গল্পের শুরুটা শাহবাগ থেকে। ওয়েট, ওয়েট! ভারতের হকি কিংবদন্তীর গল্প শাহবাগ থেকে শুরু হয় কীভাবে, তাই তো? এই শাহবাগ হারিয়ানার ছোট্ট এক গ্রাম...

সন্দীপ সিং থেকে ফ্লিকার সিং হওয়ার পিছনে যে জার্নিটা, সেটা অনেক লম্বা ছিল। জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই এসেছে। শুরুটা ছিল শাহবাগ থেকে। হারিয়ানার ছোট এক গ্রাম। আমি সেখানেই জন্মেছি। শুরুতে হকি শুধু আমার বড় ভাই খেলতো। উনাকে দেখেই শুরু। হকি আমি শুরু থেকেই পছন্দ করলেও খেলাটার প্রতি আগ্রহ তেমনভাবে জন্মেনি।

বড় ভাই হকি খেলতো বলে তার জন্য হকিস্টিক, জুতা, নতুন কাপড় আসতো। আমিও তাই আমার বাবা-মা’কে বলতাম আমাকেও নতুন কাপড়, জুতা দাও। কিন্তু তারা বলতো যদি হকি খেলি তবেই এসব মিলবে৷ তো আমিও এসব পাওয়ার লোভেই বললাম, চল তাইলে হকিই খেলি। দেখি কি করা যায় হকিতে৷ এভাবেই হকি খেলা শুরু হয় আমার। 

আমাদের কোচ খুবই স্ট্রিক্ট ছিল। স্ট্রিক্ট মানে খুবই স্ট্রিক্ট৷ এত স্ট্রিক্ট ছিল যে, যদি ট্রেনিংয়ে পাঁচ মিনিটও দেরী করতাম তাহলে সকাল-সন্ধ্যা ৩/৪ ঘন্টা ফ্রন্টরোল করতে হতো মাঠে। আর ফ্রন্টরোল এমন না যে টিশার্ট বা জার্সি পরে করা। সেটা করতে হতো খালি গায়ে। সেটা গরম মৌসুম বা শীতকাল হোক, ফ্রন্টরোল খালি গায়েই করতে হতো। সে সময়টা আসলেই অনেক কঠিন ছিল৷

ট্রেনিংয়ে যাবার সময় আমি আর আমার বড় ভাই সাইকেলে করে যেতাম। কোচ ট্রেনিং করাতো। ট্রেনিং শেষে এবার বড় ভাই বলতো, “এবার তুই সাইকেল চালা”। এত পরিশ্রমের পর ক্লান্ত আমি তখন সাইকেল চালাতাম আর উনি পিছনে বসতেন। শুরুতে স্ট্রাগলটা এতই বিশাল ছিল আমাদের। এ স্ট্রাগলের পর আমি আমার হকি ক্যারিয়ার করার জন্য আরও সিরিয়াস ও কঠিন ট্রেনিং শুরু করি। আমার আদর্শ ছিল ধনরাজ পিল্লাই। সবসময় চাইতাম ধনরাজ পিল্লাইয়ের মতো হবো একদিন।

সন্দীপ সিং

২০০৩-এ প্রথম আমি ইন্ডিয়ান টিমে ডাক পাই। ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে আমি ইন্ডিয়ার সাথে বিশ্বেরও সর্বকনিষ্ঠ প্লেয়ার হিসেবে টিনএজেই জাতীয় দলকে অলিম্পিকে রিপ্রেজেন্ট করি। আমার জন্য সেই সময়টা খুবই প্রাউড মোমেন্ট ছিল। ২০০৪ সালের পর ২০০৫ সালে আমাদের জুনিয়ার হকি ওয়ার্ল্ডকাপ ছিল। সেটা অনেকটা ওয়ার্ল্ড কাপ লেভেলের ছিল৷ সেই ওয়ার্ল্ডকাপের হায়েস্ট স্কোরার ছিলাম আমি। সেই সব গোলগুলো আমার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ আমি ইন্ডিয়ান সিনিয়র টিমে নিজের জন্য একটা পাকা আসন বানাতে চাচ্ছিলাম। পুরো ওয়ার্ল্ডকে দেখাতে চাচ্ছিলাম সন্দীপ সিং বলে কেউ আছে যে ফ্লিকার সিং হয়ে আসছে। 

২০০৬ আমার জন্য খুবই ভাল সময় ছিল। আমার কোচরা আমাকে অনেক ভাল ট্রেনিং দিচ্ছিল। আমাকে ডিফেন্সও শেখাচ্ছিল সাথে এটাকের ট্রেনিংও দিচ্ছিল। সবচেয়ে বেশি কাজ হচ্ছিল আমার ড্র্যাগ ফ্লিক নিয়ে যেটা আমার স্পেশালিটি ছিল৷ সেই ২০০৬ সালে আমার জন্য এমন এক দিন আসে যেটা আমার জার্নিটা, আমার গল্পটাকে পুরোই বদলে দিয়েছে। 

২০০৬ সালে আমাদের সিনিয়র ওয়ার্ল্ড কাপের ক্যাম্প হচ্ছিলো দিল্লিতে। আমাদের এক সপ্তাহের ছুটি ছিল। ছুটির পর আমরা ওয়ার্ল্ড কাপের জন্য জার্মানির উদ্দেশ্যে উড়ার কথা ছিল। ২২ আগস্ট ২০০৬ আমার জন্য এক কালো দিন৷ সকাল বেলা আমি ঘর থেকে রওনা দিয়েছি ট্রেন ধরার জন্য। ট্রেন দিল্লি হয়ে আমার ক্যাম্পে নিয়ে যাবে আমাকে। ট্রেনে বসলাম৷ আমার সাথে আমার আর তিনজন বন্ধু ছিল৷ ট্রেনে বসার পরই এমন এক সাউন্ড আসলো আমার কানে যেন মনে হলো আমার আশেপাশেই কোন বোম ব্লাস্ট হয়েছে।

কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার কোন অনুভুতি ছিল না। সবকিছু শান্ত চুপচাপ লাগছিল৷ কারণ আমার কান বন্ধ হয়ে গেছে ততক্ষনে৷ ফুল বডি মৃত মনে হচ্ছিল। আমার মনে হলো আমার শরীরটা যেন একটু লাফ দিল। আর লাফ দেয়ার সাথে সাথেই মনে হলো কেউ যেন আমার কোমরের মধ্যে লোহা ঢুকিয়ে দিল৷ আর তখনই পিছন থেকে একজন হাতে বন্ধুক নিয়ে আমার সামনে এসে বলতে লাগলো, “আমার কাছ থেকে ভুলে গুলি চলে গেছে, আমার ভুল হয়ে গেছে”।

নাইন এমএম- এর পিস্তল ছিল সেটা। বুলেট ডিরেক্ট আমার স্পাইনাল কর্ডে হিট করেছিল। সাথে সাথে আমি প্যারালাইজড হয়ে গেলাম। কিছুটা হুশ ছিল। পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করলাম। সে সময় নতুন নতুন ফোন নিয়েছিলাম। প্রথমেই বড় ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম, তারপর আমার কোচকে। উনারাই বললো সোজা হাসপাতাল যাবার জন্য। 

আমাকে চন্ডিগড় হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই আমার এম আর আই, সিটিস্ক্যান যা যা থাকে সব করা হয়। তারপর আমার অপারেশন হলো। অপারেশনের চার সপ্তাহ পর্যন্ত আমার কোন হুঁশ ছিল না। হুঁশ ফেরার পর আমার শরীর অলমোস্ট ৪০ ভাগ ওজন লুজ করে ফেলেছে। আমি আইসিওতে ছিলাম৷ চোখ খুলেই দেখলাম আমার সামনে আমার ডক্টর টিম পুরো দাঁড়িয়ে।

আমার ডক্টর আমাকে বলতে লাগলো, “সন্দীপ তুমি এক্সট্রিমলি লাকি যে তুমি বেঁচে আছো। বুলেট তোমার বডির যে তিন অর্গান থাকে, সেগুলার মধ্য দিয়ে স্পাইনাল কর্ডকো টাচ করে ডাইরেকশন বদলে নিচে এসেছে। এবং সবগুলাকে রাব করেই বুলেট বের হয়েছে। কিন্তু তুমি খুবই ভাগ্যবান যে তুমি বেঁচে গেছো। দেখ আমরা এটা বলবো না তুমি আবার হকি খেলবা বা আবার হাঁটতে পারবা। খুবই ভাগ্যবান মেনে নাও নিজেকে যদি কখনো হুইলচেয়ারেও বসতে পারো তাহলে”।

সেদিন আমি ডক্টরকে মুখের উপর বলেছিলাম সামনে দরজা দেখতেই পাচ্ছেন। আপনি বের হয়ে যেতে পারেন৷ আমার আশেপাশে আমি কোন নেগেটিভ মানুষ চাই না। সাথে সাথেই ভাইকে ফোন করেছি আর বলেছিলাম, “আমাকে একটা হকি স্টিক এনে দাও”। এই হকি স্টিক আজও আমি সারাক্ষণ হাতে রাখি, আমার বিছানায় আমার পাশে আজও সারাক্ষণ এই হকি স্টিক থাকে৷ আমি ঘুমাই হকিস্টিক পাশে নিয়ে। 

এরপর আমার জীবনের যে জার্নিটা ছিল, সেটা আগের চেয়েও অনেক বেশি কঠিন ছিল। ২৪ ঘন্টার ২৩ ঘন্টাই আমি জেগে থাকতাম আর এক ঘন্টা ঘুমাতাম। সেটার জন্যও আমাকে ট্যাবলেট দেয়া লাগতো। আমার মনকে শান্ত করার জন্য৷ আমার মনে সারাক্ষন শুধু ইন্ডিয়ার জন্য খেলতে হবে এই এক কথাই ঘুরতো। আবার হকি খেলতে হবে, আমার মাঠে নামতে হবে। আরেকটা ব্যাপার ছিল, যেসব রেকর্ড আমি এখনো বানাইনি সবগুলো আমাকে বানাতে হবে। আমার ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি যখন শুয়ে থাকতাম আমার মনে হতো আমার পা নেই। আমার পায়ে কোন অনুভুতিই ছিল না। আমার বিছানাতে কেউ বসলে বা বিছানা একটু নড়লেও মনে হতো আমার শরীরে যেন কারেন্ট লেগে গেছে। আমাকে ইঞ্জেকশন দেয়া হতো পায়ে। আমি বুঝতামও না নিডল এখন ঢোকাচ্ছে নাকি বের করা হচ্ছে।

কিছুদিন পর ভাইকে বললাম আমি আবার মাঠে নামবো। তখন রাতে ডক্টর না থাকলে, সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর ভাইয়ের সাথে উঠার চেষ্টা করতাম সেই হকিস্টিকে দিয়েই। হকি স্টিকে ভর দিয়ে দাঁড়াতে চাইতাম। এভাবে অনেক দিন যাবার পর হকিস্টিক দিয়ে একটু হাঁটতাম, আবার পড়েও যেতাম। একদিন দেয়াল ধরে ধরে বাথরুম পর্যন্ত গিয়ে আবার বিছানায় ফিরে আসলাম!

এটা দেখেই ডাক্তার আমাকে হুইল চেয়ারে বসায়। হুইল চেয়ারে বসার পর এবার ডক্টর বলে, “এখন তুমি বিদেশ যেতে পারো রিহ্যাবের জন্য”। ইন্ডিয়ায় এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে ভাল রিহ্যাব পাওয়া যেত। আমাকে বিদেশ পাঠানো হয়, সরকার ও হকি ফেডারেশন অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। ফেডারেশনের সাহায্যে আমি নেদারল্যান্ড গিয়েছি হুইল চেয়ারে বসে। কিন্তু ফিরেছি নিজের পায়ে হেঁটেই! 

হাসপাতালে হুইলচেয়ারে

সেই রিহ্যাবের ৬-৭ মাস আমার জন্য আরও কাঠিন ছিল৷ কারণ একে তো রাতে ঘুম আসতো না, তার উপর আবার ছিলাম একা। আর যখন মানুষ একা থাকে, তখন তার ব্রেইন খুব বেশি কাজ করে। আমার মাথায় শুধু হকি, হকি, হকি ছিল। ডক্টর আমাকে ঘুমের ঔষধের সাথে সাথে ইঞ্জেকশনও দিত ঘুমানোর জন্য। বলতো তোমার ব্রেইন রেগুলার রান করছে। এটার ব্রেক দরকার, রেস্ট দিতে হবে। 

তারপর দেশে আসলাম। এখন আমি হাঁটতে পারি সাথে অল্পসল্প দৌড়াতে পারি। মাথায় ঘুরতো আবার ইন্ডিয়া টিমে ফিরতে হবে। তখন আমার ইন্ডিয়া এয়ারলাইন্সে জব ছিল। তারা বললো, আপনি টিমে জয়েন দিন। দেখি আপনি কেমন করেন এখন। টিমের সাথে ট্রেনিং করে যাচ্ছি ছয় সাত মাস। এখনো আমার নামের পাশে প্রশ্নবোধক দেয়া থাকে “সন্দীপ সিং ফিট না”। তারপর একটা টুর্নামেন্ট আসে যেখানে সন্দীপ সিং এর অল্প সফলতা আসে৷ তারপরই আমি ফেডারেশনকে নক করি আবারো খেলতে চাই বলে।

সময়টা ২০০৮ এর। পুরো দুই বছর লেগেছে আমার ঐ ইন্সিডেন্ট থেকে ফিরতে। ফেডারেশন আমাকে একটা চান্স দিয়েছে, সুলতাম আজলান শাহ ২০০৮ টুর্নামেন্ট। সেখানে আমি সব মিলিয়ে ৮ গোল করেছিলাম। এবং অবশ্যই সেটার হায়েস্ট স্কোরার। টুর্নামেন্ট থেকে ফিরে আসার পর পরই আমাকে ইন্ডিয়া ন্যাশনাল টিমের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়।

ক্যাপ্টেন তো হয়ে গেছি, কিন্তু এবার দায়িত্ব অনেক বিশাল। ২০০৮ সালে আমরা অলিম্পিকের জন্য কোয়ালিফাই করতে পারিনি। আমাদের টার্গেট ছিল পরবর্তী অলিম্পিকে কোয়ালিফাই হওয়া। তার সাথে ছোট ছোট টার্গেট ছিল। ইন্ডিয়া টিমকে ডেভেলপ করার, আবার পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার। 

২০০৯ সালে আমি আবার সুলতান আজলান শাহ টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বারের মত গেলাম। সেখানের সেমিফাইনাল ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের সাথে। পাকিস্তানের সাথে কেমন উত্তেজনা থাকে সেটা সবাই জানে। সেই ম্যাচ আমরা ২-১ গোলে জিতেছিলাম। দুই গোলই আমার করা। সেই ম্যাচের একটা ইতিহাস আছে। নরমালি ম্যাচে যে গোলকিপার শুরু করে, সেই ম্যাচ শেষ করে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানের গোলকিপার ছিল সালমান আকবার। তখনকার সময়ের বিশ্বসেরা গোলকিপার। কিন্তু হাফটাইমের পর সে গোলকিপার বেঞ্চে বসে গেছে আর সেকেন্ড গোলকিপার মাঠে নেমেছে৷ ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের কোচ এসে আমাকে বলেছে, “সন্দীপ এ কেমন ফ্লিক করা শুরু করলা? আমাদের গোলকিপারের লুজ মোশান হয়ে গেছে তোমার নামেই”! 

সেমিফাইনাল জিতে রুমে ফিরেই একটা বড় নিউজ অপেক্ষা করছিলো৷ আমাদের টিমমেট সুনীল, যে কিনা আজও ইন্ডিয়ার হয়ে খেলছে তার বাবা মারা গেছে। আমাদের জন্য খবরটা শকিং ছিল৷ আমি সুনীলের রুমে যাই আর তাকে বলি, “সুনীল আমাদের জন্য এটা বড়ই দুঃখজনক সংবাদ। আমরা পুরো টিমই তোমার সাথে আছি। এখন তুমি কি করতে চাও?”। তার জবাব ছিলো, আমি ইন্ডিয়া যেতে চাই৷ তখন আমি তাকে আবার বলি, “তুমি যেতে চাও যাও। দুনিয়ার যেকোন টিমে তুমি জায়গা পাবা, খেলতে পারবা৷ ইন্ডিয়াতেও আবার ডাক পাবা, রেকর্ডও বানাবা। কিন্তু এই যে মোমেন্ট, এটা হিস্ট্রি ক্রিয়েট করা মোমেন্ট৷ আজ যদি তুমি কালকের ফাইনালের জন্য থেকে যাও এটা ইতিহাসে লেখা থাকবে এই বলে যে সুনীল তার বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়েও নিজ ন্যাশন ইন্ডিয়াকে প্রায়োরিটি দিয়েছে”। 

আমার কথায় সে কিছুটা মোটিভেট হয়েছিল আর থেকে গেছে টিমের সাথে। ফাইনালে সুনীলই স্কোর করেছিল আর আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। সেই টুর্নামেন্ট আমরা ১৩ বছর পর জিতেছিলাম। সেই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল আমার ছিল। আমি টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম। আবার সেই টুর্নামেন্টে প্লেয়ার অফ দ্যা টুর্নামেন্টও আমি হয়েছি।

২০০৯ সালে আমাদের টিমের একটা ভাল মোমেন্ট তৈরি হয়েছিল এবং আমরা সেটা কন্টিনিউ করেছি। ২০১০ সালে আমার এক্সিলেন্সের জন্য ভারত সরকার আমাকে “অর্জুন” এওয়ার্ডে ভূষিত করে। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড হকি ফেডারেশন থেকে সেরা পাঁচ প্লেয়ারের একজন আমাকে নমিনেট করা হয়। তারপর আসে ২০১২ সাল।

সেই ২০০৮ সালে যখন ক্যাপ্টেন হয়েছিলাম তখনই আমি ফোকাস করেছিলাম ২০১২ সালের অলিম্পিক খেলার৷ অনেক নতুন নতুন টেকনিক শিখেছি এই অলিম্পিক কোয়ালিফাইয়ের জন্য। সেই লন্ডন অলেম্পিকে খেলার জন্য ফাইনাল ম্যাচ ছিল ফ্রান্সের বিপক্ষে। আমার জীবনের সবচেয়ে স্বরনীয় রাত সেটা। এক রাতেই আমি তিন তিনটা রেকর্ড ব্রেক করেছি। প্রথমটা, যে আমার এখনো আইডল, সেই ধনরাজ পিল্লাইয়ের ইন্ডিয়ার হয়ে ১২১ গোলের রেকর্ড ভেঙ্গেছি৷ দ্বিতীয় সেই ফাইনালে আমি রেকর্ড ব্রেকিং ১৪৫ কি.মি পার আওয়ার স্পিডের ড্রেগ ফ্লিক করেছি। তিন নাম্বারটা আমিই একমাত্র প্লেয়ার যে ফাইনালে পাঁচ গোল করেছি৷ আবার সেই রাতটাও ছিল আমার জন্মদিন।

তো সেই ম্যাচকেই আমি আমার পূনর্জন্ম মানি৷ এই আমার সন্দীপ সিং থেকে ফ্লিকার সিং হওয়ার জার্নি। জীবনে আমি একটা জিনিসই শিখেছি। সেটা হলো, “নেভার গিভ আপ”। নেভার গিভ আপ কথাটা বলা খুবই সহজ। কিন্তু যে ভাল ফাইটার হয় সে যে কোন চ্যালেঞ্জকে গ্রহন করে। আমি ছোট থেকেই যে কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। আমার জীবনে সেই গুলিটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল৷

চ্যালেঞ্জ সবার জীবনেই আসে। আমার যেমন গুলি লাগা থেকে ফিরে আসাটা ছিল চ্যালেঞ্জ, তেমনি কারো জন্য কোন পরীক্ষায় পাশ করাটা চ্যালেঞ্জ। আবার কারো জন্য কোন চাকরি পাওয়া। কারো জন্য ছোট হার্ডেল আসে, কারো জন্য অনেক বড়। কিন্তু যখন আপনি সে চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলা করার সাহস নিবেন তখন অবশ্যই আপনি বিজয়ী হয়েই ফিরবেন।

আর যখন আপনার গোল এচিভ হয়ে যাবে তখন নতুন চ্যালেঞ্জ নিন, নতুন গোল বানান। কারণ যেদিন নিজেকে সাকসেসফুল ভেবে বসবেন, ভাববেন আপনার সব গোল এচিভ হয়ে গেছে সেদিন থেকেই আপনার পতন শুরু হবে। আপনার দ্য এন্ড! তাই শত বছর হোক বা ১৫ বছর, নিজের সামনে প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জ আনুন, নতুন গোল বানান- এর চাইতে বড় আর কিছুই নেই। ধন্যবাদ! 

সন্দীপ সিং- টেড এক্স টকস

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা