এই দরিদ্র মানুষগুলোর পেটের ক্ষুধা কোনো লকডাউন মানে না, মানে না কোনো ভাইরাসের চোখ রাঙানি। সন্তানের ক্ষুধা মেটাতে যেকোনো কিছু করতে বাধ্য হন তারা। এর সমাধান কে করবে? রাষ্ট্র? নাকি ফেসবুকের কমেন্ট সেকশনে ভিড় জমানো এলিট জনতা? 

করোনাভাইরাসের অচলাবস্থায় সবচাইতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দিনমজুর মানুষগুলো। দিনে এনে দিন খাওয়া এই মানুষগুলোর নেই কোনো আয়, সঞ্চয় কিংবা অন্য উপায়। খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন তারা। কোনোদিন হয়তো ত্রাণ জুটছে কপালে, কোনোদিন বা না খেয়েই থাকতে হচ্ছে।

প্রাপ্তবয়স্করা হয়তো ক্ষুধার জ্বালা সইতে পারে, কিন্তু দুধের শিশুরা? তারা তো আর করোনার ক্রাইসিস বুঝবে না। তাদের প্রয়োজন সময়মত পুস্টিকর খাবার। করোনার ক্রান্তিকালে দরিদ্র পরিবারের অগণিত শিশু ক্ষুধার তাড়নায় দিন পার করছে। করোনার লকডাউন অনেককিছু থামাতে পারলেও তাদের কান্না থামাতে পারছে না।

এমনই এক করুণ কান্নার গল্প উঠে এসেছে গণমাধ্যমের পাতায়। সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লার একটা টিনশেড ঘরে ভাড়া থাকেন দুই সন্তানের জননী সাথী বেগম। ছোট্ট টিনের ঘরে কাঁথা বিছানো একটা চৌকি পাতা। মেঝেতে ২/৩টা পাতিল। ঘরের এক কোণে টানানো দড়িতে ঝুলছে ক-খানা মিলন জামা-কাপড়। ঘরে একটা বিজলি বাতি থাকলেও নেই কোনো ফ্যান। সে সময় তার স্বামী ছিলেন না ঘরে। তার আড়াই বছরের ছেলেটি চৌকিতে বসা।

সাথী বেগমের ঘরের দৃশ্য 

গত কিছুদিন তাদের ঘরে রান্নার করার মতো কিছুই ছিল না। ত্রাণের সন্ধানে অনেকের কাছে গিয়েছেন, তবে মেলেনি কোনো সহায়তা। সাথী বেগমের স্বামী মানিক মাটি কাটার কাজ করতেন। পরে রিকশা চালাতে শুরু করেছেন। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় সব বন্ধ থাকায় তার রিকশাচালানো বন্ধ। এতে দুটি শিশু নিয়ে রোজগারহীন এ পরিবার বিপদে পড়েছে। এ মহল্লায় নতুন আসায় কারো সাথেই তাদের পরিচয় হয়নি। ফলে ছিটেফোঁটা ত্রাণও জুটছে তাদের।

গত সোমবার দুপুরে ত্রাণের সন্ধানে গিয়ে একজনের সাথে তার পরিচয় হয়; যিনি চুল কেনাবেচার কাজ করেন। তার সাথে আলাপের এক পর্যায়ে সাথী তার মাথার চুল দেখালে হকারটি শ-চারেক টাকা মিলবে বলে আশ্বাস দেন তাকে। তবে চুল কেটে দেওয়ার পর ১৮০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চম্পট দিয়েছেন সেই হকার। সেই টাকায় শিশুর জন্য দুধ, দুই কেজি চাল কিনে আনেন বললেন সাথী।

এই সাথী বেগমের মতো মানুষগুলো এমনিতেই চরম দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে্ন। তার ওপর করোনার সঙ্কট। এই দরিদ্র মানুষগুলোর পেটের ক্ষুধা কোনো লকডাউন মানে না, মানে না কোনো ভাইরাসের চোখ রাঙানি। আমরা অনেকেই ঘরে বসে ভালোমন্দ খেয়েও বিরক্ত হচ্ছি। সিনেমা দেখে, বই পড়ে, গান শুনেও আমাদের সময় কাটছে না।

অথচ এই মানুষগুলো দুইবেলা দুইমুঠো খাবারের তাগিদে এদিক সেদিক ছুটছেন। কোনোমতে না খেয়ে একবেলা কাটিয়ে দিতে পারলেও এরা বেঁচে যান। আমাদের বাস্তবতা আর সাথী বেগমদের বাস্তবতা কখনোই এক পাল্লায় মাপা যাবে না। ভাইরাসে না মারলেও, এই মানুষগুলোকে ক্ষুধায় ঠিকই মেরে ফেলবে। এর সমাধান কে করবে? রাষ্ট্র? নাকি ফেসবুকের কমেন্ট সেকশনে ভিড় জমানো এলিট জনতা? 

তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা- সেলিম আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর।  

আরও পড়ুন- 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা