সৌন্দর্যের তো কোনো গ্রেডিং সিস্টেম নেই: সাই পল্লবী
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
দুই কোটি রূপির বিজ্ঞাপনের অফার তিনি ফিরিয়ে দেন, কারণ রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের ওপর তার নিজেরই ভরসা নেই! সাই পল্লবী নিজে যেমন, ঠিক সেভাবেই নিজেকে গ্রহণ করে নিয়েছেন, নায়িকার সংজ্ঞাটাই তিনি যেন বদলে দিয়েছেন!
সাই পল্লবী, যিনি মালায়ালাম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকার সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছেন, কিছুদিন আগে তিনি ফিরিয়ে দিলেন, রঙ ফর্সাকারী ক্রিম কোম্পানির বিজ্ঞাপন অফার। বিজ্ঞাপনটা করলে তিনি পেতেন দুই কোটি রুপি। কিন্তু, খুব স্বাভাবিকভাবে অদ্ভুত নির্লিপ্ততায় তিনি উপেক্ষা করলেন এমন সুযোগ, অর্থের চেয়ে নিজের ফিলসফিতেই তিনি অটল থাকলেন।
প্রথম যখন তাকে মালায়ালাম সুপারহিট সিনেমা 'প্রেমাম' এ দেখা গেল, অবাক না হয়ে উপায় ছিল না। গালে ব্রণের দাগ, খুব একটা মেকআপও নেই মুখে, জোর করে আবেদনময়ী সাজার কোনো চেষ্টা নেই তার মধ্যে। পোষাক পরিচ্ছদও গতানুগতিক। চেহারাও খুব নায়িকাসুলভ, তাও নয়। কিছুটা লাজুক এবং মুখে সবসময় স্বলজ্জ হাসি তার। এইটুকুই! কিন্তু, সত্যি বলতে তার এই সাবলীলতা, সরলতা, সহজতা, অকৃত্তিম একটা জিমিক- এসব মিলিয়ে তিনি আসলে একজন সত্যিকারের অপরুপা।
সাই পল্লবীর মধ্যে সবচেয়ে নজরকাড়া ব্যাপার হলো, তিনি নিজে যেমন, সেভাবেই নিজেকে গ্রহণ করে নিয়েছেন। তার ন্যাচারাল লুক, অভিনয় সব কিছু মিলিয়ে এমন দাঁড়িয়েছে যে, নায়িকার সংজ্ঞাটাই তিনি যেন বদলে দিয়েছেন। বাস্তব জীবনে তিনি যেমন, সিনেমাতেও তিনি এমনই। এজন্যেই সিনেমাতেও তিনি মেকআপ নেন না। তার গালের ব্রণ লুকানোর চেষ্টা করেন না। তিনি বিউটি প্রোডাক্টের পক্ষেও নন, তার কথা হলো- যে যেমন সে সেভাবেই সুন্দর। যার ত্বকের রঙ যা হোক, সেটাতেই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।
যেহেতু তিনি নিজেই মেকআপ নেন না, ফেয়ারনেস ক্রিমের রুপকথা টাইপের আশ্বাস সাত দিনে রঙ বদলে যাবে, দাগ মুছে যাবে ধরণের প্রলাপে বিশ্বাস করেন না, তাই তিনি এধরণের কোনো প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে উৎসাহী নন। একারণে, দুই কোটি রুপি পারিশ্রমিক অফার পাওয়ার পরেও তিনি ফিরিয়ে দিলেন, ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনের অফার! এমন নজির খুব কমই দেখা যায়!
সবাই যখন নিজেকে বিশ্বসেরা সুন্দরী প্রমাণ করতে ব্যস্ত, মেকআপ এর উপর মেকআপ লাগানোতে ব্যস্ত তখনো সাই পল্লবীর আস্থা ন্যাচারাল লুকে, যা তিনি, তা নিয়েই তার তুষ্টি! অবশ্য, একসময় তিনি নিজেও গালে ব্রণ উঠাকে ঘৃণা করতেন। তারও যে খানিকটা হীনমন্যতা ছিল না, তা নয়। এছাড়া তার আরো একটা সমস্যা আছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই তার গালে লালচে আভা দেখা যায়। তিনি যখন স্নায়ুচাপে ভোগেন, তখনই এমনটা হয়। এটা নিয়েও বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন অভিনয়ের সময়। কিন্তু, পরে এই লালচে আভাটাও যেন সৌন্দর্যের আরেকটি চিহ্ন হয়ে উঠেছে, ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে তার জন্যে।
আজকাল যখন তার পিম্পল কিংবা চেহারা নিয়ে কথা হয়, তিনি এটাকে দেখেন একদম সাধারণভাবেই। তার কথা হলো, সৌন্দর্যের তো কোনো গ্রেডিং সিস্টেম নেই, তাই না। আমরা কাউকে সুন্দর বলি, সেটা আমাদের একটা পারসেপশন। একজনের সৌন্দর্যের সাথে আরেকজনের সৌন্দর্যকে তুলনা দেয়া যায় কীভাবে? যখন কেউ বলে, মানুষ তোমাকে সেভাবেই গ্রহণ করবে যেমনটা তারা ভাবে। আমি বলি, হোয়াট দ্যা হেল! তারা গ্রহণ করার কে? আমি আমার মতো করেই সুন্দর!
সাই পল্লবীর এই ফিলসফি অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে ভারতীয় নারীদেরকে। সাধারণ চেহারা, সাধারণ বেশভূষা দিয়েই বাজিমাত করা সাফল্যের পর এখন অনেক নারীরা ভীষণরকম অনুপ্রাণিত তাকে দেখে। যারা আগে টেলিভিশনে রং ফর্সাকারী ক্রিমের বিজ্ঞাপন দেখে হতাশ হতেন, টিভিতে সুন্দরী নায়িকাদের দেখে হীনমন্যতায় ভুগে ভাবতেন- চেহারাটাই বুঝি সব, এখন তারা এসে সাই পল্লবিকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, "আপনার জন্য এখন আমরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। আমরা যখন দেখলাম আপনি যেমন তার জন্যই লোকে পছন্দ করছে, তখন আমরা বুঝতে পারলাম এটাই আসল সৌন্দর্য আসলে। আমরা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছি আমরা যা, তেমন থাকলেও কেউ না কেউ আমাদের পছন্দ করবেই!"