আগে থেকেই সামাজিক বিভিন্ন কাজকর্মের সাথে যুক্ত এ দম্পতি। তবে এবারে যা করলেন তারা, সেটি চমকে দিয়েছে প্রায় সবাইকেই!

প্রথমবারের মতন আমি যখন কক্সবাজার যাই, আমি বিরক্ত হয়েছিলাম। মুখে আমরা বলছি, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, আমাদের গর্ব... হ্যানত্যান অনেক কিছু। কিন্তু আমাদের এই পর্যটন স্পট টা সংরক্ষণের জন্যে প্রশাসনের কোনো হেলদোল আমি দেখিনি। এই সেদিন পর্যন্তও বীচে ছিনতাই ছিলো খুবই সাধারণ ঘটনা। তাছাড়া থাকার জায়গা থেকে শুরু করে প্রাতঃকর্ম করার জায়গা, সবখানে দাম যেন সবসময়েই আকাশে গিয়ে ঠেকানো। এ তো গেলো প্রশাসন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথা। যারা ভ্রমণ করতে গিয়েছেন সেখানে, তাদের অধিকাংশেরই মস্তিষ্কে এক ছটাক ঘিলুও আছে কী না, আমার জানা নেই। চিপস-আইসক্রিম-বাদামের খোসা কোন বিবেচনায় মানুষ সমুদ্রে ফেলতে পারে, বা সমুদ্রের তীরে ফেলতে পারে আমার জানা নেই।

এইসব কারণেই এ বছরের মে মাসের দিকেই হলো এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। সমুদ্র থেকে ভেসে এলো ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। সমুদ্র তীরের ১০-১২ মাইল জায়গা ভরে গিয়েছিলো তখন বর্জ্যের স্তুপে। ভাবতে পারেন? দশ-বারো মাইল জায়গা জুড়ে শুধু ময়লা আর ময়লা? বিদেশের একটা মানুষের কাছে কোন মুখে আমরা বলি, কক্সবাজার আমাদের দর্শনীয় একটা জায়গা? লজ্জাও লাগেনা একটুও?

এখানে যারা ঘুরতে আসেন, তাদের দায়িত্বকর্তব্য নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। দায়িত্বকর্তব্য তো সোজা। সমুদ্রকে নোংরা করা যাবেনা। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায়। স্ট্রেইট এন্ড সিম্পল। তবে শুধু এটুকুতেই থেমে থাকলেই হয় না আসলে। নিজ উদ্যোগে সমুদ্রতীরের কিছু অংশ পরিস্কার করে আসা যেতেই পারে। ক্ষতি তো নেই। কক্সবাজার তো আমাদেরই।  সম্প্রতি এরকমই এক কাজ  লক্ষ্য করি কক্সবাজারে হানিমুন করতে আসা এক দম্পতির ক্ষেত্রে। তারেক ও মিলি... এই দুইজন বিয়ের পরপর একটা টার্গেট নিয়ে হানিমুনে যান কক্সবাজারে। সেখানে তারা চারদিন থাকেন। এবং এই চারদিনের প্রত্যেক দিনেই ময়লা পরিস্কার করেছেন তারা। সবমিলিয়ে প্রায় চার-পাঁচ বস্তা ময়লা তারা পরিস্কার করেছেন। নিজেদের মত করে সমুদ্রতটকে সুন্দর করার কাজটা করে গিয়েছেন। এবং মজার বিষয় হলো, এ কাজটি তারা করেছেন বিয়ের পোশাকেই। যাতে করে বিষয়টা একটু অন্যরকম হয় এবং মানুষ যাতে আগ্রহীও হয়।

'Clean World, Green World' নামের প্ল্যাকার্ড হাতে ছবিও তুলেছেন তারা। মানুষও আগ্রহী হয়েছে তাদের এ কাজ দেখে। মূলত এই দম্পতি জনসচেতনতাই বাড়াতে চেয়েছিলেন। সেজন্যেই তাদের এ কাজ। তবে এরকম কাজ তাদের এটাই প্রথম না। তারা দুজনে আগে থেকেই বিভিন্ন রকম সমাজকল্যানমূলক কাজের সাথে যুক্ত।  লকডাউনের মধ্যে দুস্থদের খাবার খাওয়ানোর মত মানবিক কাজগুলোও তারা করেছেন।

এইরকম ঘটনাগুলি আমাদের শেয়ার করা উচিত। মানুষকে জানানো উচিত। যত বেশি মানুষ এগুলো জানবে, কাজ করা মানুষগুলো তত বেশি  উৎসাহ পাবে। হয়তো আরো দুয়েকজন মানুষও এভাবে ভালো কাজে আসবেন। প্রতিদিন গণ্ডাখানেক খারাপ খবরের ভীড়ে, এই সংবাদগুলো নিখাদ মন ভালো করার।

নবদম্পতির জন্যে শুভকামনা। এরকম ভালো মানুষে ভরে উঠুক এ দেশ। এরকম অল্প কিছু মানুষ নিয়মিত ভালো কাজগুলোতে অংশগ্রহণ করলেই দেশ গতিশীল, সুন্দর, নিরাপদ হতে বাধ্য। এবং আমাদের সেটাই প্রত্যাশা।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা