কোভিড-১৯ এর কারণে যারা রিমোর্ট ওয়ার্ক/ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি, তাদের জন্যে এই লেখা। আজ কথা হবে ভিডিও কনফারেন্সিং-এ কিভাবে সময় বাঁচানো যায় এবং প্রোডাক্টিভ মিটিং করা যায়।
কোন কোম্পানি যত বড়ই হোক না কেন, টাকা দিয়ে কিন্তু দিনে ১ টা অতিরিক্ত ঘন্টা কেনা যায় না। আর একটা ১ ঘন্টার মিটিংয়ে যদি ১০ জন মানুষ থাকে, তাহলে সেই মিটিংটার সময়কাল আসলে ১*১০=১০ ঘন্টা! তাই মিটিং করার ব্যাপারে সতর্ক হই। নিচের গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলি মেনে চললেই খুব কার্যকরী উপায়ে ভিডিও মিটিং করা সম্ভব-
প্রস্তুতি নিতে হবে ২ ধরণের:
ক. নিজের প্রস্তুতি
খ. মিটিংয়ের জন্যে কোম্পানির প্রস্তুতি
ক. নিজের প্রস্তুতি
বাসায় জানানো
একটা ভাইরাল ভিডিও আমরা অনেকেই দেখেছি, যেখানে স্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিং করার সময় হঠাৎ তার স্বামী আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় ক্যামেরার সামনে চলে আসে। এমন বিব্রত অবস্থা আমরা কে চাই? অনেকের বাসায় ছোট বাচ্চারা আছে, তারাও মিটিংয়ের সময় আওয়াজ করে মিটিংয়ের ফোকাস নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আগে থেকেই বাসায় জানিয়ে রেখে ঘরের নিরিবিলি একটা জায়গা বেছে নিতে হবে।
প্রোডাকশন চেক
ভিডিও শুরুর আগেই রুমের লাইট পর্যাপ্ত আছে কিনা, স্পিকার এবং মাইক কাজ করছে কিনা, যা পরে আছি তা গ্রহণযোগ্য কিনা, ফোন/ল্যাপটপে চার্জ আছে কিনা, এবং ওয়াই-ফাই কানেকশন ঠিক আছে কিনা দেখে নিই। তাহলে মিটিং শুরুর পর এসব কাজে অন্যদের সময় নষ্ট হবে না।
খ. মিটিংয়ের জন্যে কোম্পানির প্রস্তুতি
মিটিং এজেন্ডা তৈরি করা
প্রত্যেক মিটিং এরই কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। উদ্দেশ্যহীন কোন মিটিং কখনোই সফল হতে পারে না। মিটিং শুরুর আগেই, বস বা টিম লিডারের এজেন্ডা ঠিক করে নিতে হবে। প্রয়োজনে টিম লিডার একজনকে ব্রিফ দিয়ে এজেন্ডাগুলি লিখে ফেলাতে পারেন। মিটিংয়ের আগেই মিটিং এজেন্ডা সবাইকে পাঠানো বেস্ট প্র্যাকটিস। তা সম্ভব না হলে মিটিং শুরুর সাথে সাথে এজেন্ডাগুলি পড়ে মিটিং শুরু করতে হবে।
আইডিয়া শেয়ার করার জন্যে গুগল ডক ব্যবহার
মিটিং করার সময় আমরা যে আইডিয়াগুলি দেই, তা শুধু মৌখিকভাবে সবসময় বোঝানো যায় না। লম্বা মিটিংয়ের সময় ভালো আইডিয়াও অনেকে ভুলে যায়। এক্ষেত্রে গুগল ডক, স্লাইড, শিটের সদ্ব্যবহার করা যায়। এই সফটওয়্যার গুলি দিয়ে অনলাইনে অনেকজন মিলে একই ফাইলে কাজ করা যায়। এতে খুব দ্রুত কাজ গুছিয়ে ফেলা যায় ও ডেলিগেট করা যায়। তাই, মিটিংয়ের শুরুতেই এমন ফাইল তৈরি করে যাদের এক্সেস থাকা প্রয়োজন তাদের সাথে শেয়ার করে দিলে, বেশ সময় বাঁচবে!
সর্বোচ্চ ৯০ মিনিটের মিটিং সেট করা
পারফরমেন্স সাইকোলজিস্ট জিম লোয়ারের গবেষণায় এসেছে, ৯০-১২০ মিনিটের পর আমরা শারিরীক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যাই। এছাড়াও প্রোডাক্টিভিটি গুরুদের অনেকেই মতামত দিয়েছেন যে, ৯০ মিনিটের বেশি মিটিং করলে তা প্রোডাক্টিভ হয় না। অবশ্যই ব্রেক দিতে হবে। এমনকি, ৯০ মিনিট একটানা বসে না থেকে, মাঝখানে একটু বডি স্ট্রেচিংয়ের পরামর্শও দেন তারা।
অনেকগুলি এজেন্ডা থাকলে প্রতিটির জন্যে আলাদা সময় সেট করা
অনেকগুলি এজেন্ডা থাকলে প্রায়োরিটি অনুযায়ী আগেই সময় ভাগ করে নেয়া বেশ কার্যকরী একটা বুদ্ধি।
মিটিং মিনিটস নেবার জন্যে একজনকে দায়িত্ব দেয়া
মিটিংয়ের সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে একজনকে মিটিং মিনিটস অর্থাৎ, মিটিংয়ের সারসংক্ষেপ লেখার দায়িত্ব দিতে হবে। তা নাহলে মিটিংয়ের কথাগুলো মিটিং শেষে বাতাসেই হারিয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা!
মিটিংয়ের সময় শুধুই মিটিং
২০২০ সালে এসে নেটফ্লিক্স-টিকটক-পাবজির মত দারূণ উত্তেজনাময় সব এন্টারটেইনমেন্ট পেয়ে, আমরা অল্পেই বোরড হতে শুরু করেছি। এমনি মিটিংয়ের সময়ই টেবিলের নিচে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হোত ইন্সটাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জার, আর এখন তো আরো সুবিধা! এই অভ্যাসটা ছাড়তে হবে। নতুবা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে বসে ডেটা নষ্ট করা ছাড়া খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না। বস বা টিম লিডারদের অনেক দিক দেখতে হয়। তারা হয়তো মাঝে মাঝে ফোন চেক করেন, তাই বলে এই না যে সবাই ফাঁকে ফাঁকে অন্য কিছু করার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।
স্মার্ট গোল সেট করা
সুনির্দিষ্ট, মাপা যায়, বাস্তব, প্রয়োজনীয়, এবং সময়সীমা বেঁধে দেওয়া - শুনতে কি একটু খটকা লাগছে? স্পেসিফিক, মেজারেবল, এটেইনেবল, রেলেভেন্ট, এবং টাইম বাউন্ড - S.M.A.R.T. Goal - অনুযায়ী মিটিংয়ে ঠিক করা কাজ গুলি সেট করতে হবে। কে কোন কাজ করবে তা তাকে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে রাখতে হবে এবং মিটিং মিনিটসে উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে গুগল শিট খুব চমৎকার ভাবে সাহায্য করবে।
মিটিং শেষে মিটিং মিনিটস সবাইকে ইমেইল করা
মিটিং মিনিটস লেখার দায়িত্ব যার/যাদের, তারা মিটিং শেষেই, মিনিটস গুছিয়ে লিখে সবাইকে ইমেইল করে দিবে। যদি সাথে সাথে সম্ভব না হয়, তাদেরও একটা ডেডলাইন দিতে হবে মিনিটস মেইল করার জন্যে।
যাদের মিটিংয়ে থাকার আর দরকার নেই তাদের কাজে ফেরত পাঠানো
অ্যাপল কোম্পানির ফাউন্ডার স্টিভ জবস বিখ্যাত ছিলেন মিটিংয়ে এসে, “এই, তুমি এখানে কেন?” জিজ্ঞেস করার জন্যে এবং অদরকারি লোকদের তাদের কাজে ফেরত পাঠানোর জন্যে। অনলাইন মিটিংয়ে কারো কারো জন্যে প্রথম ১০-১৫ মিনিট থাকাটাই প্রয়োজন। তার কাজ এর মধ্যেই ঠিক করে দেয়া হয়েছে এবং এরপরের আলোচনায় তার থাকা দরকার নেই। তাই, তাকে তখন সবাই গুডবাই জানালে কোন ক্ষতি নেই বরং তিনি তখন তার কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন।
জব পোর্টাল দ্য মিউজের রিসার্চ অনুযায়ী, একজন মিডল ম্যানেজার ৩৫% এর মত সময় মিটিংয়ে খরচ করেন, এবং একজন আপার ম্যানেজমেন্টের মানুষ খরচ করেন ৫০% পর্যন্ত সময়! সুতরাং এই সুবিশাল সময়ের বিনিয়োগ অফিসের প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। আজকের আলোচনার বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে পারলে ভিডিও কনফারেন্সিং প্রোডাক্টিভিটি বাড়বেই। তখন টিম মেম্বাররা কোলাবরেশনের মাধ্যমে অনেক কঠিন সমস্যা একসাথে না থেকেও দূরে বসেই সমাধান করে ফেলতে পারবে।
লেখাটা ভালো লাগলে শেয়ার করি!