২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কায় একটি কনসার্টে গিয়েছিলেন প্রীতি জিনতা, যেখানে বোমা বিস্ফোরণ হয়, ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। সে বছরেই সুনামির সময় তিনি থাইল্যান্ডে ছিলেন, ভাগ্যক্রমে সেবারও তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন!
আর্মি অফিসার বাবা চেয়েছিলেন তার মেয়ে এমন কিছু করুক- যেটা ডিফারেন্ট, অন্য দশটা কাজের থেকে আলাদা। মেয়েও সেটাই চাইতেন। তবে চাওয়ার সাথে পাওয়ার মিল তার বাবা দেখে যেতে পারেননি। মেয়ের বয়স যখন মাত্র ১৩, তখন তার বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান, সেই গাড়িতে মেয়ের মাও উপস্থিত ছিলেন। বাবা তো চলে গেলেন না ফেরার দেশে, মা বেঁচে গিয়েও মরে রইলেন, এই ঘটনার পর তিনি বিছানাতে চিরস্থায়ীভাবে বন্দী হলেন।
বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে তার মিষ্টি হাসি দেখে তাকে বিজ্ঞাপনের অফার করলেন এক পরিচালক। পার্ক চকলেট আর লিরাল সাবানের বিজ্ঞাপন করলেন তিনি। এরপরেই চলে আসলো সিনেমার প্রস্তাব। প্রথম সিনেমার নাম কেয়া কেহনা, তবে প্রথম মুক্তি পেল মনি রত্নম পরিচালিত শাহরুখ-মনীষার 'দিল সে'। সেই সিনেমাতে "জিয়া জালে" গানে তার মুগ্ধ উপস্থিতি এখনও নস্টালজিক করে তুলতে যথেষ্ট।
সিনেমার পাশাপাশি ততদিনে ক্রিমিনাল সাইকোলজিতে তিনি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন। কেয়া কেহনা মুক্তির পড়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়ল- অবিবাহিত এক মেয়েকে গর্ভবতী করে তার প্রেমিক পালিয়ে যায়- এটা ছিল সিনেমার বিষয়। তখনকার তুলনায় অনেক বেশি ট্যাবু একটা জিনিস। তবে তিনি ঘাবড়ালেন না, এই সিনেমা নিয়ে যতগুলো টক শো হলো তার বেশিরভাগে তিনি অংশ নিলেন, ফলাফল- কেয়া কেহনা সারপ্রাইজ হিট! এরপরে সোলজার, সংঘর্ষ, মিশন কাশ্মীর, দিল চাহতা হ্যাঁয়, কই মিল গেয়া, লক্ষ্য, হার দিল যো পেয়ার কারেগা, চোরি চোরি চুপকে চুপকে, কাল হো না হো, ভির জারা, কাভি আলভিদা না কেহনা এর মাধ্যমে শুধুই এগিয়ে যাওয়া।
গালে টোল পড়া সুন্দর হাসির এই মেয়ের নাম প্রীতি জিনতা। হাসি দিয়ে তিনি অনেকের মন জয় করেছেন। তবে বিপদ প্রায় সারাটি জীবন তার পিছনে লেগেই ছিল। চোরি চোরি চুপকে চুপকে সিনেমার প্রোডিউসার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফাতার হন। অন্ধকার জগতের মানুষেরা সব স্টারদেরকেই কম বেশি হুমকি দেন, যেগুলা তারা চেপে যান। কিন্তু প্রীতি সেটা করেননি, উল্টো আদালতে প্রমাণসহ বলেন অপরাধী তাকে কীভাবে হুমকি দিয়েছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই সাহসিকতার জন্য তাকে Bravery Award দেয়া হয়।
বিপদ প্রায়ই তার কানের পাশ দিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি গেছে ২০০৪ সালে। শ্রীলঙ্কায় একটি কনসার্টে গিয়েছিলেন যেখানে বোমা বিস্ফোরণ হয়, ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এই বছরেই সুনামির সময় তিনি থাইল্যান্ডে ছিলেন, ভাগ্যক্রমে এবারও তিনি বেঁচে যান। তবে এই ভাগ্যটা খুব বেশি ভাল যায়নি ব্যক্তিজীবনের ক্ষেত্রে, দীর্ঘদিনের ভালোবাসার মানুষ নেস ওয়াদিয়ার সাথে বেশ অনেক দিন আগেই ছাড়াছাড়ি হয়েছে, নেসের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন প্রীতি।
তবে যেকোনো ঘটনায় থেমে থাকায় বিশ্বাসী নন তিনি, হাতে নতুন কোন সিনেমা না থাকলেও নিজের আইপিএল দল দিয়ে খুব একটা মন্দ নেই তিনি। বেশ কিছু সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত আছেন।
"অভিনয় করতে হলে আপনাকে জানতে হবে যন্ত্রণা জিনিসটা কি। ভালোবাসার স্বরূপ আপনাকে বুঝতে হবে, বুঝতে হবে আপনাকে তিরস্কারের রূপও, তাহলেই আপনি অভিনয় শিখতে পারবেন"- অভিনয় সম্পর্কে এটা তার মন্তব্য।
হলিউড এর আল পাচিনো আর The Simpsons টিভি সিরিজের ডাই হার্ড ফ্যান তিনি। নিজে ভালোবাসা না পেলেও ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস উঠে যায়নি তার। ভালোবাসা সম্পর্কে তার মন্তব্য-
Love is always real and true love is even more real
বিয়ে করেছেন প্রায় চার বছর হলো, স্পেশাল একটি তারিখে যা চার বছর পর পর আসে- ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তে! স্বামীর নাম Gene Goodenough। আশা করি তাদের সংসার enough রকমের good যাচ্ছে! শুভ জন্মদিন গালে টোল পড়া হাসির মেয়ে প্রীতি জিনতা!