মরে যাবার পূর্বে যে আক্ষেপগুলো সঙ্গী হতে পারে আপনারও!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'তুমি দিন থাকিতে দিনের সাধন কেন করলে না, সময় গেলে সাধন হবে না...'
লালন সাঁইয়ের কথার সত্যতা হাড়ে হাড়ে টের পাবেন যখন, তখন সত্যিই সময় চলে গেছে। জীবনের অন্তিম মুহুর্তে অপেক্ষা করছেন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য। ফেলে আসা জীবনে তখন বারবার ফিরে তাকাবেন, তবে কোনো কিছুই আর পরিবর্তন করতে পারবেন না।
এই লেখাটির উদ্দেশ্য কোনোভাবেই আপনাকে বিষাদগ্রস্ত করে দেওয়া নয়, বরং 'সময় থাকতে সাধন' করবার জন্য সচেতন করা। চলুন জেনে আসি, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার পূর্ব মুহুর্তে কোন আক্ষেপগুলো আপনার সঙ্গী হবার চান্স সবচেয়ে বেশি..
ইশ! যদি নিজের জন্য আরও কিছু সময় বাঁচতে পারতাম!
জীবনের সন্ধিক্ষণে এসে পৌছেছেন, হয়তো আর দুই-এক মাস বাঁচবেন বড়জোর- এরকম রোগীদেরই দেখাশোনা করেন অস্ট্রেলিয়ান নার্স ব্রনি ওয়ের। তাই পেশাগত কারণেই তার অভিজ্ঞতা হয়েছে অসংখ্য মৃত্যুপথযাত্রীর আক্ষেপ, অনুশোচনার গল্প শুনবার। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি 'মৃত্যপথযাত্রীদের জীবনের অন্যতম ৫ আক্ষেপ' নামে এক বই লিখেন, যা বেস্টসেলার হয়। সেই বইটিতে তিনি বলেন, বেশীরভাগ লোকেরই মরে যাবার আগে আক্ষেপ থাকে নিজের জন্য বাঁচতে না পারা নিয়ে। অর্থাৎ, তাদের জীবনের বেশীরভাগ সময় কেটে গেছে অন্যের দেখানো স্বপ্ন পূরণ করতে করতেই। ফলে নিজের স্বপ্ন পূরণের সময়-সুযোগ পেয়েছেন কম। তাই তারা আক্ষেপ করেন- যদি নিজের জন্য আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারতেন, তবে বাকেট লিস্টের অপূরণীয় স্বপ্নগুলো হয়তো বাস্তবায়ন করতে পারতেন।
আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ছোটবেলা থেকেই আমাদের নিজেদের চোখ বলে কিছু থাকে না। দুইচোখের এক চোখ দিয়ে বাবার, আরেক চোখ দিয়ে মায়ের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন দেখতে হয়, যা তারা নিজেদের জীবনে পূরণ করতে পারেননি। কিন্তু তাদের দেখানো স্বপ্ন যদি আপনার স্বপ্ন না হয়, অযথা বোঝা টানবেন না। বাবা-মাকে বোঝান, নিজের জন্য বাঁচুন। আপনি নিজ স্বপ্নক্ষেত্রে বিচরণ করে সফল হলে তারাই সবচেয়ে বেশী খুশি হবেন। অতএব, আগামীকাল মৃত্যুর পূর্বে আপনার এই আক্ষেপ থাকবে কি থাকবে না, তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আজই। মনে রাখবেন- নিজ স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে 'ইটস নেভার ঠু লেট'
যদি আরেকটু কম যান্ত্রিক হতাম!
এখন যারা তরুণ আছেন, মৃত্যুসময়ে এই আক্ষেপটা তাদের সম্ভবত সবচেয়ে বেশী থাকবে! কেননা মানুষজন হয়ে গেছে এখন রোবোটের মতো যান্ত্রিক! ইমোশন, আবেগ, ভালোবাসা- কিছুই আর ছোঁয় না তাদের। সবাই একটা জায়গায় পৌছতে চায়, সফল হতে চায়। সফল হবার তাড়নায় ফেম আর টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে প্রিয় মানুষদের সানিধ্য পাওয়াটাই হয় না তাই। হ্যাঁ; সিকিউরিটির জন্য, সাচ্ছন্দ্যময় জীবনের জন্য পদবী-ব্যাংক ব্যালেন্স প্রয়োজন ঠিকই, তবে নিজেকে একদম উজার করে দিয়ে নয়। দিনশেষে, জীবনের শেষ মূহুর্তগুলোতে আপনি কত টাকা কামালেন, কোন পদবী নিয়ে মারা যাচ্ছেন- সেসব কিছুই মনে পড়বে না, মনে পড়বে প্রিয়জনদের সাথে কাটানো কিছু স্মরণীয় ঘটনা আর ফেলে আসা ভাল সময়গুলোর কথা।
এই কারণেই, জীবনের সফলতার পেছনে ছুটবেন তো ঠিক আছে, তবে অবশ্যই প্রিয় মানুষগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে। নয়তো সময়ের ব্যালান্স করতে না পারলে শেষ বয়সে এই আক্ষেপ নিয়েই মরতে হবে।
যদি তখন বলে দিতাম!
মানুষের জীবনের সবচেয়ে রঙিন অংশ হলো ছাত্রজীবন। এই সময়টাতে প্রেমে পরেন না, এরকম মানুষের সংখ্যা হাতেগোনাই বলতে গেলে। জুনিয়র/সিনিয়র কিংবা সমবয়সীর প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে কেউ প্রকাশ করে ফেলেন নিজের ভালোবাসার কথা। ফলে পরিণতি অনেকের ভাল হয়, অনেকেরই হয় না। তবে এরকম অনেকেই আছেন, যারা কাছের বন্ধুটির প্রেমে পরে যান। তাদের অবস্থা অনেকটা 'বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না' টাইপের হয়। বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে ভালোবাসার কথাটি বলতে পারেন না, কিন্তু পরে সারাজীবন এই আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকেন।
ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে দিলে হয়তো আপনি পজিটিভ রেসপন্স পেলেও পেতে পারতেন! না পেলেও ক্ষতি নেই, নেগেটিভিটিকে গ্রহণ করতে হবে। নিজ ইমোশন আটকে না রেখে প্রকাশ করে ফেললে অন্তত 'যদি বলে দিতে পারতাম' আক্ষেপটুকু থাকবে না। যে সম্পর্ক টিকবার নয়, তা টিকবেই না। তাই সম্পর্ক ভেঙে যাবার ভয়ে নিজ ইমোশনকে জোর করে নিয়ন্ত্রণ করবেন না।
যদি আরেকটু কানেক্টেড থাকতাম!
বন্ধু ছাড়া জীবন প্রচন্ড একঘেয়ে। সবকিছু পরিপূর্ণ থাকলেও জীবনের একটু বিশেষ জায়গা জুড়েই থাকে বন্ধুত্ব। ছাত্রজীবনে যে বন্ধুর সাথে প্রতিদিনের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়া হতো, একদিন দেখা না হলেই রাজ্যের গল্প জমে যেত, একটা সময় সেই বন্ধুর সাথেই যোগাযোগটা হয় না বছরের পর বছর। জীবিকার তাগিদে, ব্যস্ততার ছোবলে পড়ে আগের সুরটাও কোথায় যেন কাটা পরে যায়। শিডিউল মিলিয়ে, প্ল্যানিং করে বছরে একবার দেখা মিললেও সেই আন্তরিকতাটা থাকে না, নিজের অজান্তেই গুটিয়ে নেওয়া হয় সেই চিরচেনা বন্ধুর কাছ থেকে। কিন্তু এই আক্ষেপটাই চরম হয়ে ধরা পরে জীবনের অন্তিম মুহুর্তে। তখন মনে হয়, আরেকটু যদি কানেক্টেড থাকতাম, তবে এত একা বোধ করতে হতো না।
মানুষ কী ভাবলো সেটা নিয়ে যদি কম ভাবতাম!
এই কাজটা করলে অমুক কী ভাববে, তমুক কী বলবে- ভেবেই জীবনের অর্ধেক সময় নষ্ট করে ফেলি আমরা। এভাবে 'মানুষ কী ভাববে' ভাবতে ভাবতে স্বপ্ন দেখাও কমিয়ে দেই, নিজেকে বেধে ফেলি অলিখিত এক সামাজিক ছকে। মানুষের কথার মূল্যায়ন করতে গিয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলি আমরা, যা চূড়ান্ত আফসোস রূপে ধরা পরে জীবনের শেষ বয়সে এসে।
যদি 'বর্তমানে' বাঁচতে পারতাম!
ভবিষ্যত কিংবা অতীতের কথা ভেবে বর্তমান সময়টা হেলায় নষ্ট করি- এরকম মানুষের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়। কিন্তু বর্তমানটাই যে আগামীকাল অতীত হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে আমরা উদাসীন। এভাবে সময় নষ্ট করতে করতে জীবনের সব ইচ্ছাগুলোই অপূর্ণ থেকে যায় ভবিষ্যতের আশায়। পরবর্তীতে আক্ষেপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। তাই যে যেখানে যে পর্যায়টাতে আছেন, জীবনের সবটুকু স্বাদ নিয়ে নিন। বর্তমানটা উপভোগ করুন সর্বোচ্চ উপায়ে। কেননা, শাহরুখ খানের ভাষায় বললে- ক্যায়া পাতা, কাল হো না হো!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন