“ধর্ষণের সাথে মেয়েদের ছোটো পোশাক জড়িত। ধর্ষণের সাথে আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেট, পাশ্চাত্য অনুকরণ জড়িত”-এ ধরনের কথা যারা বলেন, তারা কি 'ব্যাটল অব আল হারা' কিংবা মদীনার যুদ্ধের ধর্ষণ সম্পর্কে জানেন?

“ধর্ষণের সাথে মেয়েদের ছোটো পোশাক জড়িত। ধর্ষণের সাথে আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেট, পাশ্চাত্য অনুকরণ জড়িত।” 

অনলাইনে দেশের শায়খ, মুফতি মোহাদ্দেস থেকে শুরু করে স্কুল কলেজের পোলাপাইন অবধি এই কথা বলে। মিষ্টি খোলা রাখলে মাছি বসবেই। চকলেট খোলা থাকলেই নষ্ট হবেই... এইসব রেটরিক তারা দিবে। একাডেমিক্যালি শিক্ষিতরা তো পাভলভের কুকুর তত্ত্ব দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চায়- কেন মেয়ে দেখলে লালা ঝরবেই; কেন কিছু মেয়ের পর্দা না করা, অন্য মেয়েদের ধর্ষকের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়- ইত্যাদি ইত্যাদি। 

অথচ ইনাদের সবার কাছে 'ব্যাটল অব আল হারা' কিংবা মদীনার যুদ্ধের ধর্ষণ নিয়ে কোন লজিক নাই। এই যুদ্ধ হয়েছিল রাসূল (স) এর মৃত্যুর ৫০ বছর পর।

১২০০ এর বেশী নারীকে দুই দিনে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। কোনো কোনো সুন্নী ঐতিহাসিক ৭০০-৮০০ মেয়ের গ্যাং রেপের কথা বলেছেন। সংখ্যায় তারতম্য থাকলেও এর কম হিসাব নাই।

এই ধর্ষিতা  নারীরা সাধারণ কোন নারী ছিলেন না। সবাই সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রী কন্যা ছিলেন। 
যাদের দ্বারা ধর্ষণ হয়েছিল, তাদের বাহিনীর নেতৃত্বেও সাহাবাদের সন্তান ছিলেন। যে সমস্ত আনসার আর কুরাইশ নারীদের মদীনা শহরজুড়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই হয়তো আল্লাহর রাসূলের পেছনে নামাজ পড়েছেন, দাওয়াত খাইয়েছেন। পর্দার আয়াত নাজিলের পর পৃথিবীর প্রথম পর্দা পালনকারী জেনারেশন ছিলেন। 

রাসূলের মৃত্যুর ৫০ বছর পর মদীনা শহরে রেইপড হয়েছিলেন সেসব নারী, তারা যেসব পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন তারা নিশ্চয় পর্দার বাইরে ছিলেন না, মিষ্টি কিংবা চকলেট ছিলেন না। মিনি ড্রেস, ডিশ এন্টেনা দিয়ে ওই সব রেপিস্টদের শিশ্ন খাড়া করানো হয় নাই। কিন্তু মুসলিম নামধারী উমাইয়া বাহিনীর হাতে শত শত কুরাইশ আর আনসার নারীদের রেইপড হওয়ার পেছনে কারণ কী? তারা তো ইসলামের ইতিহাসের সবচে' সম্মানীত বংশীয়, সবচে' ধর্মপ্রাণ নারী ও কন্যাগণ ছিলেন৷ এই প্রশ্ন করলে হুজুররা বলবেন- এই নারীরা হতভাগ্য আর ধর্ষণ করেছিল শিশ্নধারী পুরুষেরা। এরা সব জাহেল, পথভ্রষ্ট মুসলিম।

নারীর পোশাক কখনোই ধর্ষণের কারন হতে পারে না

সবচেয়ে পাগল হুজুরও বলবে না- রাসূলের সমসাময়িক কিংবা কিছুদিন পরে জন্ম নেয়া এই ভিক্টিমরা কেউ ওয়েস্টার্ণ মিষ্টি কিংবা মাছি ছিলেন।  এর ফলে উত্তেজিত হয়ে ধর্ষণ অনিবার্য ছিলেন। 

এই যুদ্ধে উভয়পক্ষই মুসলিম পরিচয়ধারী ছিলেন। যুদ্ধে জয়ীরা চাইলেই নারীদের দাসী হিসেবে, গণিমতের মাল হিসেবে রেখে দিতে পারতেন। তারপরও শত শত রেইপ কেন করা হয়েছিল? তাও মদিনা শহরে, যে শহরে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল শুয়ে আছেন। এর কারণ ধর্ষণ করতে পথভ্রষ্ট পুরুষ লাগে, পারভার্ট মানুষ লাগে। 

পর্দা ইসলামের বিধান৷ আমার মা খালারাও পর্দা করেন। কিন্তু পর্দা না করা কোনভাবেই ধর্ষণ জায়েজের জুজু হইতে পারে না আপনার। এটা করলে আপনি পর্দাকে ভ্রান্তিমান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। 

বাংলাদেশের অনলাইন অফলাইন জনগোষ্ঠীর সবার আগে যে জিনিস মাথায় আনতে হবে তা হলো- ধর্ষিতা, তার অবয়ব কিংবা তার পোশাক আশাক কিছুই ধর্ষণের প্রাইমারি ক্যাটালিস্ট না।
ধর্ষণের এক নাম্বার ও একমাত্র কারণ ধর্ষক। এর বাইরে কারণ নাই। 

এরপরেও দুই নাম্বার ও বিশ নাম্বার কারণ অবধি বহু কারণ আনতে চান?  তাহলে এভাবে আনেন- ধর্ষকের শিশ্ন আছে। ধর্ষক পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। ধর্ষকের দেশে বিচার হয় না। নিয়মিত ভোট হয় না, জবাবদিহিতা নাই। ধর্ষকের দেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগ টাইপের ইলেকশন কিডন্যাপ করা শক্তিশালী পান্ডা থাকে, যারা ক্ষমতার কাঠামোকে ধর্ষণ করে। ধর্ষকের দেশে হ্যান ত্যান ইত্যাদি আছে।

ধর্ষিতার দোষ ধরলে, ভিক্টিম ব্লেমিং করলে- আপনিও এই প্রবলেমের অংশ। যে প্রবলেম মাথায় থাকলে আপনি মাথা খাটায়ে কোনদিন জিজ্ঞেস করবেন না নিজেকে- ''কোনো নারী ছোট করে কাপড় দেখায়ে যদি ধর্ষণ আমন্ত্রণ জানাতে পারে, তাহলে নোয়াখালীর মেয়ে বড় গলায় চিৎকার করে 'আল্লাহর দোহাই' দিয়েও কেন তাদের ধর্ষণ আটকাইতে পারে না?" 

কাপড় কি  আল্লাহর কালামের চেয়েও বেশী বড় ক্যাটালিস্ট? আপনি কি গাধা, না ইতর?

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা