহুর্তে আপনার কানের ভেতর চারপাশের বাতাসের প্রেশার খুব দ্রুত বেড়ে যাবে। এই আচমকা বাতাসের গতির সাথে ব্যালেন্স করার জন্য তখন চুইংগাম চাবানো যেতে পারে। অথবা মুখ দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে নাক বন্ধ করে রাখতে হবে। যদি তা না করেন কিংবা ঘুমিয়ে পড়েন, তাহলে খুব অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। বাতাসের চাপে আপনার কানের শ্রবণশক্তি কিছুটা কমেও যেতে পারে!
খালি পায়ে হাঁটা উচিৎ না
ফ্লাইট এটেন্ডেন্টসরা বলেন, তারা প্রায়ই দেখেন বিমানে উঠেই কিছু মানুষ খালি পায়ে হাঁটা শুরু করে। তারা বাথরুমে যাওয়ার জন্য কিংবা গ্যালারির আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে যায় খালি পায়ে। এটি অবশ্যই অনুচিত। কারণ, বিমানের কার্পেটগুলো নানানরকম জীবানু ভর্তি থাকে। তাছাড়া অনেকসময় যাত্রীরা গ্লাস ফেলে দেয়, ভাঙ্গা কাঁচের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা কার্পেটে আটকে থাকে। এতে পা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই খালি পায়ে হাঁটা কারোই উচিৎ নয়।
পুরো জার্নিতেই সিটের মধ্যে বসে থাকবেন না
অনেকে প্রথমবার বিমান যাত্রায় নার্ভাস থাকেন। তাই সারাক্ষণই হয়তো সিটের মধ্যে চুপচাপ বসে থাকেন। কিন্তু বিমানের মধ্যে সারাক্ষণ বসে থাকলে পায়ের মধ্যে রক্তজমাটের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাই কিছু সময় আশেপাশে হাঁটলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়া বিমান ভ্রমণে অতিরিক্ত আঁটসাঁট জামা না পড়াই শ্রেয়।
অতিরিক্ত মদ্যপান নয়
বিভিন্ন সিনেমাতেও এমন দেখানো হয়। এয়ার হোস্টেসরা কী চমৎকার ওয়াইন আর গ্লাস দিয়ে যায়। যদি ওসব দেখে ভাবেন জীবনের প্রথম বিমানযাত্রায় প্রচুর মদ খাবেন, তাহলে সিদ্ধান্তটা একটু পরিবর্তন করুন। এলকোহল শরীরকে শুষ্ক করে দেয়। বলা হয়, বিমানের এক পেগ মদ জমিনের দুই পেগ মদ্য পানের সমান! শরীরে খুব দ্রুত এফেক্ট করে। যা আপনার পুরো যাত্রাকে মাটি করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।
আছে জীবানুর ভয়
অনেকে আছেন যারা এমন কিছু কাজ করবে যাতে মানুষ বোঝে যে তারা বিমানের রেগুলার যাত্রী, বিমানে খায় বিমানে ঘুমায়। একটু ওভারস্মার্টন্যাস দেখানোর জন্যে তারা বিমানে শর্ট প্যান্টও পড়ে। কিন্তু এটি অনুচিত। কারণ, আপনি যে সিটে বসবেন ইতিপূর্বে ওই জায়গায় আরো সহস্র মানুষের পশ্চাতদেশ পড়েছে। এলার্জিসহ নানান রোগ হয়তো আপনি উপহার হিশেবে পেয়ে যেতে পারেন ওভারস্মার্টন্যাস দেখাতে গিয়ে। বিমানের যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি জীবানুর বিচরণ সেটা হচ্ছে বাথরুম। এখানে নিজেকে জীবানুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে ভালো ভাবে হাত ধুয়ে তারপর কাগজের টিস্যু দিয়ে ফ্ল্যাশ বাটন প্রেস করুন।
হঠাৎ খারাপ বোধ করলে...
প্রথমবার বিমানে যাত্রা করলে আপনার খারাপ লাগতেই পারে। কখনো বমি ভাব আসতে পারে। মাথা ঘুরাতে পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়। নার্ভাসনেস থেকেও এমন হতে পারে। তাই যদি খারাপ অনুভব করেন, কেবিন ক্রুদের সাথে সাথে জানান। কারণ, তাদেরকে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে ট্রেইনিং দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে তারা খুব ভালো ধারণা রাখেন।
পানীয়র মাঝে বরফ ব্যবহার বাদ দিন
২০০৪ সালের একটি গবেষণায় জানা যায়, বিমানে যে পানি সাপ্লাই করা হয় তার মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়! বাদ বাকি পানি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিমানে বিভিন্ন পানীয়র সাথে যে বরফ দেয়া হয় সেগুলোও তৈরি হয় ওই সাপ্লাইয়ের পানিতে।
চা-কফি বেশি নয়
বিমান ভ্রমণে চা-কফিসহ ক্যাফেইন মিশ্রিত খাবার শরীরকে পানিশূন্য করে দেয়। এগুলো পরিহার করাই শ্রেয়। আর বিমানে উঠলে অন্যান্য পানীয়র চেয়ে বোতলজাত মিনারেল ওয়াটার বেশি খাওয়া উচিৎ।
এবং অবশ্যই, বিমানে বসে বোম নিয়ে জোকস নয়!
আমাদের অনেকের অভ্যাস স্থান-কাল-পাত্র না বুঝেই জোক করা। লঞ্চে উঠে যেমন লঞ্চ ডুবে যাবে বলা ঠিক না, তেমনি বিমানে উঠে বিমান ব্ল্যাস্ট হবে, বোমের আঘাত আসবে এসব বিষয়ে ফাজলামো করেও কোনো কথা বলা ঠিক না। বিশেষ করে, বিমানের ফ্ল্যাইট এটেন্ডেন্টরা এসব শুনলে তারা বিমান থেকে যাত্রীকে সেই ফ্লাইট থেকে বের করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনার নিরপরাধ জোকস কখনো কখনো তারা নিরাপত্তার হুমকি ভেবে বসতে পারে।
রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে