অপরাধীকে ঘৃণা করুন, তাকে নিয়ে নোংরামিতে জড়াবেন না প্লিজ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ফেসবুকে যেসব রথী-মহারথীরা গ্রেফতার হওয়া সাবরীনার সাথে এক সেলে রাত কাটাতে চাইছেন, যে কয়দিন বাঁচেন 'ভালো-মন্দ খেয়ে' বাঁচতে চাইছেন, তারা যে সাবরীনাকে ভিক্টিম বানিয়ে এই অপরাধীর উপকারই করছেন, সেটা কি তারা বুঝতে পারছেন?
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে জেকেজি হেলথকেয়ারের 'চেয়ারম্যান' সাবরীনা আরিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে তার স্বামী এবং জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ডা. আরিফকে গ্রেফতার করেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জেকেজির দুর্নীতির বিষয়গুলো সামনে আসার পর থেকেই অবশ্য সাবরিনা দাবী করছিলেন, তিনি সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত নন, স্বামী আরিফ তাকে মারধর করে, দুজনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ, ছল-চাতুরির মাধ্যমে নিজের গা যতভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, সেই চেষ্টার কমতি রাখেননি ডা. সাবরীনা। কিন্ত শেষমেশ জেলে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারলেন না তিনি।
ডা. সাবরীনা অপরাধ করেছেন, তার কারণে হাজার হাজার মানুষ ভুক্তভোগী হয়েছেন, অন্যায় করার পরেও তার গলাবাজী থামেনি- প্রচলিত আইন অনুসারে তার বিচার হবে, সাজা হবে। কিন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পাণ্ডব যেভাবে তাকে বডি শেমিং করা শুরু করেছেন, তার ছবি নিয়ে নোংরামিতে মেতেছেন, সেটাও কম গুরুতর অপরাধ নয়। এসব নোংরামি দেখে মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, সাবরীনা নারী বলেই কি এমন প্রতিক্রিয়া?
একটা অপরাধকে ঘৃণা করার জন্য আরেকটা অপরাধ সংঘটনের কোন মানেই হয় না। সাবরিনার বেলায় সেটাই ঘটছে। ফেসবুকের যেসব রথী-মহারথীরা গ্রেফতার হওয়া সাবরিনার সাথে এক সেলে রাত কাটাতে চাইছেন, যে কয়দিন বাঁচেন 'ভালো-মন্দ খেয়ে' বাঁচতে চাইছেন, তারা নিজেরাই হয়তো জানেন না, তাদের অন্তরটা নোংরা কাদায় কিভাবে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। ফেসবুকে এসব নোংরামি করে যে বরং অপরাধী সাবরীনাকেই ভিক্টিম বানিয়ে দিচ্ছেন, সেটা বোঝার মতো মেধা স্রষ্টা হয়তো আপনাদের মস্তিস্কে দেয়নি।
অপরাধীর বিচার করার জন্য আইন আদালত আছে। আমরা বিচার নিশ্চিতের জন্য দাবী তুলতে পারি, নিজের শক্তিশালী লবি ব্যবহার করে সাবরীনার মতো অপরাধী যাতে জামিন না পায়, আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে, বিচারকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে পারি। কিন্ত সেসব বাদ দিয়ে সাবরীনার 'আবেদনময়ী' ছবি আপলোড দিয়ে ফেসবুক ভাসিয়ে ফেলাটা আমাদের কাজ না। তার সঙ্গে এক সেলে রাত কাটাতে চাই বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়াটা আমাদের কাজ না। আপনি যদি 'ঠাট্টা করেছি' বলে জিনিসটাকে জাস্টিফাই করতে চান, তাহলে বলতেই হবে, ঠাট্টা আর নোংরামি- দুটো জিনিসের পার্থক্য আপনি বোঝেন না।
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোঃ সাহেদ এখনও গ্রেফতার হয়নি। ভুয়া করোনা পরীক্ষা এবং লাইসেন্স না থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যেই রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, সাহেদকেও খুঁজছে পুলিশ। গত কয়েকদিন ধরে মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে সাহেদের ছবিতে ফেসবুক সয়লাব। অথচ কাউকে দেখিনি সাহেদের সঙ্গে এক সেলে রাত কাটাতে চাইতে, তার শারীরিক অবয়ব নিয়ে কথা বলতে। তাহলে সাবরীনার বেলায় ভিন্ন নিয়ম কেন? সাবরীনা নারী, একারণেই তো?
অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখতে শিখুন দয়া করে, লোভনীয় কোন বস্তু বা খাবার হিসেবে নয়। সাবরীনা অপরাধী, অন্যায়ের সাজা তাকে পেতে দিন, আপনাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি তার শাস্তির মাত্রা ঠিক করার। তার অন্যায়ের সাজা হিসেবে আপনি যদি তাকে ধর্ষণ করতে চান, সেটা আরও বড় অন্যায়। ভারত মাতিয়ে আসা আমাদের বিখ্যাত সব স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ানরাও যখন এমন নোংরা স্রোতে গা ভাসায়, তখন 'বানরের গলায় মুক্তোর মালা' প্রবাদটার কথা মনে পড়ে। অর্থ-খ্যাতি-জনপ্রিয়তা তো চোখের পলকে অর্জন করা যায়, কিন্ত কমনসেন্স জিনিসটা একদিন-দুইদিনে আসে না, বহু বছরের সাধনার ফল এটা। সেই জিনিস সবার মধ্যে থাকবে না, এতে অবাক হবার কিছুই নেই।
করোনা পরীক্ষায় অনিয়ম, জেকেজির দুর্নীতি এবং সরকারী চাকরিতে যুক্ত থাকা অবস্থাতেই আইন বহির্ভূতভাবে জেকেজির চেয়ারম্যান পদে থাকা এবং সব রকমের অনিয়মে যুক্ত থাকার অপরাধে সাবরীনার বিচার হোক, তাকে শাস্তির মুখোমুখি করা হোক। পাশাপাশি অনলাইনে তাকে নিয়ে যেসব নোংরামি হচ্ছে, এগুলোও বন্ধ হোক। নারীর প্রতি আমাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির নমুনাই এতে শুধু প্রকাশ পায়, আর কিছুই নয়। যেটা অন্যায় সেটা সবসময়ই অন্যায়, ভালো মানুষের সাথে হলেও অন্যায়, খারাপ মানুষের সাথে হলেও অন্যায়। অপরাধী সাবরীনাকে ঘৃণা করতে গিয়ে দয়া করে নোংরামিতে জড়াবেন না, সেটা কোন ভদ্র ঘরের সন্তানের শোভা পায় না...
আরও পড়ুন-
করোনা পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতি, একজন সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার ভিক্টিম কার্ড খেলা
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন