"বিজ্ঞান প্রভুকে ডেকেছে অন্তহীন" ছবিগুলো যে বানিয়েছে সে ও জানে এই ছবিটা বানাতে তার বিজ্ঞান লেগেছে। ক্যামেরা, ডিজিটাল ইমেজ, ইন্টারনেট, ডেটা এবং এডিটিং টুল, সবশেষে ফেসবুক- এর সবই লেগেছে!

"জেনো বিজ্ঞান লড়েছিলো একা, কোন মোল্লা-পুরুত নয়" আর "জেনো বিজ্ঞান অসহায় হয়ে প্রভুকে ডেকেছে অন্তহীন" বলে যে বচসা চলছে তাতে কয়টি পক্ষ? দুইটি? না। পক্ষ আসলে তিনটি! তৃতীয় পক্ষের বক্তব্য কি?

এই বিতর্কে বিজ্ঞানের কিচ্ছু আসে যায় না। হাজার বছর ধরে যেভাবে কাজ করে গেছে, সেভাবে করে যাবে। একদিনের জন্যেও থামবে না সার্চ ফর ইনোভেশন, সার্চ ফর ইনভেনশন। এই বিতর্কে প্রভুরও কিচ্ছুই আসে যায় না। যিনি পৃথিবীর মত ছয় ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়নের বেশি গ্রহ তৈরী করেছেন (দুটো ট্রিলিয়ন ভুলে লেখা হয়নি, ওটাই সঠিক), তার কাছে শুধুমাত্র মিল্কিওয়ের তিন ট্রিলিয়ন গ্রহের একটি গ্রহ এই পৃথিবীতে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় কি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিলো এই ব্যাপারটা সাহারার বুক থেকে এক কনা বালি কম-বেশি হবার চেয়ে ট্রিলিয়ন গুন কম গুরত্বপুর্ন।

আসে যায় শুধু প্রভুর এজেন্টদের! এভাবেই এখানে আসলে তিনটি পক্ষ চলে আসে, প্রভু স্বয়ং একটি পক্ষ যার বক্তব্য আমরা পাই নি। বক্তব্য পেয়েছি তাকে বেচে খাওয়া তৃতীয় পক্ষটির, "রং নম্বর" ওয়ালাদের।

প্রথম যেদিন চাকা আবিষ্কার হলো, আবিষ্কারক আসমানের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দিয়ে বলে ওঠেননি "দেখায়ে দিলাম তোমারে!"। চুপচাপ মানবকল্যানে ব্যবহার হয়ে এসেছে তার সেই আবিষ্কার। বরং উল্টোটা হবার সম্ভাবনাই বেশি, সে সময়ে যে পর্যায়ের রুডিমেন্টারি ধর্মব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিলো তাতে বিশ্বাসিরা হয়তো বাহাসে বসেছিলেন এটা ঠিক করতে যে এই চাকা নামের জিনিসটা ব্যবহার করা হারাম না হালাল? যে বেটা চাকা বানালো সে উলিবুলি-মাকাবাকাদের (ইহুদি-নাসারার প্রাচীন ভার্শন) দালাল কি না? খোদার উপর খোদকারি করছে কি না? এখন অবশ্য বিশ্বাসি-অবিশ্বাসি সবাই মজাসে চাকার সুবিধা ভোগ করেন। রেলগাড়িতে রাইড থেকে শুরু করে ঘূর্নায়মান হার্ডডিস্ক ভর্তি পর্নোগ্রাফি - সবই ব্যাপকহারে কনজ্যুমড হয় এখন।

আগুনের আবিষ্কারকও ধার্মিক উপাসকদের পাছায় আগুনের ছ্যাকা দিতে দিতে প্রাগৈতিহাসিক নীলনদে নিয়ে ফেলেননি। বলেননি, ""যাহ ব্যাটা গরীব! ধর্ম নিয়ে পরে থাকিস, তোদের জায়গা নীলনদের তলায়।" বরং তার হাতে আগুন দেখে হয়তো গোল হয়ে জটলা করে ফিসফাস শুরু করেছিলো অপরপক্ষ। এতদিন প্রকৃতির হাতে হাতে থাকা আগুন নামের এই জিনিসটা মানুষের হাতে যে এনেছে সে মানুষ না শয়তান, তাকে মাথায় তুলবে না কল্লা ফেলে দেবে তা নিয়ে একটুও খিটিমিটি হয় নাই, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তবে সেই আগুনের সুবিধা কারা বেশি ভোগ করেছে তা কিন্তু সবাই জানে। বললে পাপ হবে। আর আবিষ্কারক শ্রেনীটা ভোগে গা না ভাসিয়ে আগুনকে কিভাবে আরো বেশি ব্যবহার করা যায়, কিভাবে মানুষের জীবনকে আরো সহজ করা যায় সেসব ভেবেই পার করেছেন জীবন। নিজেদের ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে, হ্যা।

এই সেদিনও এবং আজও আকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো নিয়ে, চাদে মানুষের যাওয়া নিয়ে, রক্তদান নিয়ে, অর্গান ডোনেশন নিয়ে, টেলিভিশন নিয়ে, ছবি তোলা বা ছবি আকা নিয়ে, শার্ট-প্যান্ট পড়া নিয়ে, বাচ্চাদের টিকা দেয়া নিয়ে, সাবান ব্যাবহার করা নিয়ে কম তোলপাড় হয় নি। প্রত্যেকটা জিনিসের সূচনা বা আবিষ্কার একেকটা বিশাল ত্যাগের ইতিহাস। কিন্তু ধার্মিকদের প্রত্যেকটা রিয়েকশন ছিলো খুব সহজ এবং স্বার্থপর যুক্তিহীন রিফ্লেক্স। বিজ্ঞানের কাজটা কঠিন, বিশাল ডায়নামিক প্রোসেস। ধর্মের কাজটা সবচেয়ে সোজা। কিছু টেক্সট ডেভেলপ করে সেটাকে অনন্তকাল গড়িয়ে নিয়ে গেলেই হলো।

করোনা শুরুর প্রথম প্রহর থেকেই বিজ্ঞান চুপচাপ দরজা আটকে কাজে লেগে গেছে। পরীক্ষার আগের রাতে পড়ুয়া ভাল ছাত্রটি যেমন করে, সেরকম। আর উল্টোপথের যাত্রীরা কি করেছে এবং করছে তা তো আজ ইতিহাস! করোনা কেন হয়েছে, কার পাপের শ্বাস্তি, কাদের হবে না এবং কেন হবে না, কি খেলে হবে না বা কাদের হলে কোন কিতাব মিথ্যা হয়ে যাবে, কোন প্রানীর দেহনিঃসৃত কটুগন্ধের তরল কত ফোটা খেলে করোনা ছটফট করে মরে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকবে এসব বেদবাক্য অনর্গল প্রসব করে গেছে। সেই বাজে ছাত্রটির মতই, যে ভাল ছাত্রটির খাতা দেখে লিখে দেবে বলে পড়ার প্রয়োজন নাই! কিংবা পাশ-ফেলে কিছু আসে যায় না। কিংবা চোথা রেডি করা আছে! এই ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি কোনটা হবে। অজুহাত রেডি করা আছে, ভাল ছাত্রটি পাশ করা মাত্রই খারাপ ছাত্রটি বলে দেবে "আমার চোথা দেখেই পাশ করছে। আমার চোথাতে বিয়াল্লিশ হাজার বছর আগেই করোনার চিকিৎসা লেখা ছিলো"।

বিজ্ঞান কোন সময়ই আগ বাড়িয়ে আক্রমন করে নি। গ্যালিলিও বলতে যান নি "এই ছোটলোকের বাচ্চারা, তোদের ধর্ম ভুয়া কারন আমি ধরতে পেরেছি সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে না। আয় এবার তওবা করে আলোর পথে, নইলে কল্লা নেবো!" ইউনিভার্স সাক্ষী, ঠিক উল্টোটাই ঘটেছিলো। সিম্পল সায়েন্টিফিক অবজারভেশন উপস্থাপন করায় গ্যালিলিওর কল্লা চেয়েছিলো চার্চ।

ধর্ম পালনে বিজ্ঞান কখনোও, কখনোই বাধা দেয় নি, বিজ্ঞানের কল্যানে ধর্ম প্রচার বরং সহজ হয়েছে। আজ তাই ফেসবুকে ঢোকার আগেই গোটা দশেক ওয়াজ, দুই হালি "আলহামদুলিল্লাহ ইফতার ডান" এবং নারীর বেহেশত লাভের উপায় হিসেবে স্বামীর পায়ে মাথা ঠোকার পেছনে কিছু গভীর কার্যকারন চোখে পরে। উল্টোটা ঘটেছে ধর্মের বেলায়। বিজ্ঞানকে সাহায্যের "স" ও করে নি, উলটো পদে পদে বাধা দিয়েছে ধার্মিকশ্রেনী। একচুয়ালি শুধু বিজ্ঞান নয়, প্রত্যেক ফ্রেশ এন্ড নিউ পারস্পেক্টিভকে তথাকথিত ধার্মিকরা তথাকথিত ধর্মের নামে টর্চার করেছে চিরদিনই। একে পছন্দ না? দাও ব্লাসফেমিতে ফেলে। অমুক রাষ্ট্রব্যবস্থা পছন্দ নয়? দাও নাস্তিকতার নাম। অমুক শিক্ষাব্যবস্থা পছন্দ নয়া? দাও বিধর্মী খেতাব। অমুক সরকার বা দল পছন্দ না? ধর্মদ্রোহী খেতাব দিয়ে অপপ্রচার চালাও। বাজারে ছেড়ে দাও অমুকের বাপ হিন্দু ছিল, অমুকের ছেলে খ্রিস্টান বিয়ে করেছে সেটা নিয়েও চালাও নোংরামি।

তবে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করো বিজ্ঞানের। যেটার অবদান ছাড়া, যাদের প্রানপন চেষ্টা ছাড়া পিপড়ার মত, পথের কুকুরের মত, কিংবা রোদের নিচে ব্যাকটেরিয়ার মত লাখে লাখে কোটিতে কোটিতে মারা যেতি, তারই কল্লা ফেলে দাও পারলে। কলেরায় চতুর্দিক ভাসিয়ে হেগেমুতে একাকার করে মরা থেকে কেউ বাচালে তাকেই ইহুদি-নাসারা বলে গালি দাও। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কেউ এগুলে "ইহুদির ভ্যাকসিন আমরা নেবো না, কোন দ্বীনি বিজ্ঞানী আবিষ্কার করলেই শুধু আমরা সেই ভ্যাকসিন নেবো" বা "ভ্যাকসিন দিয়ে ওরা আমাদের ঈমান নষ্ট করে" বলে ঘেউ ঘেউ কর। জন্মনিয়ন্ত্রন নিয়ে কুতসিত কথাবার্তা বল, যদিও সবাই জানে তোমাদের পটাপট ডিম ফুটিয়ে সংখ্যাবৃদ্ধি করতে চাওয়ার একমাত্র কারন হলো "অতশত কোটি" সংখ্যাটার বড়াই করতে পারা।

সবাই এ ও জানে যে এই "অতশত কোটি" অপদার্থ জোম্বির যেটুকু দাম এক মাদার তেরেসা বা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল বা আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর দাম তার অপরিমেয় গুন বেশি। কারন ওই অতশত কোটি মিলে সারাজীবন ধরে কমোডে চাপ ফেলেও একটা জ্বরের বড়ি বা একটা সেফটিপিনও প্রসব করতে পারে না, পারে শুধু অন্য কেউ সেই বড়িটা বানিয়ে ফেললে "অমুক জায়গায় অত হাজার বছর আগেই লেখা আছে" বলে ছ্যাচ্চরগিরির চুড়ান্ত সীমাও ছাড়িয়ে বেহায়ার মত বয়ান দিতে। পারে মেয়েমানুষের পথ আটকাতে, পারে বিধবাকে সহমরনে দিতে, পারে জাত-পাত-ছোয়া যাবে না-শোয়া যাবে না বলে নিজেদের অপদার্থতাকে এক্সক্লুসিভিটি দিয়ে মনে মনে পাগলের সুখ পেতে। রকেট বানাতে, চালাতে, বুঝতে, চিনতে, কিনতে বা স্বপ্নেও চড়তে পারে না। তবে কেউ রকেট উড়িয়ে চন্দ্রবিজয় করে ফিরলে চাদে গায়েবী আওয়াজ বা ফজিলতের ফাইজলামি বয়ান দিতে পারে। অথবা রকেট বা চন্দ্রাভিযান বলে কিছু নাই, সব বিজ্ঞানের সৃষ্টি বলে সবজান্তা সাজতে পারে। এই জ্ঞানহীন, বুদ্ধিহীন, দৃষ্টিহীন, বিবেকহীন, চোখের পর্দাহীন, যোগ্যতাহীন, গতর খাটানোরও ক্ষমতাহীন অপদার্থ গোষ্ঠী কার সৃষ্টি? বিজ্ঞানের?

বিজ্ঞানের প্রতিটা আবিষ্কারের পেছনেই হালি হালি বা ডজন ডজন দেশ, টিম, অর্গানাইজেশন প্রানপন চেষ্টা করে যায়। কোটি কোটি ডলার খরচ করে, জীবনের অর্ধেক বা পুরোটা নষ্ট করে অনেকে। কিন্তু শেষে সফল হয় একজনই! বাকিরা এত বড় লসের শিকার হলেও দু-একটা কমপিটিটিভ একাডেমিক রাইভালরি বাদে কোন বিজ্ঞানীকে তো দেখি না, অন্যরা কিছু আবিষ্কার করলে "ওমুকখানে আমি আগেই লিখে রাখছিলাম" বা "সব আমাদের গবেষনা থেকেই নকল করেছে" বলে বেহায়াপনা করতে? অপর "সর্বোত্তম" গোষ্ঠীটা তাহলে কোন লসের শিকার না হয়ে, কোন চেষ্টা, শ্রম, বিনিয়োগ, প্রানপাত না করেই কেন চিরদিন এই বেহায়াপনাটা করে আসছে? কি প্রমান হয়, কোন গ্রুপটা সভ্য? কে সত্যবাদী? কে ত্যাগী, নিঃস্বার্থ? আর কে অকর্মন্য মিথ্যুক?

ওরা আর্ট চেনে না, সংগীত বোঝে না। ওরা মৃতপ্রায় মানুষকে গোবর খাওয়াবে বা বোতলে ভরে মূত্র বিপনন করবে। ওরা দেবমুর্তির আদলে জোর করে নিউরোসার্জারি বের করবে। দশ হাজার বছর আগের সেই নিউরোসার্জন কেন মানবকল্যানে এগিয়ে আসলেন না, কেন শত শত শিষ্য তৈরী করে গেলেন না, বরং কেন এত জ্ঞান আর এক্সপার্টিজ মুখে পুরে নিয়েই গোপনে অক্কা পেলেন, সে প্রশ্ন করার মানসিক জোরটুকু কাদের নেই?

ওরা এক কোপে বোবা প্রানীর ধর বিচ্ছিন্ন করে ফেলাটাকে অর্ঘ্য বলে, ওরা ফুটফুটে শিশুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে জনহীন প্রান্তরে নিয়ে গলায় পোচ দেয়াকে স্রষ্টার মহত্ব বলে প্রচার করে কারন ওরা আসলে স্রষ্টাকে চেনেই নাই। আর সবশেষে এই ওরাই নিজেরা নিজেদেরকে মহানুভবতার ধারক-বাহক বলে ঘোষনা দেয়, সেই ঘোষনা শুনে নিজেরাই নিজেদের পিঠ চাপড়ে দেয়। ওদিকে বিজ্ঞান স্রষ্টার সৃষ্টির কল্যানে কাজ করে যায়, দশগুন কম জমিতে বিশগুন বেশি ফসল ফলিয়ে, কৃষি ফলন বাড়ায়, পটাপট ডিম ফুটিয়ে আকাশ-বাতাস সয়লাব করে ফেলা "অতশত কোটি" অপদার্থের মুখে খাবার জোটায় অভাবনীয় দক্ষতার সাথে। কুটিল মিথ্যুকগুলোর বমির উদগীরন সামাল দিতে পলিথিনও বিজ্ঞানের এনে দিতে হয়। মুখ পুছে কুটিল মিথ্যুকগুলো আবার বলে, "সব আমাদের ওইখানেই লেখা ছিলো। নকল করছে!"

প্রতিবন্ধী সন্তানকেও মা যেভাবে যত্ন করে রাখে, ফেলতে পারে না, সেভাবে এই স্বেচ্ছা-প্রতিবন্ধী মিথ্যুকদেরও সেভাবেই রেখেছে জ্ঞানচর্চাকারীরা। যে ফেসবুক বানায়, সে ই ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি গালি খায় না বানাতে পারা কুটিলদের কাছে। যে ভ্যাকসিন বানাতে সর্বস্ব খরচের ঘোষনা দেয়, তাকেই শুনতে হয় বিধর্মী বা আরো বেশি ঘৃনায় ভরা শব্দগুলো। যেদিন প্রথম মাইক বানালো কেউ, সেদিন হারামিদের কাছে মাইক ছিলো হারাম। মাইকে আজানও দেয়া ছিলো অপরাধ। যখন দেখা গেলো মাইকে তো কুতসিত বয়ানও দেয়া যায়, উস্কানি, ভিন্নধর্মকে বা নারীকে নিয়ে উৎকট ঘোতঘোত করা যায় আরো জোরেসোরে, তখন মাইক হয়ে গেলো বিজ্ঞানকে শাসানোর আরেক হাতিয়ার! বাপের কিনে দেয়া গিটার দিয়ে পিটিয়ে বাপেরই মাথা ফাটানো আরকি!

স্ট্রোক করে মরতে বসা পুরুত হেলিকপ্টারে উড়ে হায়েস্ট রেফারাল সেন্টারে গিয়ে সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক এচিভমেন্টের পুর্ন সদ্ব্যবহার করে। সুস্থ হয়ে এসে আবার বিজ্ঞানকে কোপানোর পুরানো পেশাতেই ফিরে যায়। বিজ্ঞান নামের গাভীটির বাট থেকে সবচেয়ে বেশি দুধ দুইয়ে নিয়ে গেছে এই চোরগুলোই। অন্যরা ঘাস দেয়, দুধের ভাগ তাদের পাওনা। কিন্তু এই চির-বদস্য-বদ শ্রেনীটা ঘাস দেয়া দূরে থাক, সুযোগ পেলেই গাভীটিকে পেটায়, ওদের বাপও এদের বাপকে পেটাতো, তার বাপও...তার বাপও....এবং দিন শেষে এই গাভীর দুধই তাদের বাচিয়ে রাখে।

স্রষ্টার ধারনা এবং প্রথাগত ধর্মের ধারনা সম্পুর্ন ভিন্ন দুটো জিনিস। যতদিন এই বেহায়া অপদার্থ অযোগ্য বদস্য বদের দল তার ধারনার ঠিকাদারি দখল করে রেখেছে ততদিন স্রষ্টা মুখ ফিরিয়ে আছেন এবং থাকবেন। স্রষ্টা কোন রাজনৈতিক দলের তেলপ্রিয় বুড়ো নেতা নন, যে তার সামনে উবু হয়ে পড়ে থাকলে তিনি খুশি হয়ে ভাইভা বোর্ডে আগে থেকে আউট করা তিনটা সোজা প্রশ্ন করেই স্বর্গের বাগানে মালির চাকরি দিয়ে দেবেন। যাদের মনে স্রষ্টার অসীমতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারনা নেই তারাই কেবল হাস্যকর এসব স্বপ্ন দেখতে পারে। প্রচলিত বিশ্বাসের এসব অসারতা কখনো প্রযুক্তিবিজ্ঞানের এচিভমেন্টের দ্বারা, কখনো যুক্তিবিজ্ঞানের যথার্থতা দ্বারা, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্রষ্টার তৈরী মস্তিষ্ক নামের অসাধারন জিনিসটার সবচেয়ে ছোট প্রয়োগ- কমনসেন্স দ্বারা প্রভাসিত হয়। তখনই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে স্রষ্টার ধারনা পেতে ব্যর্থ হওয়া ধর্মের ধ্বজাধারীরা।

বকধার্মিকেরা বিজ্ঞানকে ডিজওউন করে, টর্চার করে, হারাম বানায়, বিজ্ঞানের কল্লা নেয়, বিজ্ঞানের ক্রেডিট ছিনতাই করে, বিজ্ঞানের খেয়ে পড়ে বিজ্ঞানকেই সড়কি-বল্লম নিয়ে তাড়া করে। বিজ্ঞান কখনো ধার্মিকের কল্লা নিতে যায় না। হুজুর-পুরুত-বিজ্ঞানী বিচার না করে ভ্যাকসিন সবাইকে রক্ষা করে, মরফিন সবার ব্যাথা কমায়। গাইনোকলজিস্ট ইমামের বা বড়ুয়ার বাচ্চাকেও প্রথম কোলে নিয়ে পৃথিবী দেখায়, থিওরেটিক্যাল ফিজিসিস্টের বাচ্চাকেও। কৃষিপ্রযুক্তিবিদের অবদান দুর্ভিক্ষ ঠেকায়, সমান ক্ষুধা মেটায় আয়েশার, সাবিত্রীর, বা রোজমেরীর। বিজ্ঞান বিভেদ করে না। বিভেদ ব্যবসায়ীদের কাছে যুগে যুগে তাড়া খাওয়া বিজ্ঞান একবার পিছে ফিরে একটু ম্যাও করতেই যারা হাপুস হুপুস করে বিজ্ঞানের নামে এই এত্তগুলো নালিশ দিচ্ছেন, হাজার বছর ধরে আপনারা যে আচরন করেছেন তা বিজ্ঞান আপনাদের সাথে করলে এতদিনে পৃথিবীটা বাসযোগ্য থাকতো কিছুটা হলেও!

"বিজ্ঞান প্রভুকে ডেকেছে অন্তহীন" ছবিগুলো যে বানিয়েছে সে ও জানে এই ছবিটা বানাতে তার বিজ্ঞান লেগেছে। ক্যামেরা, ডিজিটাল ইমেজ, ইন্টারনেট, ডেটা এবং ডেটা ট্রান্সফারিং, এডিটিং টুল, সবশেষে ফেসবুক - এর সবই লেগেছে! কাজেই রং নম্বরিদের পক্ষটাই প্রভুর পক্ষ নয়। প্রভু তথা তৃতীয় পক্ষের বক্তব্যটা অবশ্যই গুরুত্বপুর্ন। প্রভুর কথা রং নম্বরি এজেন্টরা জানবে না, তবে প্রভু কি বলে থাকতে পারেন তা আন্দাজ করা যায়।

"তোদের ভাগ্য তোদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছি, রে অর্বাচীন! দেখিনু আমার সেনানীরা সব প্রানপনে লড়ছে অন্তহীন।"

ওদিকে কিছু মোল্লা-পুরুত গু-মুত খাইয়া প্রলাপ বকছে রাত্রিদিন!

বিজ্ঞান একাই লড়ে, বিজ্ঞানের একাই লড়তে হয়।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা