ব্রিটিশ এক চিত্রশিল্পী দুবাই এর এক হোটেলে শুরু করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেইন্টিং বানানোর কাজ। এবং এ পেইন্টিং থেকে প্রাপ্ত টাকা নিয়ে তার আছে এক বিশেষ পরিকল্পনা!

করোনাকালীন এই থমকে যাওয়া সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যখন দিন গুজরান করছেন বিভিন্ন সব কর্মকাণ্ডে, তখন ব্রিটিশ নাগরিক ও চিত্রশিল্পী সাচা জাফ্রি করছেন এক অসাধারণ কাজ। দুবাইতে তিনি এসেছিলেন একটা কাজে। করোনার কারণে আটকে পড়েন এখানে এসে। পাঁচমাস ধরেই তিনি হোটেল-বন্দী। ভাবলেন এই সময়টা বসে না থেকে কিছু একটা করা যাক। যেটা মানুষকেও সাহায্য করবে, কাজটাও হবে অসাধারণ কিছু।

সে ভাবনা থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিত্রকর্ম নির্মাণ শুরু করলেন তিনি। কাজ চলছে এখনো। কাজের আপডেট আসছে ইন্সটাগ্রামে। মানুষজনও বেশ পছন্দ করছে বিষয়টিকে। আগামী মাসে ধরা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই পেইন্টিং এর কাজ শেষ হবে। ২১ হাজার বর্গফুটেরও বড় ওই শিল্পকর্মের কাজটি শেষ হওয়ার পর এটিকে কয়েকটি প্যানেলে বিভক্ত করে নিলামে তোলা হবে দুবাইতে।

'দ্য জার্নি অব হিউম্যানিটি' শিরোনামের ওই চিত্রকর্মটি সাইজে হবে চারটি বাস্কেটবলের মাঠের সমান। দুবাইয়ের অ্যাটলান্টিস দ্য পাম হোটেলের বলরুমে এই চিত্রকর্মটি আঁকছেন ব্রিটিশ এই চিত্রশিল্পী লকডাউনের পর পর থেকেই। চিত্রকর্মটিকে ভাগও করা হয়েছে চারটি অংশে। পৃথিবীর আত্মা, প্রকৃতি, মানবতা, মহাবিশ্ব এই চারটি ভাগে ভাগ করে মোট চব্বিশ সপ্তাহ সময়ের এক ডেডলাইনে তিনি এই পেইন্টিং এঁকে চলেছেন।

সাচা জাফ্রি সাধারণত এ্যাবস্ট্রাক্ট স্টাইলে ব্রাশওয়ার্ক ও ড্রিপ-পেইন্টিং করেন বেশিরভাগ সময়ে, যেটিকে তিনি ডাকেন 'ম্যাজিক রিয়ালিজম'। দ্য জার্নি অব হিউম্যানিটি একই স্টাইলে হচ্ছে। পেইন্টিং এর মোটিভেশন ও থিম হিসেবে নেওয়া হয়েছে মহামারি, এই অস্থিতিশীল সময়ে মানুষের কাছে আসা, দূরে যাওয়া।

সাধারণত শিশুরা রঙিন চিন্তাভাবনা করতে পছন্দ করে। তাই তিনি সারা বিশ্বের বিভিন্ন শিশুর সাথে কথা বলেছেন, তাদের থেকে নানারকম আইডিয়া নিয়েছেন। এবং এই কাজটি শুরু করেছেন। শিশুদের সারল্য ও রঙিন কল্পনা এই চিত্রকর্মের আরেকটি বড় উৎস। এবং ইন্সটাগ্রামে পোস্ট হওয়া পেইন্টিং এর খণ্ড খণ্ড অংশ যেন জীবনের প্রানোচ্ছ্বল সময়েরই প্রতিনিধিত্ব করে।

এই পেইন্টিং শেষ হওয়ার পরে এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দালান, বুর্জ খলিফার দেয়ালে ঝুলিয়ে প্রদর্শন করা হবে। প্রদর্শনী শেষে এটিকে খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করে, প্রতি খণ্ডে প্রায় ৩০ বর্গমিটারের মতো রেখে নিলামে ওঠানো হবে। এ বছরের ডিসেম্বরেই দুবাইতে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

এখান থেকে জাফ্রি আশা করছেন, ত্রিশ মিলিয়নের মত টাকা আসবে। যে টাকার পুরোটাই ব্যয় করা হবে সারা পৃথিবীর অজস্র শিশুদের স্বাস্থ্য, খাবার, নিরাপত্তার পেছনে। 

করোনাকালীন সময়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে আটকে আছে অজস্র মানুষ। সবাই নানা কারণে হতাশ, বিপর্যস্তও। কিন্তু তাদের মধ্যেও সাচা জাফ্রি অনেকটাই ব্যতিক্রম।  সবকিছুকে দূরে রেখে একমনে যে কাজটি তিনি করছেন, তা নিঃসন্দেহে অসাধারণ। ঘরে আবদ্ধ থেকেও যে মানুষের জন্যে কিছু করা সম্ভব, সাচা জাফ্রি হয়ে রইলেন সে প্রসঙ্গের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। যে উদ্দেশ্যে এ কাজটি শুরু হয়েছে, সেটা সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা