রাজস্থানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাতিয়া, যারা এই পৃথিবীতে জন্ম নেয়াকে আনন্দময় ভাবে না, যাদের কাছে জীবন মানেই অভিশাপ! অন্যদিকে মৃত্যুতে শোক পালন না করে তারা আনন্দ উল্লাস করে!

জন্মলগ্ন একটা উৎসব, যখন একটি পরিবারে নতুন সদস্য আসে তখন সেই পরিবারে সুখের সীমা থাকে না। একটি নতুন জীবনকে স্বাগতম জানাতে পরিবারগুলোর চেষ্টার কমতি থাকে না। কিন্তু, পৃথিবীর সর্বত্রই কি নতুন জীবনকে একইরকম আনন্দে, উৎসবে স্বাগত জানানো হয়?

খুব বেশি দূর যেতে হবে না। পাশের দেশ ভারতের একটা অঞ্চলের কথা বলি। রাজস্থানে একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় আছে, যারা এই পৃথিবীতে জন্ম নেয়াকে আনন্দময় ভাবে না, যাদের কাছে জীবন মানেই অভিশাপ! এই সম্প্রদায়টির নাম 'সাতিয়া'। এরা বেদুইন সম্প্রদায়, যাদের জীবন কাটে যাযাবরের মতো। এদের নেই কোনো নির্দিষ্ট বাসস্থান। যেখানে রাত, সেখানেই কাত টাইপ অবস্থা।

হাইওয়ের পাশে কোথাও রাত নেমে এলে সেখানেই তারা রাত্রিযাপন করেন। রাতের আয়োজন সীমিত, একটা তাবু খাটিয়ে কোনোরকম থাকবার ব্যবস্থা। এই সম্প্রদায়টি বেশ অদ্ভুত। সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা কর্মক্ষম পুরুষ, তারা অর্থবহ কর্মে উৎসাহী নন। বরং, মদ গিলে তাদের জীবন যায়। তাহলে কি করে জীবিকা চলে এদের?

জীবিকার দায়িত্ব নারীদের কাঁধে। তবে তারা প্রথাগত কোনো পেশায় জীবিকা ধারণ করেন না। পৃথিবীর আদিমতর একটি পেশায় তারা জড়িয়ে গেছেন। শরীরবৃত্তি করে তাদের রোজগার। দেহ বিক্রির জন্য নারীরা খুঁজে বেড়ান খদ্দের, এই করে যা আয়, তা দিয়ে চলে জীবন। নারীর আয়ে বসে বসে মদ পান করে সম্প্রদায়ের পুরুষগণ। এই মদই বোধহয় তাদের জীবনের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে আছে। তা না হলে, সম্প্রদায়ের কারো মৃত্যু হলে কেনই বা তারা মদ এনে আনন্দ করবে!

খুব বেশি পরিবার নেই এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ে। সম্ভবত এখন ২৪ টি পরিবারেই সীমাবদ্ধ এরা। জীবন এদের কাছে উদ্দেশ্যহীন এক অভিশাপের বোঝা। এখানে নারীরা সহজে গর্ভধারণী হন না। সন্তান জন্ম দেয়াকে তারা অভিশাপের মতোই মনে করেন। কি হবে একটা নতুন জীবন এই ধরণীতে এনে, যেখানে নেই নিরাপত্তা নেই উচ্ছাসা, নেই মাথার উপর সামান্য একটা ছাদও। তাই নতুন শিশুকে তারা মনে করে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি ঘটে মৃত্যুতে।

একারণে, মৃত্যু এদের কাছে উৎসবের বিষয়বস্তু, জন্ম শোকের। সম্প্রদায়ের কারো মৃত্যু হলে এদের বিচিত্র আয়োজন দেখা যায়। তারা মদের জোগাড় করে। মিষ্টি কিনে। নতুন জামা কেনে। তারপর সবাই মিলে আনন্দ করে। তাদের ভাষায়, অভিশাপ থেকে মুক্তির আনন্দ এটি! অদ্ভুত নয় কি? সাধারণ কোনো সমাজে কারো মৃত্যু হলে সবাই গোমড়া মুখ করে কান্নাকাটি করে। স্মৃতিচারণ করে। আশি বছর বয়সী বুড়ো মারা গেলেও লোকে বলে, লোকটা ভাল মানুষ ছিল বলেই কি তাড়াতাড়ি মারা গেল...কিন্তু, 'সাতিয়া' সম্প্রদায় একদম ব্যতিক্রম। তাদের বিপন্ন জীবনে মৃত্যু আসে স্বস্তি হয়ে, আনন্দের উপলক্ষ হয়ে! 

মানবসন্তানের জন্মে যে সাতিয়ারা শুধুমাত্র বেজারই হয়, তা নয়। এই আধুনিক যুগে এসেও আমরা দেখতে পাই, কখনো খবর শুনতে পাই, কন্যা সন্তানকে অবহেলার কথা। প্রথম সন্তান কন্যা হলে মাকে দোষারোপ করার কথা, একটা ছেলে সন্তানের জন্য বারবার গর্ভধারণ করছে একজন মা, এমনটাও দেখা যায় অনেক পরিবারে। সেটা অবশ্য অন্য আলোচনা, কিন্তু এই কথা বলার কারণ হলো, যে 'সাতিয়া' সম্প্রদায় মানবশিশুর জন্মকে অভিশাপ ভাবে, তারা আশ্চর্যজনকভাবে কন্যা শিশুর জন্মানোকে আবার গ্রহণ করে। এর পেছনেও দুষ্টু চিন্তা থাকে তাদের। তারা নতুন এই কন্যা শিশুটিকে বড় করে বেশ্যাবৃত্তিতে কাজে লাগাতে পারবে, এই চিন্তা থেকে কন্যাশিশুকে গ্রহণ করে! কী আজব এক সম্প্রদায় এই 'সাতিয়া'!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা