বাবা খুবই নীতিবান হওয়ার কারণে কারো কাছে ছেলের কাজ পাওয়ার জন্য অনুরোধ করতেন না৷ তাই আর ১০ জন স্ট্রাগলিং এ্যাক্টরদের মতো সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।
অভিষেক দাশ প্রেম: আব্দুর রশিদ সেলিম সালমান খান। নামটা যত বড় ঠিক ততটাই বড় এই নামের ব্যাপকতা। বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র তিনি। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন ব্যক্তি, আরেকটু নির্দিষ্টভাবে বললে, তিন 'খান' এর একজন হলেন তিনি। যার জীবনের নানা উত্থান পতন অনেকক্ষেত্রে রুপালী পর্দাকেও হার মানায়।
১৯৬৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর সেলিম খানের ঘরে জন্ম নেন সালমান খান। বংশগতভাবে সালমান খানরা হলেন আফগানি বংশোদ্ভুত। বাবা ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ লেখক৷ "শোলে", "সিলসিলা"-সহ অনেক জনপ্রিয় মুভির চিত্রনাট্য লেখেন সেলিম খান। তিন ভাই সালমান, সোহেল, আরবাজ এবং দুই বোন অর্পিতা ও আলভিরা। সালমানের পরিবারে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস ও উপাসনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।
শিক্ষাজীবনের গণ্ডি পেরোনোর পর অভিনয় আর মডেলিংয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। পকেটমানি জোগাড় করার জন্য ছোটোখাটো মডেলিং আর ফটোশুট করতে থাকেন। কিন্তু বাবা খুবই নীতিবান হওয়ার কারণে কারো কাছে ছেলের কাজ পাওয়ার জন্য অনুরোধ করতেন না৷ তাই আর ১০ জন স্ট্রাগলিং এ্যাক্টরদের মতো সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।
অতঃপর ছোট একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ে সুযোগ পান (Biwi Ho Toh Aisi) ১৯৮৮ সালে। এরপর আসে তার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সুযোগ আসে হিরোর ভুমিকায় অভিনয় করার। ছবির নাম (Maine Payar Kiya) ১৯৮৯ সালে। এই ছবির পর পুরো ভারতবর্ষে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে৷ রাতারাতি এক ছবিতেই সুপারস্টার বনে যান তিনি। সেই যে জাদু ছড়িয়েছেন তা আজও স্থায়ী পৃথিবীজুড়ে সালমানের কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে।
তাকে দেখেই এই শতকের শুরুতে হাজার হাজার যুবক শরীরচর্চায় আগ্রহী হয়ে উঠে৷ এছাড়া ছেঁড়া জিন্স প্যান্ট থেকে শুরু করে চুলের স্টাইল, ভারতীয় উপমহাদেশে এমন অনেক ট্রেন্ডের প্রবর্তক তিনি, যা আজো চলমান। সব ছবিতেই অতন্ত দাপটের সাথে অভিনয় করে গেছেন তিনি। তবে এই অভিনয় জীবনে সমালোচনা ও নানামুখী অভিযোগের তীর কম সইতে হয়নি তাকে৷ কিন্তু যতই তিনি সমালোচিত হয়েছেন, সেটির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সালমান খানের জনপ্রিয়তাও।
স্টারডামের অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। কেউ একজন বলেছিলেন, অভিনেতা তিন ধরণের আছে- ভালো অভিনেতা, খারাপ অভিনেতা আর সালমান খান। তার অভিনয়ের কারণে ভক্তদের মনিকোঠায় পাকাপাকি জায়গা পেয়েছেন। ১৯৮৯ সালে পান বেস্ট নিউকামার এ্যাওয়ার্ড। কিন্তু তার সাথে পুরস্কারের রাজনীতিও কম হয় নি। অবশ্য তিনি এতে থেমে থাকেননি বা কখনো হতাশ হননি বা গুরুত্ব দেননি। বরং করেছেন মজা কিংবা বিদ্রুপ। আর পেয়েছেন অগনিত মানুষের ভালোবাসা। তিনি বলতেন, মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছু আর নেই।
ব্যক্তিজীবনে সকল লোভ-লালসার উর্ধ্বে সালমান খান। এমনকি ২০১৫ সালের আগে তার নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ছিলো না৷ তার বাবার অ্যাকাউন্টে-ই নাকি সব টাকা থাকতো। এছাড়া বেশ সাধারণ জীবনযাপন করেন তিনি। মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে ছোট একটি ফ্ল্যাটে বাবা মায়ের সাথে থাকেন। ভাই-বোনদের জন্য অন্তঃপ্রাণ হিসেবে বলিউড পাড়ায় বেশ সুপরিচিত সালমান খান৷ নিজের ভালোবাসা সবসময় উজাড় করে দেন তাদের জন্য৷ এছাড়াও অন্যদের জন্য কিছু করতে পারলে খুশি হন সালমান খান।
হিমেশ রেশামিয়া থেকে ক্যাটরিনা কাইফ, অনেকজনকে তিনি বলিউডে সুযোগ করে দিয়েছেন বলেই অনেকেই তাঁকে নিউকামারদের "গডফাদার" বলে থাকেন। ছবিতেও একই প্রভাব তার৷ কোনো কাহিনী ছাড়া ছবি সুপারহিট করাতে পারেন একমাত্র সালমান খান৷ ২০০৩ সালের এক জরিপে সালমান খান বিশ্বের ৭ম "হ্যান্ডসাম ম্যান" হোন। ২০০৫ সালে লন্ডনের মাডাম তুসোর জাদুঘরে ৪র্থ ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে তার মোমের মূর্তি স্থান পায়।
সালমান খানের হাতখোলা মনোভাবের কথা সবার জানা। সুযোগ পেলেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন৷ এজন্য তাঁকে "Man Of Golden Heart"-ও বলা হয়৷ নিজের শরীরের "বোনম্যারো" দান করেছেন অনেক আগেই। খুলেছেন "বিয়িং হিউম্যান" ফাউন্ডেশন। সেখানে তার আয়ের অনেক বড় একটা অংশ প্রদান করে দেন। তা দিয়েই প্রতিনিয়ত আর্তমানবতার সেবাই নিজেকে নিয়োজিত রাখছেন। অনেক ক্যান্সার রোগী, শিশু ও নারীর চিকিৎসায় খরচ করেছেন তিনি। এজন্য তার জনপ্রিয়তা ও ফেইসভ্যালু কাজে লাগিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অনেক নেতা।
নিজের নীতিতে সবসময় অটল থাকার সুনাম আছে তার। ভালোবাসা ও ঘৃণা দুটোই ঈমানের সাথে করার চেষ্টা করেন তিনি। বলা হয়, যার উপর থেকে মন উঠে যায়, তার দিকে আর ফিরে তাকান না তিনি। আর যাকে ভালোবাসেন তার জন্য যেকোনো জায়গায় যেতে দ্বিধা করেন না বলেই বলিউডেও তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তিনি তার স্ক্রীন-প্রেজেন্স, সরল অভিনয়, নিজস্ব নাচের ভঙ্গি এবং কমিক টাইমিং দিয়ে তাবৎ বলিউডবোদ্ধাদের আনন্দ দিয়ে গেছেন বিগত ৩০ বছর ধরে।
এই ৩০ বছরে তার জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি। ছবি হিট হোক বা ফ্লপ, সালমান খানের জনপ্রিয়তা বেড়েছে প্রতিনিয়ত। তার ঘরের সামনে সবসময় মানুষের ভিড় লেগে থাকে শুধু তাকে একনজর দেখার আশায়। তাকে ঘিরে চলে উন্মাদনা। আর্থিক আয়ের দিক দিয়েও অনেককে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের মতে, ৩৭.৭ মিলিয়ন ডলার আয় করে তিনি ২০১৮ সালে ভারতীয় সেলিব্রেটিদের মধ্যে ১ম স্থানে রয়েছেন।
সালমান খানের মুভি মানেই যেন ভারতজুড়ে রীতিমত উৎসব। পরিশেষে বলতে হয়, বিগত ৩০ বছর ধরে বলিউডে সমান তালে ও দক্ষতায় রাজত্ব করে চলেছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম, সালমানম্যানিয়ার জাদু চলছে ও দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, চলবে আরো বছরের পর বছর। আর কোন ছেলেকে বললে, তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও? তারা এভাবেই বলে যাবে, আমি একজন সালমান খান হতে চাই। আরও ৩০ বছর এভাবেই মনোরঞ্জন করে যান সালমান খান। শুভ জন্মদিন বলিউডের ভাইজান!