সাহেদ বা তার স্ত্রীর পাশাপাশি এই স্যারদের রহস্যটাও উন্মোচন করুন
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
এ যেন ঐতিহাসিক কোন চুক্তি। কী ভয়ানক বিষয়! একটা ছোট্ট চুক্তি অনুষ্ঠানে এক মন্ত্রী, তিন সচিব, এক মহাপরিচালক, দুই পরিচালক, এক নেতা। এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচে ঘৃণিত ঘটনার দালিলিক প্রমাণ। এই ছবির রহস্য উম্মোচন হোক।
আমি নিজে গতকাল সাহেদের ঘটনায় সাংবাদিক নেতাদের সমালোচনা করে লিখেছি। রাজনীতিবিদদের নিয়ে সবাই গালিগালাজ করছে। কিন্তু অসৎ আমলাতন্ত্র? আচ্ছা একটি প্রাইভেট হাসপাতালের চুক্তি অনুষ্ঠানে অন্য মন্ত্রণালয়ের দুজন সচিব কেন? ভাবেন একবার, সরকারের দুজন সিনিয়র সচিব, এর মধ্যে একজন আবার পুরো প্রশাসন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি! কিছু হলেই আমলাতন্ত্রের মান যায়, তা এই ঘটনায় আপনাদের মান যায় না? তাহলে এখন প্রতিবাদ করেন না কেন?
ভেবে দেখেন রিজেন্ট হাসপাতালের কোন লাইসেন্স ছিল না। তাও আবার তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স ছিল, হাসপাতালের না। সেটিও ২০১৪ সালের পর যেটি নবায়ন করা হয়নি। দেশে এতো বড় বড় হাসপাতাল থাকতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কেন রিজেন্টের মত একটি লাইসেন্স বিহীন, মানহীন, লোকবলহীন হাসপাতালকে করোনা রোগি চিকিৎসা করার দায়িত্ব দিল?
আমার প্রশ্ন চুক্তি হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে রিজেন্টের, তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের কক্ষে অন্য মন্ত্রণালয়ের দুজন সচিব কী করতে গেছেন? এতো কাজের ব্যস্ততা তাদের, এতো সম্মান তাদের তাহলে কী করে তারা এমন একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে থাকেন একটা প্রতারকের পেছনে?
আজকে একজন শাহেদকে নিয়ে এত উত্তেজনা, এইসব স্যারদের পকেটে আরো কত শত শাহেদ আছে, সে হিসেব করবে কে? নাকি স্যারেরাই সাহেদদের পকেটে ঢুকে গিয়েছেন? সাহেদের ডাকে সচিবালয় থেকে মহাখালি ছুটে আসেন তারা কিসের টানে? আচ্ছা কথায় কথায় যে বঙ্গবন্ধু বা প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেন তারা তো দুর্নীতির কথা কোনদিন বলেননি। তাহলে আপনারা কেন দুর্নীতি করেন?
রিজেন্ট সাহেদ গ্রেপ্তার হলো কী হলো না, তাতে কিছু যায় আসে না। আমার নিজের ধারণা,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করেছে বা আজ কালকের মধ্যে গ্রেপ্তার হবে। আর না হলেও আমার কিছু যায় আসে না, যদি আমার একটা চাওয়া পূরণ হয়। আমি শুধু সাহেদের ঘটনার পুরো তদন্ত চাই। এই এক ঘটনায় পুরো দেশের চরিত্র জানা হয়ে যাবে।
রাষ্ট্রকে বলবো, দয়া করে খুঁজে বের করেন, এই সাহেদের সাথে কারা কারা ছিলেন, সরকারের কোন কোন মন্ত্রী, কোন কোন রাজনীতিবিদ, কোন কোন আমলা, কোন পেশার কোন মানুষ। সবাইকে খুঁজে বের করুন। কার কার সাথে সাহেদের যোগাযোগ হতো, কারা কেন তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করতো, একটা চুক্তি অনুষ্ঠানে কেন তিনজন সচিব ছুটে যেতেন এই ঘটনাগুলোর তদন্ত করুন। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে কারা তাকে দাওয়াত দিতেন খুঁজে বের করুন। কারা শাহেদকে শাহেদ বানালো খুঁজে বের করুন। এরপর বিচার করুন। দেখবেন সাহেদদের সাহেদ হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
আমি বলবো, অসংখ্য ঘটনার দরকার নেই এক শাহেদের আদ্যপান্ত তদন্ত করুন পুরো রাষ্ট্রের চিত্র বেরিয়ে আসবে। দেখবেন তখন এমপি পাপলু-রাষ্ট্রদূতের সম্পর্কটা কী, জানতে পারবেন শাহেদ করিম, জেকেজি বা ঠিকাদার শামীমদের মতো হাজার হাজর লোক কী করে দেশটা লুটেপুটে খাচ্ছে, কারা কেন তাদের লুটপাট টিকিয়ে রেখেছে। আরও জানতে পারবেন, কারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, কারা বিদেশে বাড়ি করেছে, কারা টাকা পাচার করেছে।
রাষ্ট্রকে বলবো ঘটনাগুলোর তদন্ত করুন। আচ্ছা এই যে আমরা যারা জীবনে কখনো কোন অন্যায় করার কথা ভাবি না, অসৎ পথে চলি না, যারা সুশাসনের স্বপ্ন দেখি, যারা এখনো এই দেশটা নিয়ে সব স্বপ্ন দেখি, যাদের একটাই পাসপোর্ট, যারা তাদের সন্তানদের জন্য একটা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তাদের কী জবাব দেবে রাষ্ট্র? বাংলাদেশটাকে ভালোবাসা কী আমাদের অপরাধ? একটা সুন্দর দেশ চাওয়া আমাদের অপরাধ? কী জবাব দেবে রাষ্ট্র?
এই দেশ আর দেশের মানুষের স্বার্থে আমাদের সত্য কথাগুলো বলা দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এই ঘটনার পুরো আদ্যপান্ত তদন্ত করুন। কারা শাহেদের মতো লোককে আপনার বা রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে নিয়ে যায় সেটাও তদন্ত করুন।
এই রাষ্ট্রের নাগরিক, সাংবাদিকসহ সবাইকে বলবো, শুধু শাহেদ তা তার বউয়ের পিছে না দৌড়ে চারপাশে নজর দিন। এই রাষ্ট্রের পুরো কাঠামোটা বেরিয়ে আসবে। ভালো থাকুক সবাই। ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন