রিচি সোলাইমান: রুচিশীল এক নান্দনিক অভিনেত্রীর গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বর্তমানে আমাদের নাট্যাঙ্গনে একজন রিচি সোলাইমানের মতো অভিনেত্রীর বড়ই অভাব। ভালোবাসা নেবেন প্রিয় অভিনেত্রী, জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
২০০২ সাল। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের সমালোচক বিভাগে সেরা টিভি অভিনেত্রী বিভাগে তারানা হালিম ও আফসানা মিমির মতো প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, রবি ঠাকুরের ছোট গল্প অবলম্বনে নির্মিত ফেরদৌস হাসানের 'ত্যাগ' নাটকে কুসুম চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের সুবাদে পুরস্কার জয় করে চমকে দিয়েছিলেন সেই সময়ের এক উঠতি অভিনেত্রী। পুরস্কৃত হয়েই দাম্ভিকতা না এনে অভিনয় জগতে নিজেকে সঁপে দিলেন, পরবর্তীতে হয়ে উঠলেন নাট্যঙ্গনের প্রথম সারির একজন অভিনেত্রী। অভিনয়, সৌন্দর্য ও বাচনভঙ্গির কারনে পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা, তিনি 'রিচি সোলায়মান'।
১৯৮৯ সালে 'ইতি আমার বোন' নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন, তবে বড়বেলায় এসে টনি ডায়েসের বিপরীতে ১৯৯৮ সালে 'বেলা অবেলা' ধারাবাহিক নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ২০০১ সালে একুশে টিভিতে প্রচারিত আহির আলমের রহস্যধর্মী ধারাবাহিক নাটক 'প্রেত' এ অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন, সঙ্গে ছিলো ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপন। তারপর 'ত্যাগ' নাটকে অভিনয় করে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেওয়ার পর মুরাদ পারভেজের থ্রিলার ধারাবাহিক 'দৌড়' এ অভিনয়ের সুবাদে আরো আলোচিত হন দর্শকমহলে।
হুমায়ূন আহমেদের নাটকে তখন অন্যান্য অভিনেত্রীরা তেমন সুযোগ পেতেন না, তবে রিচি সোলায়মান পেয়ে সেটার দারুন সদ্ব্যবহার করেছিলেন। সাইদুল আনাম টুটুলের নির্মানে হলেও পুরা নাটকই ছিলো হুমায়ূন আহমেদের নিজস্ব আবহে, টেলিফিল্মটির নাম 'বাদল দিনের কদম ফুল'। অভিনয় জীবনের ক্যারিয়ারে সম্ভবত সেরা চরিত্র ও অভিনয় করেছিলেন এজাজ মুন্নার 'নীড়' ধারাবাহিকে। তারকাবহুল এই নাটকের মূল ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছিলেন, মহিলা দর্শকদের কাছে এটি বেশ গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছিলো,যার কারনে পরবর্তীতে পর্ব সংখ্যা বাড়ানো হয়।
আকরাম খানের নাবিলা চরিত্রেও ছিলেন নাম ভূমিকায়, এটিও ক্যারিয়ারের বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে মোনালিসার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন 'শহর ভরা কাঁচের কোকিল' নাটকে, এছাড়া উল্লেখযোগ্য অর্থহীন মানিপ্ল্যান্ট, কালো বরফ জমাট অন্ধকার, অনলাইন ডট কম, রুদ্র ও রোদেলার কাব্য, প্রত্যাগত, উপহার, শঙখবাস, জোৎস্নাকাল, ফ্লেক্সিলোডসহ বেশ কিছু নাটক।
রিচি সোলায়মানের অন্যতম বিশেষ দিক তার বাচনভঙ্গি, উনার কথা বলার ধরনেই মুগ্ধতা ছড়ায়। বাস্তবে যারা রিচি সোলায়মানকে দেখেছে তাদের সবাই একবাক্যে বলে দেন টিভির চেয়ে বাস্তবে তিনি আরো বেশি সুন্দরী। 'ত্যাগ' এর পর চয়নিকা চৌধুরীর নির্মানে রবি ঠাকুরের 'নিশীথে' করেছিলেন, যার জন্য দর্শক জরিপে প্রথমবারের মত মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে মনোনীত হন। অভিনেতা থেকে নির্মাতা মাহফুজ আহমেদ নিজের নির্মানের নাটকে নির্দ্ধিয়ায় তাকেই বেছে নিয়েছেন বহু নাটকে, যার প্রমাণ মিলে বনলতা সেন, তোমার দোয়ায় ভালো আছি মা, সরিসৃপ, কেবলই রাত হয়ে যায়, হ্যালো বাংলাদেশ, বাপের বেটার মতো নাটকে।
অভিনয়ের বাইরে প্রযোজক হিসেবেও রয়েছে খ্যাতি, 'নীলাঞ্জনা' প্রযোজনা সংস্থা থেকে নির্মিত হয়েছে শাহনেওয়াজ কাকলীর প্রশংসিত নাটক 'গোলাপী পাঞ্জাবী', 'ব্যঙ্গময়ী'র মতো নাটক বানিয়েছেন। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন 'আলোয় ভুবন ভরা' নাটকের জন্য, একক অভিনয় করেছেন 'সোনার মানুষ' নাটকে। রিচি সোলায়মান বিয়ে করেছেন ২০০৮ সালে, তখন তিনি জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের একজন।
এরপর থেকেই ধীরে ধীরে অনিয়মিত হতে থাকেন, এখন সংসার করছেন প্রবাস জীবনে। নৃত্যজগতেও রয়েছে প্রতিভার ছাপ। শাহনেওয়াজ কাকলীর একটি ছবিতে অভিনয়ের কথা উঠলেও সেটি আর হয়নি। বর্তমানে আমাদের নাট্যাঙ্গনে একজন রিচি সোলাইমানের বড়ই অভাব। ভালোবাসা নেবেন প্রিয় অভিনেত্রী, জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা!