অল্প বয়সেই তারকাখ্যাতি থেকে শুরু করে প্রেম, বিরহ, বিয়ে, ডিভোর্স, মাদক, বেআইনী অস্ত্র থেকে শুরু করে মামলা-জেল, মাফিয়া আর জঙ্গীদের সঙ্গে ওঠাবসার অভিযোগ- কি নেই তার জীবনে!
রোলার কোস্টার রাইডে চড়েছেন কখনও? সাঁই সাঁই করে কয়েকশো ফুট ওপরে উঠে যাচ্ছে, পরমূহুর্তে আবার প্রবল গতিতে রোলার কোস্টার নেমে আসছে নীচে, অদ্ভুত একটা উত্তেজনা, অন্যরকম একটা উন্মাদনা, পরতে পরতে যার ছড়িয়ে আছে রোমাঞ্চ! জীবনটা যদি রোলার কোস্টার রাইডের মতো হয়, কেমন হতো তাহলে? সঞ্জয় দত্তকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। বলিউডি এই নায়ক তার পুরো জীবনটাই কাটিয়েছেন রোলার কোস্টার রাইডের মতো করে, উত্থান আর পতনে ভরা কি অদ্ভুত এক সিনেম্যাটিক জীবন তার! যে জীবনে প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তি বেশি, সুখের চেয়ে কষ্টই বেশি, যে জীবন সঞ্জয় নিজেও হয়তো চাননি কখনও!
একুশ বছর বয়সে ফিল্মস্টার হয়েছেন, তারকা বনে গিয়েছেন। তারপর নেশায় ডুবে গিয়েছেন পুরোপুরি, ছেড়েছেন দেশ। ফিরে এসেছিলেন দ্বিগ্বিজয়ীর মতো করেই, বলিউডের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। পর্দায় নায়ক আবার বাস্তবজীবনের বিশাল খলনায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, বোম্বে ব্লাস্টের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে খেটেছেন জেল। তাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া হয়েছিল, সেই সঞ্জর দত্ত জেল থেকে ফিরে উপহার দিয়েছেন মুন্নাভাইয়ের মতো সিনেমা! একটা জীবনে কত হাজারটা গল্পের জন্ম দিয়েছেন তিনি, ভেঙেছেন কতবার, কিন্ত মচকাননি, নিজেকে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে দেননি। তিনি ফিরে এসেছেন বারবার, প্রমাণ করেছেন, হারিয়ে যাওয়ার জন্যে তার জন্ম হয়নি!
বাবা-মা দুজনই সিনেমার বিখ্যাত তারকা। মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল, ছেলেও সিনেমার নায়কই হবে। মা নার্গিসের সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্কটা ছিল ভীষণ গভীর, তার যতো আবদার, সবই পেশ হতো মায়ের দরবারে। 'রকি' সিনেমার শুটিং যখন চলছে, নার্গিস তখন ভীষণ অসুস্থ। সিনেমা মুক্তির কয়েকদিন আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন নার্গিস, ভীষণ একা হয়ে গেলেন সঞ্জয়। সিনেমার স্পেশাল স্ক্রিনিঙের দিন পাশে একটা চেয়ার ফাঁকা রেখে বসেছিলেন তিনি, যেন অনুভব করছিলেন, মা বসে আছেন সেই চেয়ারে, তার পাশে। মুগ্ধ হয়ে দেখছেন নিজের ছেলের অভিনয়!
মাদকের সঙ্গে পরিচয় কলেজজীবন থেকেই। বলিউডের সুপারস্টার জুটির সন্তান হলেও, ছোটবেলায় বেশ লাজুক আর মুখচোরা স্বভাবের ছিলেন সঞ্জয়। মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলেও নার্ভাস হয়ে যেতেন। কয়েক বন্ধু পরামর্শ দিলো, কোকেন খেলে নাকি সাহস বাড়বে, মনের ভয়টা কেটে যাবে! শুরু হলো মাদকের সঙ্গে বসবাস। মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে ড্রাগ নেয়া বন্ধ করেছিলেন কিছুদিন, কিন্ত সহ্য করতে পারছিলেন না একদমই। অসুস্থ নার্গিসকে যখন নিউইয়র্কে নিয়ে যাওয়া হলো চিকিৎসার জন্যে, তখন সঞ্জয়ও গেলেন মায়ের সঙ্গে, জুতা আর মোজার ভেতরে লুকিয়ে নিয়ে গেলেন হিরোইন আর কোকেনের পুরিয়া!
মা মারা যাওয়ার পরে আরও বেপরোয়া হয়ে গেলেন সঞ্জয় দত্ত। নিজের জন্যে পরোয়া সঞ্জয়ের মধ্যে কোনদিনই ছিল না, তিনি বাঁচতেন মায়ের জন্যে। এবার আর কারো জন্যে মায়া নেই, যতো খুশী কোকেন নাও, মারিজুয়ানা খাও। লোকে বেঁচে থাকার জন্যে তিনবেলা ভার খেতো, সঞ্জয় দত্ত নিয়ম করে মাদক নিতেন। একবেলা ডোজ না পড়লে মাথা খারাপ হয়ে যেতো তার, পাগলের মতো উদভ্রান্ত আচরণ করতেন। বাড়ির সবাই তো জেনে গিয়েছিল, বাইরের লোকজনের জানতেও দেরী হলো না। সিনেমার শুটিঙের শিডিউল দিতেন, কিন্ত নেশার ঘোরে পড়ে থাকতেন বন্ধুর বাড়িতে বা মদের দোকানে, ফোন করেও পাওয়া যেতো না তাকে। বাবা সুনিল দত্ত বাধ্য হয়ে পরিচালকদের বলে দিয়েছিলেন, "আপনারা নিজেদের রিস্কে সঞ্জয়কে সিনেমায় নেবেন। পরে কোন ঝামেলা হলে আমার কাছে আসবেন না প্লিজ!"
একটা সময় তো সিনেমার প্রযোজকেরাই সঞ্জয়কে সিনেমার সেটে ড্রাগ সাপ্লাই করা শুরু করলেন। ড্রাগ ছাড়া সঞ্জয় থাকতে পারবেন না, দিনের পর দিন শুটিং প্যাক-আপ হওয়ার চেয়ে মাতাল নায়ক নিয়ে শুটিং করাটাই ভালো। সঞ্জয়ের বোন প্রিয়া আর নম্রতা কলেজে গেলেই বন্ধুরা ক্ষ্যাপাতো, সঞ্জয়কে নিয়ে আজেবাজে কথা বলতো। ক্ষোভে-কষ্টে-অভিমানে কলেজ বদলে ফেলতে হয়েছিল প্রিয়া দত্তকে। এতকিছুর পরেও বিকার ছিল না সঞ্জয়ের।
তবে ঘোরটা কেটে গেল একদিন। বাবার দুশ্চিন্তা, বোনেদের কান্না টলিয়ে দিলো তার ভেতরটাকে। এরমধ্যে বান্ধবী টিনা মুনিমকে বিয়ে করেছিলেন সঞ্জয়, কিন্ত সম্পর্কটা টেকেনি বেশিদিন। টিনার চেয়ে মাদককেই বেশি ভালোবাসতেন সঞ্জয়। সেই ভালোবাসার ঘোর থেকে মুক্তি পেতেই বাবার কাছে সাহায্য চাইলেন তিনি। পিতা-পুত্রের মধ্যেকার বরফ গললো অবশেষে। এর আগে অজস্রবার সঞ্জয়কে নিজের চোখের সামনেই ড্রাগ নিতে দেখেছেন সুনীল দত্ত, বাধা দেননি কখনও। তার কথা ছিল একটাই- "আজ আমি বাধা দিলে কাল ও আমাকে লুকিয়ে কোকেন নেবে। তাতে লাভটা কি? ও ঠেকে শিখুক, সেটাই আমি চাই।"
রিহ্যাবের জন্যে সঞ্জয় উড়ে গেলেন আমেরিকায়। রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তির সময় কয়েকটা ফর্ম দেয়া হলো সঞ্জয় দত্তকে, সেখানে লিখতে হয়, কি কি ড্রাগ নিয়েছেন রোগী। ফর্মে যতোগুলো ড্রাগের নাম লেখা ছিল, সবগুলোতেই টিক চিহ্ন দিলেন সঞ্জর। ভারতে প্রচলিত কয়েকটা স্থানীয় মাদকের নাম লেখা ছিল না সেখানে, সেগুলোর নামও লিখে দিলেন পাশে। ডাক্তার তো দেখে অবাক, এই লোক যে এতদিন বেঁচে আছে, এটাই তো বিশাল একটা মিরাকল! রিহ্যাব সেন্টারে দারুণ কষ্টে কেটেছে শুরুর দিনগুলো। ভাতের মতো ড্রাগস খেতেন যে মানুষটা, তার পক্ষে হেরোইন আর কোকেন ছাড়া বেঁচে থাকাটা সহজ কিছু নয়।
একেকবার প্যানিক অ্যাটাক হতো, মৃগীরোগীর মতো থরথর করে কাঁপতেন সঞ্জয় দত্ত। শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখতে হতো বিছানার সঙ্গে, তার মতো লম্বা-চওড়া মানুষকে সামলাতে আমেরিকান নিগ্রোদেরও কালোঘাম ছুটে যেতো! একবার রিহ্যাব সেন্টার থেকে পালিয়ে বাইরে ছিলেন কয়েকটা দিন। আমেরিকায় মাদক পাওয়া তো খুব সহজ নয়, টাকাও ছিল না সঞ্জয়ের কাছে। পথেঘাটে ভিক্ষা করেছেন তখন, কেউ একটা বার্গার হাতে ধরিয়ে দিলে হাভাতের মতো কামড় বসিয়েছেন তাতে। ফিল্মস্টার সঞ্জয় দত্তকে তখন চেনা যায় না, শরীর ভেঙে গেছে, গালের হাড় ঢুকে গেছে ভেতরের দিকে!
রিহ্যাব শেষ হলো, বাবার কথায় দেশে ফিরে এলেন সঞ্জয় দত্ত। জিমে যোগ দিলেন, নেশা বানিয়ে ফেললেন সেটাকে। তার বাইসেপ আর অ্যাবস দেখে বলিউডের ডাক এলো আবার, সঞ্জয় ফিরে এলেন তার আপন ঠিকানায়, তবে নতুন রূপে। পর্দায় তাকে দেখে চমকে গেল দর্শক। এমন সুঠাম দেহের নায়ক যে বলিউড এর আগে খুব একটা দেখেনি কাউকে! আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়টা পর্যন্ত সানি দেওল-জ্যাকি শ্রফ-গোবিন্দদের সাথে এক কাতারে উচ্চারিত হতো সঞ্জয়ের নাম, কখনওবা বাকীদের আগেই! নাম, তেজা, খতরনাক, গুমরাহ, খলনায়ক- একটার পর এক হিট সিনেমা। প্রযোজকদের স্বস্তির নাম তখন সঞ্জয় দত্ত, পরিচালদের এক নম্বর পছন্দও সঞ্জয় দত্ত!
খলনায়ক সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করে সবার মন জয় করে নিলেন আরও একবার। কেউ হয়তো তখন ধারণাও করতে পারেনি, কিছুদিন পরেই রঙিন পর্দার এই নায়ক নিজেই বাস্তব জীবনে খলনায়কে পরিণত হবেন! ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বোম্ব ব্লাস্টের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন সঞ্জয়, বেআইনী অস্ত্র রাখার অভিযোগ দায়ের করা হলো তার বিরুদ্ধে। যদিও সেই অস্ত্রটা পাওয়া যায়নি, কিন্ত পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় স্বীকার করেছিলেন, তিনটা একে-৫৬ রাইফেল ছিল তার কাছে, যেগুলোর লাইসেন্স ছিল না। আর সেই অস্ত্রগুলো সঞ্জয় পুলিশের রেইড পড়ার খবর পেয়েই নষ্ট করার জন্যে দিয়ে দিয়েছিলেন পরিচিত একজনকে!
পুলিশের অভিযোগ ছিল, এই বেআইনী অস্ত্রগুলো দাউদ ইব্রাহিমের লোকজন পাঠিয়েছিল মুম্বাই বোম্ব ব্লাস্টের সময় ব্যবহারের জন্যে। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল, আসলেই দাউদের লোকজন এই তিনটা রাইফেল নিয়ে এসেছিল সঞ্জয়ের কাছে। আবু সালেম নামের এক গ্যাংস্টার এগুলো নিজে সঞ্জয়ের হাতে তুলে দিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছিল। যদিও সঞ্জয় দাবী করেছিলেন, নিজের পরিবারের সুরক্ষার জন্যেই এই অস্ত্র রেখেছিলেন তিনি। তখন থেকেই আদালত আর জেলের সঙ্গে তার বসবাস, পুলিশ আর উকিলের সঙ্গে শুরু হলো তার ওঠাবসা। ফিল্মের কাজটাও চলছিল মোটামুটি ঠিকঠাক। মামলা-মোকদ্দমা সামলে যতোটা পারা যায় আরকি। কিন্ত জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছিল খুব দ্রুত। মাধুরী দিক্ষিতের সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন তখন বলিউডের টক অফ দ্য টাউন ছিল। অস্ত্র মামলায় জেলে যাওয়ার পরে মাধুরী দূরে সরে গেলেন, সঞ্জয়ও তাকে বিরক্ত করতে চাননি কখনও।
বলিউডে তখন শাহরুখ খানের একক রাজত্ব শুরু হয়েছে। এর মধ্যেও 'বাস্তব' সিনেমায় অভিনয় করে ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন সঞ্জয়। টানা বারোটা সিনেমা ফ্লপ গেল তার, মান্যতার সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতেও বসেছেন ততদিনে। মুন্নাভাই এমবিবিএস' দিয়ে নিজের হারানো ইমেজটাই আবার পুনরুদ্ধার করলেন। কিন্ত সিনেমা দিয়ে তো আর বিচারকদের মন জয় করা যায় না। হাইকোর্টের রায়ে বেআইনী অস্ত্র রাখার দায়ে ছয় বছরের সাজা হলো সঞ্জয়ের। সুপ্রীম কোর্টের রায়ে সাজা কমলো এক বছরের, পাঁচ বছরের শাস্তি মাথায় নিয়ে পুনের ইয়েওয়াড়া কারাগারে ঢুকলেন সঞ্জয় দত্ত।
জেলখানার জীবনটা ছিল সঞ্জয়ের জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়। বাচ্চাদের কাছে বিদায় নিয়ে গিয়েছিলেন, বলেছিলেন, বিদেশ যাচ্ছেন। শীগগিরই ফিরে আসবেন। মান্যতাকে নিষেধ করে দিয়েছিলেন, তাকে দেখতে আসার সময় যেন সন্তানদের না আনেন। আট ফুট বাই দশ ফুটের ছোট্ট একটা কামরায় কাটতো রাত, শক্ত সিমেন্টের মেঝেতে ঘুমাতে হতো চাদর বিছিয়ে। ছারপোকার উৎপাত ছিল, হুটহাট কামরার লাগোয়া কমোড থেকে নোংরা পানি বেরিয়ে ভিজিয়ে দিত পুরো মেঝে। ঘন্টার পর ঘন্টা তখন পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন সঞ্জয়। দিনের বেলা কাগজের প্যাকেট বানাতেন। সেখান থেকে টুকটাক যা আয় হতো, সেটা ক্যান্টিনেই উড়িয়ে দিতেন সঞ্জয়।
একবার পুরো এক সপ্তাহের জন্যে ক্যান্টিনে খাবারের টোকেন কিনে টাকা শেষ করে ফেলেছিলেন, এরমধ্যে তার বোন আর ভগ্নিপতি এলেন তাকে দেখার জন্যে। ওদের দুজনকে দুটো টোকেন দিয়েছিলেন সঞ্জয়, সেগুলো দেয়ার কারণে দুটো দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছিল তাকে! জেল থেকে বেরিয়েছেন শাস্তি ভোগ করে, আবার বলিউডে নিয়মিত হয়েছেন, সিনেমা করছেন। গতবছর তো তার জীবনি নিয়েও নির্মিত হচ্ছে সিনেমা, মুক্তির পরে সেটা রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসাও করেছে, সঞ্জয়ের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে রনবীর কাপুর জিতেছেন ফিল্মফেয়ার। সঞ্জয়ের নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না, তার বায়োপিক সিনেমা বানানো হতে পারে, সেটা কখনোই ভাবেননি তিনি। কিন্ত এমন জীবনের ঠাঁই রূপালী পর্দায় না হলে আর কোথায় হবে?
নেশা ছাড়ার পরেই বাবার সাথে সম্পর্কটা ভীষণ ভালো হয়ে গিয়েছিল তার। সুনীল দত্ত সম্পর্কে সঞ্জয় বলছিলেন- "সব ছেলেরাই বলে, তার বাবা হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। আমার সেটা বলার দরকার হয় না। আমি আজ যে জায়গাটায় আছি, এই যে কথা বলছি, সিনেমা করছি, বাচ্চাদের কোলে নিচ্ছি, সবটাই আমার বাবার জন্যে। জানেন, আমি যা করেছি, অন্য কেউ হলে আমাকে নিজের সন্তান বলেই পরিচয় দিতো না হয়তো। আমি জীবনেও ভাবিনি, আমাকে নিয়ে কখনও আমার বাবা গর্ব করতে পারেন। একটা মাদকসেবীকে নিয়ে কি কোন বাবা গর্ব করতে পারে বলুন? অথচ 'মুন্নাভাই এমবিবিএস' ব্লকবাস্টার হবার পরে বাবা আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলে, উনি আমাকে নিয়ে গর্ব করেন! আমার তখন মনে হয়েছিল, জীবনের কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই, আর কিছুই পাওয়ার নেই। সবকিছু আমি পেয়ে গেছি!"
যে জীবন দোয়েলের, ফড়িঙের, সেই সাদামাটা সাধারণ জীবন তো সঞ্জয় দত্তের হতে পারে না! সে জীবনের খোঁজ সঞ্জয় দত্ত পাননি কখনও। তার জীবন বরাবরই বক্ররেখায় চলেছে, উত্তাল সাগরে ঢেউয়ে ভাসা ডিঙি নৌকার মতো। এমন জীবনের গল্প শুনতে ভালো লাগে, এমন জীবন নিয়ে বানানো সিনেমা দেখে আনন্দ পাওয়া যায়, কিন্ত এই জীবনের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে থাকাটা বোধহয় খুব একটা সুখকর নয়!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন