আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমরা যে খুব অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছি তা নয় , তবে খুব হিসেব করে সংসার চালাতেন আম্মু। 

আমার মনে আছে সকালে আমরা ১ টা ডিম দিয়ে ৬/৭ জন মানুষ খুব সহজেই ভাত খেতাম! কিভাবে সম্ভব? কারণ আমার মা সুপার ওমেন ছিলেন। ১টা ডিমের সাথে ২টা আলু কেটে কুচি করে, বড় কড়াই’তে দিয়ে আম্মু অসাধারণভাবে আলু-ডিম ভাজিটা তৈরি করতেন। ছোট বেলায় আম্মু বলতো, মাছটা ঘুমাক, তোমরা খেয়ে ফেলো। মাছটা আসলেই ঘুমাতো, আমরা খেয়ে ফেলতাম। আমরা যে অনেক অভাবে ছিলাম, ব্যাপারটা কিন্তু তা না। আব্বুকে আমাদের মূল পরিবার বাদেও অনেকের খেয়াল রাখতে হতো, পড়াশোনার খরচ দিতে হতো। আম্মু তার সুপার পাওয়ার দিয়ে আমাদের খুব অল্প জিনিস দিয়ে বড় করেছেন। 

আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন আমার প্রায়ই মন খারাপ হতো। আমি ক্লাসে ফার্স্ট না হলেও ছাত্র খারাপ ছিলাম না,  রোল ২-৩ এর মধ্যেই থাকতো। আমার ক্লাসে পড়া আমার কয়েকজন সহপাঠী আমাদের বাসার কাছে থাকতো। ওদের ঘন ঘন কেনা নতুন জামা, জুতা, সাইকেল দেখে আমার খুউব মন খারাপ হতো। স্কুলের টিফিনে বা ছুটির পর ওরা অনেক কিছু কিনে খেত, আমাকে সেভাবে টাকা দেয়া হতো না।

আমি একদিন স্কুল থকে ফিরে মন খারাপ করে বসে আছি, আম্মু জিজ্ঞেস করলো, আমার মন খারাপ কেন? আমি বলেছিলাম, 'আম্মু, আব্বু ঘুষ খায় না কেন? তাইলে তো আমরা আরও ভালো থাকতে পারতাম, ভাড়া বাসায় থাকতে হতো না, অন্যদের মত আমিও যখন তখন জামা-জুতা কিনতে পারতাম।' সেই সময়টা আমার আসলে একটা নতুন জুতা কিনতে ইচ্ছে হচ্ছিল, স্কুলের অনেকেই নতুন বের হওয়া বাটার একটা জুতা পড়ে স্কুলে যাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের বাসার নিয়ম হচ্ছে- কেবল ঈদের সময়ই নতুন জামা-জুতা কেনা যাবে , তার আগে ম্যানেজ করে চলতে হবে। আম্মু খুব অবাক হয়ে হেসে আমাকে বলল, ওমা, তোমার নতুন জুতা নেই বলে মন খারাপ! যেই ছেলেটার পা নেই- তার কথা কখনো চিন্তা করেছ? আমাই সাথে সাথে ভাবলাম- তাইতো আমার তো নতুন জুতা নাই! আর যে ছেলেটার পা নাই!

সেই ছোটবেলায় আম্মু আমাকে আমার জীবনের সেরা শিক্ষাটা দিয়ে দিয়েছিল। তখন বুঝতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি। আমরা সব সময় আমার এটা নাই - ওটা নাই বলে মনে খারাপ করি। একটু নিচের দিকে তাকালেই তো সুখ আর সুখ! 

এই মুহূর্তে আমার/আপনার পাঁচটা বন্ধুর হয়তো অনেক কিছু আছে, যেটা আমার/আপনার নেই বলে আমি/আপনি মন খারাপ করছি/করছেন। কিন্তু আমার/আপনার বাকি ১০টা বন্ধুর দিকেও আমার/আপনার তাকানো উচিত। আপনাকে কোন কম্পেরিজন করতে বলছি না সেভাবে, শুধু বলার চেষ্টা করছি, আপনি যে অবস্থায় আছেন, তার জন্য শোকরানা আদায় করুন। কারণ আপনি তো এর চেয়ে খারাপও থাকতে পারতেন! 

আমার জীবনের সর্বোচ্চ ডিগ্রী কোথা থেকে পেয়েছি? আমার গৃহিণী মায়ের কাছ থেকে! 

এলোমেলো এই লিখাটা আমার তরুণ বন্ধুদের জন্য শেয়ার করলাম- যারা হয়তো আমার মত বাবা-মার উপর রাগ করে বসে আছো! যাও আপাতত মাকে জড়িয়ে ধরে বলো, মা তোমাকে ভালোবাসি! আমি জানি এটা বলা ভীষণ কঠিন! আমি আজ পর্যন্ত সামনাসামনি এটা বলতে পারিনি! পারবো বলে মনেও হয় না! আম্মু, তোমাকে ভালবাসি!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- https://www.egiyecholo.com/contributors/write-for-us


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা