একজন মানুষ পরিবর্তন করে দিচ্ছে হাজার মানুষের জীবন। আসলে চাইলেই নিজের অবস্থান থেকে সাহায্য করা যায়। শুধু দরকার একটু ইচ্ছে, একটু মহানুভবতা।

মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। অর্থাৎ, মানুষকে মূল্যায়ন করতে পারলেই সোনার মানুষ হওয়া সম্ভব। কাউকে আঘাত বা কষ্ট দিয়ে নয় ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে হবে। এটাই মানব ধর্ম। মানুষের মাঝেই মানুষ বিরাজ করে করে দেখেই লালন মানুষ ভজার কথা বলেছিলেন।

এ মানব ধর্মেই দীক্ষিত হয়ে ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক যুবক এগিয়ে এসেছেন আর্ত মানবতার সেবায়। ভেবেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে অনেক কিছু উদ্ভাবন করবেন। নতুন নতুন উদ্ভাবনের আইডিয়া জোগাড় করবেন। ক্লাসে খুব করে আইডিয়া চালাচালি হবে। পড়তে গিয়ে দেখলেন সবাই পাশের কথা বলে, শুধু ভালো রেজাল্টের পেছনেই ছোটে।

প্রশান্ত গাড়ে, তৃতীয় বর্ষে এসে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে রোবোটিক্স কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। সে কোর্সের একটি প্রজেক্ট ছিলো রোবোটিক হাত বানানো। সেটা করতে গিয়ে জানতে পারলেন প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষের হাত কাটা পড়ে শুধুমাত্র ভারতেই। এবং রোবটিক হাত বানানো খুব ব্যয়বহুল হবার কারণে ৮৫% মানুষের এভাবেই হাত ছাড়া জীবনযাপন করতে হয়।  

তিনি এক গরীব মেয়ের দুটি হাত বানানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেছিলেন, বিনিময়ে তারা ২৪ লাখ রুপি চেয়েছিলো। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেন, নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলবেন রোবটিক হাত বানানো এবং বিতরণ করবার জন্য একটি ফাউন্ডেশন। ২০১৫ সালে কয়েক মাস গবেষণা করে তিনি কম খরচে রোবটিক হাত বানাতে সক্ষম হন। ২০১৬ সালে গড়ে তোলেন ইনালি ফাউন্ডেশন।  

একজন দুস্থ মানুষকে রোটিক হাত লাগিয়ে দিচ্ছেন প্রশান্ত

এখনো পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি দুস্থ মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রস্থেটিক হাত বানিয়ে দিয়েছেন প্রশান্ত গারে। থ্রিডি প্রিন্টিং দিয়ে প্রস্থেটিক হাত বানানো শুরু করেছিলেন ২০১৬ সালে, বর্তমানে যে মডেলটি তৈরি করেছেন সেটা মস্তিস্কের সিগন্যাল থেকে সরাসরি কাজ করতে পারে। দশ কেজি ওজনের ভার বহণ করতে পারে এ রোবটিক হাত। যেকোনো মানুষের সাথে মানিয়ে নেয়ার মতো উপযোগী করে ডিজাইনটি বানানো হয়েছে।   

২৪ লাখ রুপির একজোড়া প্রস্থেটিক-রোবটিক, নিজে তৈরি করে বিনামূল্যে বিলাচ্ছেন তিনি। যাদের কেনার সামর্থ্য রয়েছে তাদের কাছ থেকে নিচ্ছেন মাত্র ৫০ হাজার রুপি। এক মহিলা অর্থাভাবে থাকা মহিলা এই ফাউন্ডেশনে আসে, তার একটি হাতে ছিলো না। প্রস্থেটিক হাত লাগিয়ে দেবার পর, মহিলাটি কিছুক্ষণ সেই হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে, ‘এখন আমি আমার মেয়ের মাথার চুল বেঁধে দিতে পারবো’। এমন ঘটনাই প্রশান্তের অনুপ্রেরণা। সে এভাবেই মানুষকে সাহায্য করে যেতে চায়। যাতে খুব বেশি করে এমন দৃশ্যগুলো দেখবার সৌভাগ্য হয়। আর এতেই লুকিয়ে রয়েছে প্রশান্তের অনুপ্রেরণার উৎস।

আসলে সাহায্য করার ইচ্ছে থাকলে উপায় বের হয়ে আসবেই। আমরা লেখাপড়া শুধু করি সমাজকে দেখানোর জন্য, পাশাপাশি চাকরি কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য। অথচ লেখাপড়ার যে একটা দায়বদ্ধতা আছে সেটা আমরা ভুলে যাই। প্রশান্ত গাড়ে সেটি ভুলেননি। তিনি যদি ভুলে যেতেন, তাহলে এতগুলো মানুষ তাদের হারানো হাত ফেরত পেতেন না। থ্রি-ইডিয়টসের ফুংসুক ওয়াংরুর মতো উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ প্রশান্ত গারে। এগিয়ে চলুক আপনার পথচলা।  

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা