'কারিব কারিব সিঙ্গেল'- সম্পর্ক তৈরির গল্প বলছে যে সিনেমা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
রোড ট্রিপ, এবং সেই সমান্তরালে রোমান্টিসিজমের এগিয়ে চলা- এ ধরণের ছবি বলিউডে আগেও বিস্তর হয়েছে। কিন্তু তারপরও ‘কারিব কারিব সিঙ্গেল’-কে নতুন দিনের বলিউডে একটি রিফ্রেশিং চেঞ্জ হিসেবেই অভিহিত করেছেন অনেকে।
যোগী (ইরফান খান), এক মধ্যবয়স্ক ব্যাচেলর। আর জয়া (পার্বতী), এক বিধবা যুবতী। তাদের আলাপ হয় একটি ডেটিং ওয়েবসাইটে। সেখান থেকেই পরস্পরের প্রতি আগ্রহ জন্মানো, তারপর একটি কফি শপে প্রথম দেখা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যোগী জয়াকে রাজি করিয়ে ফেলে এক অদ্ভূত প্রস্তাবে- একটি রোড ট্রিপে যাওয়ার, যাতে তারা একে অপরকে আরও ভালো করে চিনতে ও জানতে পারে, এবং তাদের আসলেই বিয়ে করা উচিৎ কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই রোড ট্রিপে তারা ভারতের বিভিন্ন শহরে ঘুরতে থাকে।
যোগী জয়াকে একে একে পরিচয় করিয়ে দেয় তার তিন প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে। শুরুতে তাদের এই ট্রিপটি বেশ আকর্ষণীয় মনে হলেও, খুব দ্রুতই কাহিনীর পট পরিবর্তন হতে শুরু করে। নানা রকমের ভুল বোঝাবুঝি ডালপালা মেলতে থাকে, এবং তিক্ত করে দেয় যোগী আর জয়ার সদ্য গড়ে ওঠা সম্পর্ককে। শেষ পর্যন্ত কি তাদের এই সম্পর্ক ভেঙেই যাবে? নাকি সব বাধাবিপত্তি, প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে তানুজা চন্দ্রা পরিচালিত রোমান্টিক-কমেডি ঘরানার ছবি 'কারিব কারিব সিঙ্গেল'-এ।
রোড ট্রিপ, এবং সেই সমান্তরালে রোমান্টিসিজমের এগিয়ে চলা- এ ধরণের ছবি বলিউডে আগেও বিস্তর হয়েছে। কিন্তু তারপরও 'কারিব কারিব সিঙ্গেল'-কে নতুন দিনের বলিউডে একটি রিফ্রেশিং চেঞ্জ হিসেবেই অভিহিত করেছেন অনেকে। এবং সেখানে ইরফান খানের মত একজন শক্তিশালী অভিনেতার উপস্থিতি সত্যিই বিশাল বড় প্রাপ্তি। ইরফান খানের জন্যেও এরকম নিয়ার-রোমান্টিক চরিত্র প্রথম নয়। এর আগেও 'লাইফ ইন এ মেট্রো...' কিংবা 'পিকু'-তে সম ঘরাণার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে। তারপরও এই ছবিতে তার চরিত্রে কিছু নতুনত্ব অবশ্যই রয়েছে, এবং ইরফান খানও একজন জাত অভিনেতার মত সেই 'কনফিউজড রোমান্টিক' ইমেজটা ক্যারি করতে পেরেছেন।
পার্বতীর চরিত্রটিও অনেক ইন্টারেস্টিং। ট্রেইলারে যেমনটি দেখা গিয়েছিল, সেরকম বেশ অনুমিতভাবেই তার চরিত্রে রোমান্টিসিজমের চেয়েও বেশি ছিল মধ্যবয়স্ক নারীর আবেগ, কমপ্লেক্সিটি ইত্যাদি। এবং সেগুলোকে বেশ ভালোভাবেই পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তিনি।
পরিচালক হিসেবে তনুজা চন্দ্রাকে পারফেক্ট হয়ত বলা যাবে না। আরও ভালো কোন পরিচালকের হাতে পড়লে হয়ত এই ছবিটি আরও অনেক বেশি বাস্তবসম্মত হতো। ছবিতে নিয়মিত বিরতিতে লোকেশন পরিবর্তন হয়েছে। এই বিষয়টিকে আরেকটু শৈল্পিকভাবে পর্দায় উপস্থাপন করা গেলে তা দর্শকের জন্য বিরক্তির উদ্রেক ঘটাত না। কিন্তু তারপরও পরিচালক হিসেবে তনুজাকে নিঃসংকোচে পাস নম্বর দেয়াই যায়। কারণ চরিত্রগুলোর যে নানাবিধ শেড, আর কাহিনীর নানা ইমোশনাল এলিমেন্টস, সেগুলোকে ঠিকঠাকভাবেই তুলে ধরেছেন তিনি। আর তার কাজটিকে আরও সহজ করে দিয়েছেন ইরফান খান ও পার্বতী। সবমিলিয়ে 'কারিব কারিব সিঙ্গেল' একটি পিউর এন্টারটেইনার।
ট্রেইলার দেখে অনেকেই ধারণা করেছিল- এ ছবিতে নারীবাদ নিয়ে ভারি ভারি কথা থাকবে, দর্শককে জোর করে একগাদা একঘেয়ে তত্ত্ব গেলানো হবে। কিন্তু না! সেরকম কোন চেষ্টা এ ছবিতে দেখা যায়নি। বরং দেখা মিলেছে মহিলাদের দৃষ্টিকোণ থেকে জগৎ সংসারকে দেখার এবং ছবির মাধ্যমে জগৎকে সেটা দেখানোর একটা সুন্দর, স্মার্ট ও সৎ প্রচেষ্টার।
'কারিব কারিব সিঙ্গেল'-কে শুধু রোমান্টিক কমেডি বললেই হবে না। তার আগে 'ম্যাচিউরড' কথাটিও যোগ করে দিতে হবে। এ ছবির দর্শক হয়ত নির্দিষ্ট। সব শ্রেণীর দর্শকের কাছে এ ছবির আবেদন সমান নয়। কিন্তু শিক্ষিত দর্শকের কাছে এ ছবিটি নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন