একটি ছবিই ভাগ্য বদলে দিয়েছিল সিরিয়ান শরনার্থী আত্তারের!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সামান্য একটি ছবির বদৌলতে রাতারাতি পাল্টে গেছে এক নিঃস্ব শরনার্থী ও তার পরিবারের জীবন, লক্ষাধিক ডলারের মালিক এখন সেই ব্যক্তি!
সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার শরনার্থী সংকট বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলির একটি। শরনার্থী শব্দটি শুনলে বা দেখলেই আমাদের চোখের সামনে যে ছবিটি ভেসে ওঠে তা হলো, হয় একদল মানুষ পায়ে হেঁটে বা নৌকায় করে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছে, নয়ত খুব ছোট্ট পরিসরের একটি জায়গায় হাজার হাজার মানুষ অসহায় অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করছে।
কিন্তু এই সামষ্টিক চিত্রের কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি আরেকটু গভীরভাবে ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে বুঝতে পারব শরনার্থী বলতে কেবল একদল ভাগ্যাহত মানুষকেই বোঝায় না। প্রতিটি শরনার্থী ব্যক্তিরই একটি নিজস্ব ও স্বাতন্থ্য সত্তা আছে, নিজের একটি গল্প আছে, নিজের ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে চাওয়ার একটি সংগ্রামময় ইতিহাসও আছে।
কিন্তু সেসব সত্তার দেখা খুব কম সময়ই মেলে। সেসব গল্প অনুক্তই থেকে যায়। সেসব ইতিহাস কেবল ধূসর, বিবর্ণ ইতিহাস হিসেবেই সকলের অগোচরে রয়ে যায়। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ শরনার্থীর মধ্য থেকে যদি একজন কি দুইজনের কথা একটু আলাদাভাবে গণমাধ্যমে হাজির হয়, তবে সেটিকে বলা যায় খুবই বিরল একটি ঘটনা। এবং আজ আপনাদেরকে বলব সেরকমই বিরল একটি ঘটনার গল্প। এজন্য আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে দুই বছর আগে, ২০১৫ সালে।
গল্পের মূল চরিত্র সিরিয়ার শরনার্থী আব্দুল হালিম আল আত্তার। কীভাবে তিনি অতি কষ্টে লেবাননের বৈরুতে দিনাতিপাত করছিলেন, তারপর একদিন একটি ছবি তার গোটা জীবনকেই পাল্টে দিতে সক্ষম হয়, তাই নিয়েই এই গল্প। ভাগ্যের ফেরে নিজ দেশ সিরিয়া ছেড়ে লেবাননের বৈরুতে চলে আসতে হয় আব্দুলকে। সেখানে আর কিছু করার না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কলম বিক্রি করার কাজ শুরু করেন তিনি।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও এই কাজই করছিলেন। আর তার কোলে ছিল ঘুমন্ত কন্যাসন্তান। কোনরকমে এক হাতে সন্তানকে আগলে ধরে রেখে, অন্য হাতে এক গোছা কলম নিয়ে রাস্তায় এক লোকের কাছ থেকে অন্য লোকের কাছে ছুটে যাচ্ছিলেন তিনি। যদি কেউ তার দুরাবস্থা দেখে সহায় হয়, একটি কলম অন্তত কেনে!
সেদিন ছিল প্রচন্ড গরম। রাস্তায় কেউই খুব একটা উৎসাহ দেখাচ্ছিল না আব্দুলের কাছ থেকে কলম কেনার ব্যাপারে। বেঁচে থাকাটাই যেখানে ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠছে, সেখানে কার এমন দায় পড়েছে কলম কেনার! কিন্তু আব্দুল হাল ছাড়ার পাত্র নন। হাল ছেড়ে যে তার উপায়ও নেই! যদি অন্তত কয়েকটি কলম বিক্রি করতে না পারেন, তাহলে যে খালি হাতেই ফিরতে হবে তাকে। ফলে তার কোলের ওই ছোট্ট শিশুটিকেও অনাহারে দিন কাটাতে হবে। বাবা হয়ে কি এমনটা হতে দিতে পারেন তিনি!
ভাগ্যক্রমে, আব্দুলের এই কঠিন জীবনসংগ্রাম দেখে পথচারী কারও মন না গললেও, তিনি চোখে পড়ে গেলেন এক ফটোগ্রাফারের। সেই ফটোগ্রাফার দূর থেকে আব্দুলের অজান্তেই তার ছবি তুলে নিলেন, আর তারপর পোস্ট করে দিলেন ইন্টারনেটে।
ছবিটিতে এতটাই মানবিক আবেদন ছিল যে সেটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। মানুষজন লাইক, কমেন্ট করে ভাসিয়ে দিতে লাগল ছবিটির নিচে। হাজার হাজার শেয়ারও হলো ছবিটি। সবমিলিয়ে এক রাতের মধ্যেই ভার্চুয়াল জগতের অন্যতম আলোচ্য বস্তুতে পরিণত হলো আব্দুলের সেই ছবিটি।
তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন জিসুর সিমোনারসন নামের এক নরউইজিয়ান ওয়েব ডেভেলপার। তার উদ্যোগে আব্দুল ও তার পরিবারের জন্য একটি ক্রাউড ফান্ডিং ইভেন্টও খোলা হলো, যার মাধ্যমে প্রায় দুই লক্ষ মার্কিন ডলারের মতো অর্থ সংগ্রহ করে তুলে দেয়া হয় আব্দুলের হাতে।
এভাবেই সামান্য একটি ছবির বদৌলতে রাতারাতি পাল্টে যায় এক নিঃস্ব শরনার্থী ও তার পরিবারের জীবন। আব্দুলের এই গল্পটি আমাদেরকে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে সৃষ্টিকর্তা কখন কার দিকে মুখ তুলে চাইবেন, কারও পক্ষে তা আগে থেকে কল্পনা করাও সম্ভব না। পাশাপাশি ইন্টারনেটের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে একটি পুরো পরিবারের ভাগ্যও চোখের পলকে বদলে দেয়া যায়, সেটিরও একটি উজ্জ্বল ও অতি বাস্তব দৃষ্টান্ত এই গল্পটি।